Entertainment

করোনার জ্বালা, কৃষকের ক্ষত ছোট ছবির গল্পে

‘কোভিড অ্যান্ড হু আই অ্যাম নাও’ নামের মিনিট পনেরোর একটি তথ্যচিত্রধর্মী ছবি আমাদের দেশেও দগদগে বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড় করায়।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ০২:২২
Share:

করোনা-কাহিনি: ইরান ও পাকিস্তানের দু’টি ছবির দৃশ্য।

দিল্লি বা কলকাতার সঙ্গেও হুবহু মিলে যেতে পারে টরন্টোর সেই চিনা তরুণীর অভিজ্ঞতা। আজন্ম কানাডাবাসী। নিজের চিনা পরিচয়টুকু সুদূর অতীত বলেই যিনি ধরে নিয়েছিলেন। এ দুনিয়ার জাতিবিদ্বেষের আখ্যানগুলো তাঁর জন্য নয় ধরে নিয়েই জীবন কাটছিল নিশ্চিন্তে। করোনার ধাক্কা সেই মেয়ের জীবনদর্শন রাতারাতি পাল্টে দিল।

Advertisement

‘কোভিড অ্যান্ড হু আই অ্যাম নাও’ নামের মিনিট পনেরোর একটি তথ্যচিত্রধর্মী ছবি আমাদের দেশেও দগদগে বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড় করায়। এই তো সে দিন বৌবাজারের বাসিন্দা, ঝরঝরে বাংলায় সড়গড় তরুণ ফ্রান্সিস ই লেপচার সঙ্গেই এমনটা ঘটেছিল। এর পরে সাদা টি-শার্টের বুকে নিখাদ বাংলায় ভারতীয় চিনা ফ্রান্সিস ঘোষণা করেন, ‘আমি করোনাভাইরাস নই, আমি কখনও চিনে যাইনি’! কানাডার পটভূমিতে চিনা তরুণীকেও সান্ধ্য রাজপথে তাঁর দ্বিগুণ বয়সের শ্বেতাঙ্গ পুরুষের আক্রোশের মুখে পড়তে হয়। এই কাহিনি ও তার অভিঘাত নিয়ে ডায়না ডেইয়ের ‘ডকু-ফিকশন’, আজকের অবিশ্বাস ও সন্দেহের পৃথিবীকেই মেলে ধরছে। করোনাকাল নিয়ে এমন নানা রঙের অভিজ্ঞতার দলিল কলকাতার সামনে এ বার উঠে আসছে একটি আন্তর্জাতিক ‘শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর মাধ্যমে। ভারত, পাকিস্তান, কানাডা, ফ্রান্স, ইটালি, ব্রাজ়িল-সহ বিভিন্ন দেশের শতাধিক ছবি দেখা যাবে কাল, সোমবার, ১৮ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। তবে এ যাত্রায় ছবি দেখাটাও এ যুগের নব্য স্বাভাবিকতা বা ‘নিউ নর্ম্যাল’-এরই শর্ত মেনে। এখানে ছবি দেখার জন্য কোনও ঠেলাঠেলি, মারামারি নেই। ইভেন্টাইজ়ার বলে একটি পোর্টাল (www.eventizer.co.in) থেকে টিকিট বুক করে পছন্দসই ছবি দেখার সুযোগ মিলবে।

করোনার সৌজন্যে ২০২০ আমাদের জীবনে বেশ কয়েকটি শব্দকে অমোঘ ভাবে বয়ে এনেছে। কোয়রান্টিন, মাস্ক, লকডাউন— সব কিছুরই ছায়া পড়েছে উৎসবের ছবির গুচ্ছে। ইটালির ২৬ বছর বয়সি তরুণ জিয়োভান্নি বেরারদির ‘আইসোলেস্ক’ মিনিট দুয়েকেই অতিমারি দিনের একাকিত্বের যন্ত্রণা, একঘেয়েমি ও মনের উপরে তার প্রভাবের ছবিটা ফুটিয়ে তোলে। এক তরুণীর বাঁধাধরা রুটিনের ছিটেফোঁটা ছন্দপতনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পর্দায় ফুটে ওঠে অবচেতনের ঝড়ও। আবার পঞ্জাবের নাভায় সাফাইকর্মীদের কুর্নিশ জানিয়ে শহরবাসীর আবেগ অ্যানিমেশনে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ‘দ্য সেভিয়ার’ বলে ছবিটির পরিচালক অর্জুন মুখোপাধ্যায়। সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের অ্যানিমেশন পড়ুয়া, নৈহাটির শোভন দত্তের ছবি আঁকার চর্চা ও বোধ রসদ জুগিয়েছে সিনেমার আঙ্গিকে। দু’টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি ‘নতুন ফসল’ ও ‘সুতো’। সুতোয় দু’টি ঘুড়ির লড়াইয়ে রূপকের আদলে সভ্যতার বৃহত্তর সংঘাতকেই ধরার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু ধানের ছড়ার নানা রকমের ছবি ব্যবহার করে কৃষক জীবনের টানাপড়েন ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে ‘নতুন ফসল’। কৃষকদের দাবিতে উত্তাল আজকের ভারতের সঙ্গে কোথায় মিলে যায় সেই ছোট্ট ছবি।

Advertisement

শর্ট ফিল্মের এই উৎসবে বিশেষ আকর্ষণ, পড়শি পাকিস্তানের একটি ছবি ‘এলো’! বিনা সংলাপে এক নিষ্পাপ তরুণের জীবনযুদ্ধের গল্প। না, সেই ছবিতে মাস্কের ছড়াছড়ি নেই। কিন্তু চাকরি পাওয়ার আকুতি, খড়কুটোর মতো পরীক্ষার ডিগ্রির কাগজ আঁকড়ে থাকা, খিদের চোটে বা টেনশনে নানা ভুল করে বসার গল্পে করাচির নতুন পরিচালক সৈয়দ ওয়াজাহাত আলির ছবি জুড়ে গভীর মমতার ছোঁয়া। ইরানের আব্বাস গাজ়ালির ‘স্মাইল অব দ্য মাস্ক’ আবার মুখাবরণকে অন্য ভাবে দেখতে শেখায়। জনৈক অ্যাসিড-পোড়া মেয়ের জন্য হাসি-আঁকা সেই মাস্কের মোড়কেই নিজের ইচ্ছে মতো হাসতে পারে মেয়েটি। সত্যিই করোনাকালের মাস্ক তো কত জনের কাছে এক ধরনের বর্মও বটে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন