Entertainment News

পদ্মাবত নিয়ে বিপরীত মেরুতে করণী সেনার দুই গোষ্ঠী

এ কি ভোজবাজি! নাকি করণী সেনার এই ভোলবদলে লুকিয়ে রয়েছে কোনও রহস্য?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৩:৫৪
Share:

‘পদ্মাবত’-এর একটি দৃশ্যে দীপিকা পাড়ুকোন। ছবি: ইনস্টাগ্রামের সৌজন্যে।

পদ্মাবত দেখে হঠাত্ই গর্বিত হয়ে পড়ল করণী সেনার একটি গোষ্ঠী। আর একটি অংশ অবশ্য ওই গোষ্ঠীকে ‘জাল’ করণী সেনা আখ্যা দিয়ে বলে দিল, ছবি নিয়ে আগের অবস্থান থেকে তারা বিন্দুমাত্র সরছে না।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত শনিবার সকালে। ‘শ্রী রাষ্ট্রীয় রাজপুত করণী সেনা’র তরফে লিখিত বার্তায় জানানো হয়, তাঁদের কয়েক জন সদস্য গত শুক্রবার ছবিটি দেখেছেন। ছবিটি দেখার পর তাঁদের মনে হয়েছে, ‘পদ্মাবত’ রাজপুতদের শৌর্য এবং আত্মত্যাগ বা আত্মবলিদানের গরিমাকে মহিমান্বিতই করেছে! এমনকী ছবিটি প্রচারের দায়িত্বও তাঁরা নিতে চেয়েছেন সানন্দে!

কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আসরে পাল্টা নেমে পড়ে ‘শ্রী রাজপুত করণী সেনা’ নামে আর একটি গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীর প্রধান লোকেন্দ্র সিংহ কালভি জানিয়ে দেন, তাঁরা সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর এই ছবির বিরোধিতা বজায় রাখছেন। ‘ভুয়ো করণী সেনা’ কিছু ‘ভুয়ো খবর’ প্রচার করছে বলেও দাবি করেন তিনি।

Advertisement

আরও পড়ুন, মুভি রিভিউ: আরও একটা ‘বিগ বাজেট’, আরও একটা ‘ম্যাগনাম ওপাস’


‘পদ্মাবত’-এর একটি দৃশ্যে শাহিদ কপূর।

২০১৬ সালে পদ্মাবতের (তখন ঠিক ছিল নাম হবে পদ্মাবতী) শুটিং শুরু হওয়ার পর থেকেই, উগ্র রাজপুত আবেগের রাজনীতি নিয়ে খেলতে শুরু করে দিয়েছিল করণী সেনা। করণী সেনার এখন তিনটে প্রধান গোষ্ঠী রয়েছে। ‘শ্রী রাজপুত করণী সেনা’, ‘শ্রী রাষ্ট্রীয় রাজপুত করণী সেনা’ এবং ‘শ্রী রাষ্ট্রীয় রাজপুত করণী সেনা সমিতি’। রাজস্থানেই এদের মূল ভিত্তি। ‘পদ্মাবত’-এর আগে ‘জোধা আকবর’ ছবি নিয়েও তুমুল সোরগোল তুলেছিল এরা। তবে এ বারের উন্মত্ততা ছিল অনেক বেশি।
ছবির পরিচালককে থাপ্পড় মারা, সেটে ভাঙচুর ইত্যাদি-ইত্যাদি দিয়ে শুরু হয়েছিল এদের ‘পদ্মাবতী’ বিরোধিতা। তার পর কেউ রণবীরের ঠ্যাং ভাঙার হুমকি দিয়েছেন, কেউ ভন্সালীর মাথা কেটে আনলে পুরস্কার ঘোষণা করেছেন, কেউ বা দীপিকার নাক কাটার কথা বলেছেন। আর নাম বদলে ‘পদ্মাবত’ হয়ে সেই ছবি মুক্তির সময়, বিরোধিতা রূপ নিল আরও হিংস্র তাণ্ডবে। আশ্চর্যের বিষয়টা হল, দেশের চার-চারটে রাজ্যের সরকার এই ইস্যুতে তাণ্ডবকারীদের নৈতিক এমনকী প্রশাসনিক সমর্থন পর্যন্ত দিয়ে বসল। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত এবং হরিয়ানা সরকার ‘নিষিদ্ধ ঘোষণা’ করল পদ্মাবতকে। সুপ্রিম কোর্টে এই নিষেধাজ্ঞা বেআইনি সাব্যস্ত হওয়ার পরও, ওই চার রাজ্যে কিন্তু মুক্তি পায়নি ছবিটি। কার এত হিম্মত যে সরকার, ক্ষমতাসীন দল এবং করণী সেনাদের মতো প্রতাপশালীদের বিরাগভাজন হবেন!
এ পর্যন্ত সব এক ভাবেই চলছিল। হঠাত্ এই রাজপুত ‘সৈনিক’দের একাংশের মত এবং ভোল বদল হল ছবি মুক্তি পাওয়ার ঠিক এক সপ্তাহের মাথায়।

আরও পড়ুন, পদ্মাবত বনাম স্বরা: পুরুষতান্ত্রিক মুখ কি বেরিয়ে আসছে বলিউডের

শনিবার ‘শ্রী রাষ্ট্রীয় রাজপুত করণী সেনা’র মুম্বই শাখার নেতা যোগেন্দ্র সিংহ কাটার জানিয়েছেন, আগের দিন অর্থাত্ শুক্রবার মুম্বইয়ে তাঁদের কয়েকজন সদস্য ছবিটি দেখেছেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সংগঠনের জাতীয় সম্পাদক সুখদেব সিংহ গোগামেড়ি। ছবিটি দেখার পর তাঁদের মনে হয়েছে, ‘পদ্মাবত’ রাজপুত ঐতিহ্যকে উজ্জ্বল আলোতেই দেখিয়েছে। তুলে ধরেছে রাজপুতদের আত্মত্যাগকে। প্রত্যেক রাজপুত নাকি ছবিটি দেখে গর্বও অনুভব করবেন। এমনকী তাঁদের মতে, দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি এবং রানি পদ্মিণীর মধ্যেও এমন কোনও আপত্তিকর দৃশ্য নেই, যেটা রাজপুতদের ভাবাবেগে আঘাত করবে! যোগেন্দ্র লিখিত বার্তায় জানিয়েছেন, তাঁরা প্রতিবাদের অবস্থান থেকে সরে আসছেন। এমনকী রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং গুজরাতে যাতে ছবিটি মুক্তি পেতে পারে, সে জন্য প্রশাসনকে অনুরোধও করবেন তাঁরা।
এর পরই করণী সেনার ভোলবদল নিয়ে আলোচনা শুরু হয় বিভিন্ন মহলে। ‘শ্রী রাজপুত করণী সেনা’র প্রধান কালভি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘ভারতে করণী সেনার অনেক ভুয়ো সংগঠন রয়েছে। প্রায় আটটা ভুয়ো সংগঠনের খবর জানি। তারাই এ সব ভুয়ো খবর প্রচার করেছে।’’
কালভি আরও জানিয়েছেন, প্রথম দিন থেকে করণী সেনা ‘পদ্মাবত’-এর বিরোধিতা করছে। এখনও তা তাঁরা বজায় রাখবেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ২১ জন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। এ বার প্রধানমন্ত্রীর কাছেও যাব। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে আমাকে ফোনও করা হয়েছিল।’’


‘পদ্মাবত’-এর একটি দৃশ্যে রণবীর সিংহ। ছবি: ইনস্টাগ্রামের সৌজন্যে।

করণী সেনার সব গোষ্ঠীই এতদিন পদ্মাবতের বিরোধিতা করে আসছিল। সবচেয়ে বেশি সক্রিয় এবং মারমুখী ছিল কালভির গোষ্ঠীই। তবে একটি গোষ্ঠী সুর বদলে ছবি পক্ষে দাঁড়িয়ে যাওয়াটা পদ্মাবতের প্রযোজক, পরিচালকদের পক্ষে খানিকটা স্বস্তির হলেও হতে পারে।

আরও পড়ুন, ‘পদ্মাবত দেখে মনে হল, যোনিটাই যেন আমার সব’

সবটাই কি স্বস্তির? না কি অন্য আর একটা দিক থেকে ভন্সালীর পক্ষে এটা অস্বস্তিরও হয়ে গেল? পদ্মাবত দেখে খোলা চিঠিতে বেশ কিছু চাঁছাছোলা প্রশ্ন তুলেছিলেন অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর। রাজপুত ‘গরিমা’ জহরব্রত এবং সতী প্রথাকে মহিমান্বিত করেছেন পদ্মাবত পরিচালক, এই ছিল স্বরার মত। করণী সেনার উগ্র জাতপন্থী একটা অংশ এখন যে ভাবে পদ্মাবতে রাজপুত গরিমা প্রদর্শনের গুণকীর্তন শুরু করল, তা স্বরার শরকে বোধহয় আর একটু তীক্ষ্ণ করে দিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন