Rupankar Bagchi

প্রেমের দিব্যি, গান বেঁধে চলি প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্য

আর বলি প্রেমের দিব্যি, ভ্যালেন্টাইন ডে-র কসম, সোয়্যার অন সরস্বতী পুজো...এ যাত্রার কোনও শুরু নেই, নেই কোনও শেষ। বারংবার উদযাপন।

Advertisement

রূপঙ্কর বাগচী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:০০
Share:

আমার কথা...

Advertisement

অবিরত প্রেম এসে হানা দেয় আমার জীর্ণ পোড়ো বাড়ির কার্নিসে। বিস্তর কথা বলে। কথা বলে সময়ের, কথা বলে ফেলে আসা যুদ্ধের, কথা বলে গৌরবের, কথা বলে ব্যর্থতার। আমি ভিজিল্যান্স জারি রাখি আমার চারপাশে। যেন কোনও মতেই দিকভ্রষ্ট না হয়ে পড়ি। যতই হোক ভেতো বাঙালি তো? কখন মন পিছলে যায়? আর গেলে কিন্তু সব গেল! তাই নিঃস্ব হওয়ার ভয়ে দিনযাপন করে চলি। পৃথিবীর আর সমস্ত প্রেমিক প্রেমিকার জন্য গান বেঁধে চলি। আর বলি প্রেমের দিব্যি, ভ্যালেন্টাইন ডে-র কসম, সোয়্যার অন সরস্বতী পুজো...এ যাত্রার কোনও শুরু নেই, নেই কোনও শেষ। বারংবার উদযাপন।

আমার বাবা আমার মাকে খুবই ভালবাসতেন, মা-ও তাই। সেটাই হওয়ার কথা। ভালবাসা মানে ঘুম থেকে একসঙ্গে ওঠা,বাজার যাওয়া, বাবার স্কুলে চলে যাওয়া (যেহেতু শিক্ষকতা করেছেন সারাজীবন), মার বই পড়া, তার পর ঠিক দুপুরবেলা মারও বেরিয়ে পড়া (যেহেতু গানের টিউশনি করতেন), বাবার ফিরে আসা, আবার বেরিয়ে পড়া (যেহেতু পড়াতেন থুড়ি টিউশনি করতেন), রাতে একসঙ্গে রুটি-তরকারি খাওয়া তার পর এ মাসের কোন তারিখে সব টাকা শেষ হয়ে যাবে, বাবা তার কোন বন্ধুর কাছ থেকে একটু টাকা ধার চাইবে, রোজ রোজ পোনা মাছ খেতে মার ভাল লাগেনা। বাবাকে তার বন্ধুরা বলতেন, বাবা রাজ কপূরের মতো দেখতে আর তালাত মামুদের মতো বাবার গানের গলা ছিল। মায়ের গানের স্কুলের এ বারের বাত্সরিক অনুষ্ঠানে কাজী নজরুলের লোকসঙ্গীত নির্ভর গানের উপর অনুষ্ঠান হবে। আগামী মাসে বড়মামীর মেয়ের বিয়েতে একটা খুব ছোট্ট হলেও কানের দুল দিতেই হবে। আর সেটা ইমিটেশনের কোনও মতেই নয়, সোনার! এভাবেই প্রেমালাপ চলতে চলতেই শেষ হয়ে যায় একটি প্রেমদিবস। আবার আগামিকাল। আর একটি প্রেমদিবস।

Advertisement

ভালবাসা দাঁড়িয়ে থাকে...

সবিতার চোখমুখ কথা বলে। যে কোনও সময়ে সে চার্লিচ্যাপলিন, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমা মালিনী, সুচিত্রা সেন হয়ে যায়। ‌মফস্সলের একটি ছোট্টো পাড়ায় যখন বিকেল নেমে আসে, কারখানা থেকে ফিরে আসে বাবা। সিং কাকা, মাধব, শ্রীমন্ত। তখন সবিতা ওই ঝুঁকে আসা কাঁধগুলোকে, ওই প্রায় হেরে যাওয়া ক্লান্ত চোখগুলোকে আবার বাঁচিয়ে তোলে তার নানান অভিনব ক্যারিকেচারের মাধ্যমে। কোনও সময় সে হয়ে যায় বাসন্তী, তো কোনও সময় গ্রেট ডিক্টেটর, সবাই চলমান হয়ে ওঠে, হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে মা। শ্যামলী বৌদি, পাঁচির মা, বাবা স্নেহের সুরে বলে ওঠেন, পড়াশোনাটা ঠিক করে কর। এ সব করে তো আর দিন চলবে না। সবিতা বলে আমি শহরে যাব। ওখানে গিয়ে সিনেমায় নামব, সবাই আবার একপ্রস্থ হেসে ওঠে। শুধু শ্রীমন্ত ওর চোখের তীব্রতা টের পায়। আড়ালে একদিন ডেকে বলে, আমি নিয়ে যাব তোকে শহরে, সিনেমার দু’-একজন বন্ধু আছে আমার। সবিতা প্রেমে পড়ে শ্রীমন্তর। তার পর একরাতে শ্রীমন্তর বাইকে চেপে পালায় সবিতা। দু’বছর বাদে এক ভ্যালেন্টাইন’স ডে-র রাত্রে শহরের বিখ্যাত পতিতালয়ে খদ্দেরের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে সবিতা।

কফি শপে একা...

এক পেয়ালা কফি নিয়ে শহরের এক বিখ্যাত কফি শপে বসে থাকেন অ্যালবার্তো। ভ্যালেন্টাইন’স ডে-র এই দুপুরে তিনি গত চোদ্দো বছর এই আশাতেই আসেন। ঘণ্টা তিনেক থাকেন। তার পর বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ফিরে আসেন তাঁর বাড়িতে। তাঁর রোজকার লেখার টেবিলে। এখন যদিও উনি আর হাতে লেখেন না। তার লেখার টেবিলে এখন বিরাজমান অত্যাধুনিক ডেস্কটপ কম্পিউটার। তিনি টাইপ করেন। গত চোদ্দো বছরে তাঁর চৌত্রিশটি রহস্য উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে পৃথিবীর এক বিখ্যাত পাবলিশিং হাউজ থেকে। অ্যালবার্তো এক সফল রহস্য রোমাঞ্চ লেখক। তাঁর সাফল্যের চাবিকাঠি সম্পর্কে পাঠকের মতামত হল, অ্যালবার্তো যৌনতাকে ব্যবহার করেন এক পরিশীলিত মাত্রায়। তাঁর প্রত্যেকটি উপন্যাসের রহস্যের মূল সূত্র যৌনতা। অ্যালবার্তো তাঁর তৃতীয় কাপ কফি শেষ করেন। মনে মনে বলে ওঠেন, ‘আজও তুমি এলে না...’ বেশ। আবার পরের বছর, অ্যালবার্তো ফিরে যান তাঁর চোদ্দো বছর আগের এক ভ্যালেন্টাইন’স ডে-র রাতে। যে বার ফিওডোর তাঁকে শেষ চুম্বন করেছিল। ফিওডোর তখন এক উঠতি প্রতিভাবান চিত্রশিল্পী। দু’জনে লুকিয়ে দেখা করতেন ফিওডোরের স্টুডিওতে। সমকামিতা নিয়ে অ্যালবার্তোর প্রারম্ভিক মানসিক নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ফিওডোরকে দেখলে অ্যালবার্তোর সব কিছুই কেমন ওলটপালট হয়ে যেত। চোদ্দো বছর আগের সেই ভ্যালেন্টাইন রাত্রে ফিওডোর অ্যালবার্তোকে জানায় ওর এইচআইভি পজিটিভ হওয়ার কথা। জানায়, আর তাদের দেখা হবে না। ছ’বছর আগে ফিওডোরের মৃত্যু সংবাদ পান অ্যালবার্তো। এই কফিশপটা খুব প্রিয় ছিল ফিওডোরের। এখানকার ব্রাজিলিয়ান কালো কফি খেলে নাকি পৃথিবীর সপ্তম স্বর্গে পৌঁছে যাওয়া যায়, এ কথা বলত ফিওডোর। তাই ওই কফিশপে অ্যালবার্তো ভ্যালেন্টাইন’স ডে-র দুপুরে আসেন অপেক্ষা করেন এইচআইভি ভাইরাসের...

প্রেম নিছকই হরমোনের খেলা না কি ভ্যালেন্টাইন’স ডে-তে তোমার জন্য চিরকালীন অপেক্ষার সাজি নিয়ে বসে থাকা! কে জানে!

অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন