কারা বাংলা গান তৈরি করে?
প্রশ্ন: আপনার বিরুদ্ধে নালিশ আছে।
উত্তর: তাই নাকি। বেশ তো! শোনা যাক।
প্রশ্ন: আপনি শো করতে গিয়ে দর্শকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন, রেগে যাচ্ছেন...।
উত্তর: হুমম! বুঝেছি। আসলে বেশ কিছু দিন আগে একটি চ্যানেলের লাইভ শো-তে এক ভদ্রলোক ফোন করে বলেন, আগে সব বাংলা গান ভাল ছিল, এখন আর কিছু হচ্ছে না। এখন যেন সব বাজে। আমার কিছু করা উচিত। তো আমি তাঁকে বলি, বাংলা গানের সব ভার তো আর আমার ওপর নেই! আর এ রকমটাও না যে এখন সব গান বাজে! এটা বলে ওঁকে আমি বলি আপনি ইহজগতে থাকবেন না, বা আপনার মরে যাওয়া উচিত, এ রকম কিছু...হুমম! রেগে গিয়েছিলাম, তাই ও ভাবে বলি। সেটা ঠিক হয়নি। কিন্তু তার পর সেই ভিডিও রেকর্ড করে কেউ ফেসবুকে দিয়ে দেয়! ব্যাস, শুরু হয় একের পর এক অশ্রাব্য গালিগালাজ। আমার বাবা-মা-বৌ-মেয়ে, কেউ বাদ যায় না। আমি সেখানে উত্তর না দেওয়ায় রিঅ্যাকশন আরও বাড়তে থাকে। ভাবতাম কমেন্টগুলো পড়ব না। তার পর সবই পড়তাম! কী যে খারাপ লেগেছিল! মনে হত, এত বছরের গান গাওয়া, পরিশ্রম মানুষের জন্য গান তৈরি করা এক লহমায় কেমন ধূলিসাৎ হয়ে যেতে পারে!
আরও পড়ুন, দিনে ভালবাসা, রাতে নির্যাতন, ব্লগে লিখলেন অভিনেত্রী
প্রশ্ন: তারপর?
উত্তর: তারপর বেশ কিছু দিন গেল। দেখলাম, এই গালাগালি করা মানুষগুলোও আবার ‘দৃষ্টিকোণ’, ‘উমা’র গান শুনে বাহবা দিচ্ছে! আসলে আজ মনে হয়, কোনও কথা না বলাই ভাল! কথার চেয়ে বরং গানে যাই।
প্রশ্ন: কী মনে হয় সত্যি বলুন তো, বাংলা গানের জায়গাটা এখন কেমন?
উত্তর: দেখুন আমি কখনওই মানব না ভাল বাংলা গান তৈরি হচ্ছে না! ভুল! আরে কারা বাংলা গান তৈরি করে? জয় সরকার। আমি নিজে। ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত। অনুপম রায়। দেবজ্যোতি মিশ্র। প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়। এরা প্রচুর খাটে গান নিয়ে। এবং আমি তো বলব, সুধীন দাশগুপ্ত, সলিল চৌধুরীর মতোই এরা সেই উচ্চতায় কাজ করে। আমাদের বাঙালিদের মধ্যে এই স্বভাব আছে, সলিল চৌধুরী! ওরে বাবা! বিরাট! এর পর কেউ আসতেই পারে না।’ তা কেন হবে? আমরা সবাই চেষ্টা করছি! পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধা নিয়েই বলছি, উনি যে শব্দ ব্যবহার করতেন আজ কি সে ভাষায় কথা বলি আমরা? আজ গানের ভাষাও কত মনকাড়া।
প্রশ্ন: তা হলে বাংলা গান শুনছে না কেন লোকে?
উত্তর: সমস্যাটা সেখানেই। সময়টা গান শোনার নয়। খুব খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা! কাল শোভন জানতে চাইল কী ভাবে এগোব? কী করব? আমি ওকে কী বলব? আমি তো নিজেও কনফিউসড!
প্রশ্ন: কেন?
এখন লোকে সার্কাস ভালবাসে। এমন অনুষ্ঠান হবে যেখানে লোকে একটু নাচ দেখবে, একটু গান শুনবে। সিরিয়ালের লোক আসবে, যারা সংলাপ বলবে। লোকে লোকনাথ ভেবে, শিব ভেবে, রামকৃষ্ণ ভেবে তার পায়ে পড়ে যাবে। এগুলো চলবে। হল ভরে যাবে। এত বছর গান করার পরে আমি যদি বলি, আজ একটা নতুন গান শোনাবো। না, ছবির গান নয়, ‘প্রিয়তমা’ নয়, ‘বৌদিমণি’ নয়। নতুন গান, আমি আজও জানি না লোকে সেটা শুনবে কি না! হয়তো শুনবে না...তাই ইচ্ছে না করলেও, কষ্ট না হলেও শত সহস্র বার ‘এ তুমি কেমন তুমি’ গাইতেই হবে। জাস্ট কিচ্ছু করার নেই।
আরও পড়ুন, রণবীরের এই ভয়ঙ্কর নেশার কথা জানতেন?
প্রশ্ন: অনেকে বলেন, বাংলা বেসিক গানের কদর না হওয়ার পেছনে বাঙালির অবদান...
উত্তর: একেবারেই। বাংলা ভাষার কদর করি আমরা একটু প্লিজ! বাঙালি নিজেকে কেন এ ভাবে ধ্বংস করবে? বাঙালিদের মরাঠীদের মতো হওয়া উচিত! প্লিজ, আবার কেউ খারাপ ভাবে নেবেন না! আমি একেবারেই রাজনীতির কথা বলছি না কিন্তু! বাঙালির মেরুদণ্ড সোজা করতে বাংলাতেও বাল ঠাকরে দরকার। বাঙালি নেই তো! বাংলা গান!
প্রশ্ন: আপনার কোনও দায়িত্ব নেই?
উত্তর: আছে তো! নতুন ছেলেমেয়েদের নিয়ে যারা ভাল গাইছে তাদের নিয়ে আমি দল গড়ব। ইচ্ছে আছে হারমোনি করে নতুন গান তৈরি করার। কোম্পানিগুলো এই দায়িত্ব না নিলে আমি নেব। আর কোম্পানিগুলোই বা কী করবে? ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রেভিনিউ জেনারেট করা খুব শক্ত। তবে একটা সত্যি কথা বলি?
মঞ্চে শিল্পী।
প্রশ্ন: বলুন না...
উত্তর: এটা কেউ বলবে না জানি। আমরা গানের বেশির ভাগ শিল্পীই এখন ভাবি, একটা অন্য অর্থ সংস্থানের সঙ্গে যদি গানটা করা যেত তা হলে অনেক সুবিধা হতো! এটা মুখে কেউ বলবে না! আমি বলে দিলাম!
প্রশ্ন: নতুন কী শোনা যাবে আপনার কাছে?
উত্তর: বাইশে শ্রাবণ একটা গান নিয়ে আসব।
প্রশ্ন: কী গান?
উত্তর: ‘এ মোহ আবরণ...’
প্রশ্ন: শাস্ত্র মতে ‘আবরণ ঘুচবে’ না কি সাউন্ডস্কেপ বদল?
উত্তর: নাহ্...যা আছে সেই নিয়েই চলি না...।
ছবি: ফেসবূুকের সৌজন্যে।