Advertisement
E-Paper

দিনে ভালবাসা, রাতে নির্যাতন, ব্লগে লিখলেন অভিনেত্রী

অভিনেতা জাইন খান দুরানি আর সালোনি চোপড়ার প্রেমকাহিনি আজও বলিউডে কান পাতলে শোনা যায়। জাইন খান দুরানি, যিনি খুব সম্প্রতি বলিউডে ডেবিউ করেছেন পরিচালক ওনিরের ‘কুছ ভিগি আলফাজ়’ ছবিতে।

সায়ন্তন মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৮ ১৬:২৮
অভিনেত্রী সালোনি চোপড়া। ছবি: ইনস্টাগ্রামের সৌজন্যে।

অভিনেত্রী সালোনি চোপড়া। ছবি: ইনস্টাগ্রামের সৌজন্যে।

ধবধবে সাদা চাদর। তার একপাশে খোলামেলা দু’টি পা। আর এক পাশে ছিটেফোঁটা রক্ত। সেই রক্ত, যে রক্তের কথা আজও জনসমক্ষে বলতে গিয়ে ঢোক গিলতে হয় এই সমাজের বেশির ভাগ মহিলাকে।

সে দিন ঢোক গিলতে হয়নি অভিনেত্রী সালোনি চোপড়াকে। সালোনি চোপড়া, যাঁকে ক্যাটরিনা কইফের ‘কার্বন কপি’ বলেই বেশি চেনেন নেটিজেনরা। দিন কয়েক আগে মেনস্ট্রুয়াল ব্লাডের একটি ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে নেটপাড়ার লোকজনের কাছে রীতিমতো ট্রোলড হয়েছিলেন। তবে এই প্রথম বার নয়, আগেও কখনও বোল্ড ফোটোশুট, কখনও আবার ব্রা হাতে ছবি পোস্ট করে পাপারাত্‌জিদের চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

এই সালোনি চোপড়াই এ বার সরব হলেন শারীরিক নির্যাতন নিয়ে। একটি ব্লগে নিজের জীবনের নানা পর্যায়ে শারীরিক ভাবে নির্যাতিত হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন সালোনি। উল্লেখ করেছেন এক সম্পর্কেরও কথা। যে সম্পর্ক সালোনির কাছে ছিল দিনের ভালবাসা, আর রাতের নির্যাতন।

ব্লগে সালোনি লিখছেন, ‘ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি, বাবা-মা সন্তানদের ভালবাসেন, কেয়ার করেন বলেই ভুলচুক দেখলে শাসন করেন, মারধর করেন। আমার ভালবাসার পাত্রটিও যখন গায়ে হাত তুলত, সেটাও আমার কাছে যেন ভালবাসাই ছিল।’

কিন্তু এই ভালবাসার পাত্রটির কথা গোটা ব্লগের কোথাও উল্লেখ করেননি সালোনি। ব্লগেই এক জায়গায় সালোনি লিখেছেন, ‘যাঁরাই আমাদের একসঙ্গে দেখত, বলত তোমাদের সম্পর্কটা কত সুন্দর। আর সেটা বাইরে থেকে দেখলে যে কারও বলারই কথা। সকলের সামনে ও আমার খুব কেয়ার করত। সেই কেয়ার যে আদতে দেখনদারি ছিল, মনকে তা বোঝাতে পারতাম না। আর বোঝাতে পারতাম না বলেই দিনের পর দিন বিশ্বাস করে গিয়েছিলাম ওঁকে। বিশ্বাস করতাম ওঁর কবিতাগুলোকে। সে বিশ্বাস যে কবে অন্ধবিশ্বাসে বদলে গেল বুঝতেই পারলাম না।’

আরও পড়ুন, সহজিয়া সুর আর দরদিয়া আলাপে মাতোয়ারা শহর

আর এই কবিতার প্রসঙ্গেই চলে আসে কিছু প্রশ্ন। সালোনির সেই প্রেমিক কি তা হলে কোনও কবি? নাকি অন্য কেউ, যে সালোনির প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে কবিতাই লেখা শুরু করে দিল?

অভিনেতা জাইন খান দুরানি আর সালোনি চোপড়ার প্রেমকাহিনি আজও বলিউডে কান পাতলে শোনা যায়। জাইন খান দুরানি, যিনি খুব সম্প্রতি বলিউডে ডেবিউ করেছেন পরিচালক ওনিরের ‘কুছ ভিগি আলফাজ়’ ছবিতে। যেখানে জাইন এক জন রেডিও জকি, কবিতা শুনিয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেন। তাঁর সেই ‘আলফাজ’, ব্যারিটোন ভয়েস, এ সব কিছু দেখেই ওনির একটা আস্ত ছবি বানিয়ে ফেলেছেন। সেই ‘আলফাজ়’-এই কি বিশ্বাস করেছিলেন সালোনি? জাইন খান দুরানিই কি তা হলে সেই মানুষটি? অভিনয়ের পাশাপাশি জাইন যে কবিতা লেখেন সে কথা প্রায় অনেকেরই জানা।


মেনস্ট্রুয়াল ব্লাডের এই ছবিটি পোস্ট করেই ট্রোলড হয়েছিলেন অভিনেত্রী।

নিশ্চিত হতে আনন্দবাজার ডিজিটালের পক্ষ থেকে মোবাইলে ধরা হল অভিনেত্রী সালোনি চোপড়াকে। বললেন, “হ্যাঁ, এটা ও-ই। তবে ব্লগটি আমি রিভেঞ্জ নেওয়ার জন্য লিখিনি। আর তাই যদি হত, তা হলে আমি ওঁর নামটাই ব্লগে লিখে দিতাম।” তা হলে কেন এই ব্লগ? সালোনির উত্তর, “রোজ আমি নারী নির্যাতনের কথা শুনতে পাই। আমার কাছে অনেক মেসেজও আসে। শুধু ওঁরা যে একা নয়, আমার সঙ্গেও এমন ঘটনা ঘটেছে সেটা শেয়ার করতেই মূলত ব্লগটা লেখা।” কারণ কি শুধু এটুকুই? প্রথমে উত্তর না দিতে চাইলেও শেষে বললেন, “জাইন আমার পরে যাঁর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিল, তাঁকেও অত্যাচার করত। আমার ঘটনা ওঁকে শেয়ার করার সময় আমি তা জানতে পারি। তখন আমার মনে হয়েছিল জিনিসটা এখানেই বন্ধ হওয়া দরকার। আমাকে মুখ খুলতেই হবে। না হলে এরপর আরও অনেকের সঙ্গেই জাইন এই ধরনের কাজ করবে।”

সালোনি জানালেন, জাইনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ২০১৪ সালে দিল্লিতে। সলমন খানের কিক ছবিটিতে বিহাইন্ড দ্য ক্যামেরা কাজ করছিলেন সালোনি। আর জাইন তখন বলিউডে অভিনয়ের একটা সুযোগের জন্য দৌড়ঝাঁপ করেই চলেছেন। সেই আলাপ, আলাপ থেকে বন্ধুত্ব। কিছু দিনের মধ্যেই মুম্বই চলে আসেন জাইন। সালোনির বাড়িতেই ওঠেন। সালোনির পরিবারের সঙ্গেই থাকতে শুরু করেন। সেখান থেকেই গড়ে ওঠে তাঁদের সম্পর্ক। এক বছরের কাছাকাছি চলে সেই সম্পর্ক।

আরও পড়ুন, 'মহানায়ক'-এর গৌরী দেবী গেলেন কোথায়?

ব্লগে এক জায়গায় সালোনি লিখছেন, ‘একদিন হঠাৎই বাড়িতে এসে ও জানায়, ওর পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়। কারণ, আমার ব্রায়ের স্ট্র্যাপ দেখা যাচ্ছে, যেটা তার পরিবার কখনওই মেনে নেবে না।’ ব্লগে জাইনের নাম না করেই এগুলো লিখেছেন সালোনি। সঙ্গে এ-ও লিখেছেন, ‘সেই সময় আমার জানতে ইচ্ছে করছিল, আমার গায়ে হাত তোলার সময় ওর পরিবারের কী মনে হয়?’

২০১৬ সালে আরেকটি ছবি পোস্ট করে ব্যাপক ট্রোল্ড হয়েছিলেন সালোনি। সে ছবিতে ব্রা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সালোনি। আর লিখেছিলেন, ‘ব্রা দেখা গেলে তাতে অসুবিধার কী আছে? আমি এমন কিছু মানুষকে চিনি, যাঁদের মহিলাদের পোশাকের ভিতর থেকে ব্রা উঁকি মারলে বড্ড অসুবিধা হয়। এখন বোঝা যায়, এই অসুবিধা আসলে কার?’

কিন্তু এ রকম মুখের উপর সোজাসুজি কথা বলা মেয়ের বলিউডে কাজ পেতে তো অসুবিধা হওয়ার কথা। সালোনি বলছেন, “আমি নিজেই কাজগুলো একটু বাছাই করে নিই। তবে হ্যাঁ ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই আমাকে বলে, তুমি কেন এত কথা বল? সব কিছুকে কেন প্রকাশ্যে নিয়ে আসো? পার্টিতে গেলে পরিচালকরা বলেন, সফল অভিনেত্রী হতে গেলে কথা কম বলতে হয়, আর হাসতে হয় বেশি। একটু চুপ হয়ে গেলে বোধ হয় আরও বেশি করে কাজ পাব। তবে কাজ পাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে দমিয়ে রাখা যাবে না।”

সালোনির এই ব্লগটি সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো আলোড়ন ফেলে দেয়। পরিচালক ওনিরেরও নজরে আসে ব্লগটি। সালোনি বলছেন, "ওনির খুব ভাল ভাবেই জাইনকে চিনতেন। জাইন ওঁর সহকারী ছিল, তার পর ওনিরের পরিচালনায় ও অভিনয়ও করেছে। আর আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারেও জানতেন ওনির। ওই কবিতার বিষয়গুলো উল্লেখ করাতেই ওনির নিশ্চিত হয়ে যায় যে এটা জাইনই।"

বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ওনির-ও। “১০ দিন আগে ব্লগটা পড়ি। বৃন্দাবনে শুট করছিলাম। এতটাই ভেঙে পড়েছিলাম যে শুট ক্যান্সেল করে মুম্বই চলে আসি আর সালোনির সঙ্গে দেখা করি। একটা মানুষ যাঁকে চার বছর ধরে চিনি, তৈরি করেছি, লঞ্চ করেছি, সে যে কোনও মহিলার গায়ে হাত দিতে পারে ধারণা করতে পারিনি। খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এখনও স্বপ্নের মধ্যে আঁতকে উঠি। সালোনি আগে জানালে বোধ হয় জাইনকে আমি লঞ্চই করতাম না। সালোনির সঙ্গে আগে এক বারই দেখা হয়েছিল’’, ফোন ধরেই ঝড়ের গতিতে বলে গেলেন ওনির। কিন্তু চার বছরের পরিচয়, ওনির কিছুই আঁচ পেলেন না? ওনির বলছেন, “জাইন ওর মা-বাবার পরে আমার কথাই বেশি শুনত। বকাঝকা করতাম, ঠিকটা শেখাতাম। কিন্তু পর্দার আড়ালে যে এমন একটা মানুষ লুকিয়ে ছিল ধারণা করতে পারিনি। তবে বছরখানেক ধরেই ওর কিছু ব্যবহার আমার ভাল লাগছিল না। তবে এর একটা প্রতিবাদ দরকার। ধীরে ধীরে হলেও প্রতিবাদটা জরুরি। তবেই এ দেশের মেয়েরা আর এমন লাঞ্ছনার শিকার হবে না আর প্রকৃত অর্থে স্বাধীন হবে।”

তা হলে বলিউডেও হার্ভে ওইয়েনস্টাইনরা আছেন? সালোনি বললেন, “আছেন তো বটেই। এবং সেটা হলিউডের থেকে অনেক বেশি।” কিন্তু প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, রাধিকা আপ্টে, রিচা চাড্ডা, সালোনি চোপড়ারা ছাড়া কেউ মুখ খোলেন না কেন? তাঁর মতে, “অনেকেই মিথ্যা বলে, অনেকেই লুকিয়ে রাখে। আর কেউ কেউ ভাবে, আমার সঙ্গে তো আর হয়নি। সবার মধ্যেই ভয় আছে। আছে হাজারো চাপ।”

কীসের ভয়? অভিনয় তো পারফরম্যান্সের উপর দাঁড়িয়ে আছে।

আরও পড়ুন, ‘‘কে হবে বাংলার কোটিপতি’তে আমি বুম্বা’’

সালোনির মতে, “সে দিন আর নেই। অভিনয়ের আর এখন কোনও দাম নেই। মেয়েদের এখন সেক্সি হতে হবে, ফরসা হতে হবে, বিকিনি পরতে হবে, আসলে সে যে ছবিতে একটা পুরুষের কেবলই লভ ইন্টারেস্ট। আর এই ইন্ডাস্ট্রি বিশাল ভাবে পুরুষদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, সেখানে নারীর খোলাখুলি ভাবে কথা বলার অধিকার এখনও তৈরি হয়নি।"

তা হলে কি ‘#মিটু' ক্যাম্পেন এ দেশে সম্ভব নয়?

সালোনির সোজা উত্তর, ‘‘না, এখনও মিটু-র জন্য এই দেশ প্রস্তুত নয়।"

যাঁর বিরুদ্ধে যে এত অভিযোগ, সেই জিয়ানের কোনও বক্তব্য অবশ্য পাওয়া যায়নি। তাঁকে ফোনে ধরার চেষ্টা করলেও তিনি আমাদের ফোন রিসিভ করেননি।

তবে সালোনির মতে আশাব্যাঞ্জক দিকটা হল আস্তে আস্তে লোকে মুখ খুলছেন। প্রিয়ঙ্কা চোপড়া থেকে রাধিকা আপ্টে, রিচা চাড্ডা থেকে সালোনি...

প্যান্ডোরার বাক্সটা যখন খুলতে শুরু করেছে, অনেক কিছুই বেরিয়ে আসবে বলে ধারণা সালোনির।

Saloni Chopra Bollywood Celebrities Celebrity Gossip Instagram
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy