আর পাঁচটি ভারতীয় মেয়ে বিয়ের দিন যেটুকু সাজেন, দক্ষিণী অভিনেত্রী সামান্থা রুথ প্রভু সেটুকুও সাজেননি। ওড়নার আড়ালের নাটকীয়তা নেই। লাল রঙের উপর রুপোলি জরির কাজ করা যে বেনারসি শাড়িটি পরেছেন সামান্থা, সেটিও পরিচিত নকশারই। বাহুল্য নেই গয়নাতেও। তবে অল্প সাজের ওই ক্যানভাসে সমস্ত আলোটুকু কেড়ে নিয়েছে সামান্থার বিয়ের আংটি এবং তাঁর মঙ্গলসূত্র।
আংটির ছবি ইনস্টাগ্রামে দেখার পর থেকেই তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে ফ্যাশন মহলে। কারণ সাম্প্রতিক অতীতে দেশে যত নায়িকার বিয়ে হয়েছে, তাঁদের কাউকেই এমন ব্যতিক্রমী বিয়ের আংটি পরতে দেখা যায়নি। আংটিটি তাসের রুইতন অর্থাৎ ডায়মন্ডের আকৃতির। যদিও শুধু সেটুকু বললে কিছুই বোঝানো যায় না। আংটিটি তৈরি করা হয়েছে, কিছু অন্য রকম আকৃতির হিরেকে পাশাপাশি জুড়ে। দেখলে মনে হবে, হিরের রুইতনের চারপাশটা হিরের ফুলের পাপড়ি দিয়ে তৈরি।
হাতে গলায় সোনার অলঙ্কার পরলেও সামান্থার এই আংটিটিতে সোনালি ধাতুর চিহ্নমাত্র নেই। তা প্ল্যাটিনাম অথবা হোয়াইট গোল্ড দিয়ে বাঁধানো। ছবিতে সেই আংটি সামান্থার হাতে পরিয়ে দিতে দেখা যাচ্ছে পরিচালক রাজ নিদিমারুকে। একটি ছবিতে সেই আংটি একটু ফলাও করে দেখিয়েওছেন সামান্থা। আর সেই ছবি দেখেই ঘুম উড়েছে নেটাগরিকদের। কী আংটি, কী দিয়ে তৈরি, কত দাম? এমনই নানা প্রশ্ন উড়ে আসছে। কিন্তু সদুত্তর মেলেনি। কারণ, রাজ এবং সামান্থা দু’জনেই এ নিয়ে কোনও তথ্য প্রকাশ করেননি।
তবে তাঁরা না জানালেও বিভিন্ন সূত্র থেকে নানা রকম খবর পাওয়া যাচ্ছে। আর তাতেই জানা গিয়েছে, সামান্থার আংটিটি আসলে বিরল ধরনের ‘পোর্ট্রেট কাট’ হিরে। মাঝে রুইতনের আকৃতির পোর্ট্রেট কাট হিরের চার পাশে যে ফুলের পাপড়ির মতো আকৃতি তৈরি করা হয়েছে, তা নিয়ে দু’রকম মত জানা যাচ্ছে। এক, ওগুলি ছোট ছোট আনকাট হিরের আটটি টুকরো দিয়ে তৈরি। আবার কেউ বলছেন, ওগুলি ক্লিয়ার কাট কোয়ার্টজ় ক্রিস্টাল বা স্ফটিকের।
এই ধরনের পোর্ট্রেট কাট হিরের লকেট পরতে দেখা গিয়েছিল নীতা অম্বানীকেও। সেই সময় ওই ধরনের হিরে প্রসঙ্গে কলকাতার পোশাকশিল্পী অনামিকা খন্না জানিয়েছিলেন, পোর্ট্রেট কাট হিরে বরং দেখতে অনেকটা স্বচ্ছ কাচের মতো। এমন পাথর যার এ পার-ও পার দেখা যায়। হিরের মতো পাথরকে এমন স্বচ্ছ দেখানোর জন্য কাটার যে মুনশিয়ানা দরকার হয়, তা খাঁটি শিল্পীর পক্ষেই দেখানো সম্ভব। তা ছাড়া এই ধরনের হিরের পাথর কিছুটা মজবুতও হতে হয়। সেই জন্যই পোর্ট্রেট কাট হিরে বিরল এবং তার দামও বেশি। এ ধরনের হিরে এক সময় পাওয়া যেত গোলকোন্ডার খনি থেকে। তা কিনতেন মোগল সম্রাট-সম্রাজ্ঞীরা। আপাতত যা শোভা পাচ্ছে সামান্থার আঙুলে তাঁর দ্বিতীয় বিয়ের চিহ্ন হয়ে। যার দাম বিশ লক্ষ কিংবা তার বেশি হলেও অবাক হওয়ার নয় বলে মনে করছেন গয়নার ব্যবসার সঙ্গে যুক্তেরা।
তবে একা ওই আংটি নয়। সামান্থার বিয়ের আরও একটি চিহ্নও নজর কেড়েছে। আর সেটি তাঁর মঙ্গলসূত্র। ইদানীংকালে যে সমস্ত নামী অভিনেত্রীদের বিয়ে হয়েছে, তাঁদের প্রত্যেককেই দেখা গিয়েছে বিদেশি গয়নার ব্র্যান্ড বুগেরির মঙ্গলসূত্র পরতে। প্রিয়ঙ্কা চোপড়া থেকে শুরু করে কিয়ারা আডবানী— সকলেই একই ধরনের মঙ্গলসূত্র বেছে নিয়েছেন। সামান্থাকে দেখা গেল অন্য পথে হাঁটতে। তাঁর মঙ্গলসূত্রটি ফিনফিনে সরু সেনার চেনে গাঁথা মিনিমালিজ়মের শেষ কথা। ২-৩ গাঁট দৈর্ঘ্য ছেড়ে একটি করে কালো পুঁতি আর একটি স্ফটিক। লকেট হিসাবে রয়েছে কেবল একটি লক্ষ্মীর ছবি আঁকা সোনার কয়েন। দক্ষিণ ভারতে এমন সোনার কয়েন দেওয়া থালি মঙ্গলসূত্র পরার চল আছে। তবে সামান্থা পুরোপুরি সেই থালি মঙ্গলসূত্রও পরেননি। তাঁর ওই বাহুল্যহীন মঙ্গলসূত্রের প্রশংসা করেছেন অনেকেই।