বস্টনে রয়েছেন নীতা অম্বানী! প্রায় প্রতি দিনই কোনও না কোনও অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণে হাজির হতে হচ্ছে তাঁকে। আর প্রতিটি অনুষ্ঠানেই সাজগোজে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন ভারতীয় ধনকুবেরের স্ত্রী। এর আগে শিকরগা বেনারসি এবং প্রায় ‘নিষিদ্ধ’ বুননের পার্সি গারা কাজের শাড়ি পরে বস্টনের দু’টি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন নীতা। শনিবার তিনি পরলেন লখনউয়ের চিকনকারির উপর সোনার জরির জরদৌসি কাজ করা শাড়ি পরে। বেজরঙা শাড়ির উপর সাদা সুতোয় বোনা সূক্ষ্ম লখনউ চিকনের কাজ। বিদেশের মাটিতে ভারতীয় শিল্পের ওই প্রদর্শন নজর তো টেনেছেই। তবে তার থেকেও বেশি নজর কেড়েছে নীতার গলার হারখানি!
গলায় আটকে থাকা নেকলেস নয়। নীতা যে দু’ছড়া পান্নার মালা পরেছিলেন, তা দৈর্ঘ্যে অনেকটাই বড়। নাভির কিছুটা উপরে থেমেছে হারের লকেট। আর সেই লকেট একটি গোল ‘পোট্রেট কাট’ হিরে। যা বিরল হিরেগুলির মধ্যে অন্যতম বলে জানিয়েছেন হারটির নকশাকার কলকাতার পোশাকশিল্পী অনামিকা খান্না।

ছবি: অনামিকা খান্নার ইনস্টাগ্রাম থেকে।
পান্নাতেও বিশেষত্ব
হারের দু’ছড়ায় অন্তত ২০০টি মাঝারি মাপের পান্না। অনামিকা জানিয়েছেন, ওই পান্না কলম্বিয়ান পান্না। আনা হয়েছে ‘ওল্ড মাইন’ থেকে। বিশ্বের সবচেয়ে দামি পান্না পাথরটি কলম্বিয়ান পান্না। ওই ধরনের পান্না রঙে এবং ঔজ্জ্বল্যে বিশ্বের অন্য পান্নার থেকে অনেক বেশি সুন্দর হয় বলে রত্নের দুনিয়ায় তার কদর বেশি। দামও বেশি। তবে নীতা যে পান্না পরেছেন, সেটি প্রকৃতিগত ভাবে কলম্বিয়ান পান্না হলেও তার খনিটি আফগানিস্তানের পঞ্জশিরের। দুর্মূল্য রত্নের ইতিহাস বলছে, পঞ্জশিরের খনি থেকে তোলা পান্না আসত ভারতীয় রাজা-বাদশাদের ব্যবহারের জন্য। শুধু তা-ই নয় পঞ্জশিরের খনিটি প্রাচীনত্বের দিক থেকেও কলম্বিয়ার খনির থেকে অনেক এগিয়ে। ৩১৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দের সমসাময়িক ইতিহাসে ওই খনির উল্লেখ পাওয়া যায়। ১০০০ খ্রিস্টাব্দের আশপাশে ওই খনি থেকে তোলা পান্নারও হদিস মেলে। অন্য দিকে কলম্বিয়ার পান্নার খনি খনন করা হয় ১৫৪৫ খ্রিস্টাব্দে। পঞ্জশিরের ওই পান্নার খনিকে তাই ‘ওল্ড মাইন’ বলা হয়। যেখান থেকে পাওয়া পান্না কলম্বিয়ার পান্নার সমমানের। নীতা সেই ‘ওল্ড মাইন’-এর পান্নারই মালা পরেছেন গলায়।

ছবি: অনামিকা খান্নার ইনস্টাগ্রাম থেকে।
পোট্রেট কাট হিরে
পান্নার মালার সঙ্গে পরা হিরের লকেটটিও ‘বিরল’। সমাজমাধ্যমে নীতার সাজগোজের বিবরণ দিতে গিয়ে অন্তত সেই বিশেষণই ব্যবহার করেছেন কলকাতার পোশাকশিল্পী অনামিকা। তিনি লিখেছেন, ‘‘পান্নার মালার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হল পোট্রেট কাট হিরের লকেট। যেটি একটি হিরেখচিত জ্বলন্ত সূর্যের নকশার উপর গাঁথা রয়েছে। এই আকৃতির এবং এই মাপের পোট্রেট কাট হিরে শুধু বিরলই নয়, তার কোমল দ্যুতির আবেদনের জন্য বন্দিতও।’’

ছবি: সংগৃহীত।
কেন বিরল?
পোট্রেট কাট হিরের বিশেষত্ব হল অন্য পলকাটা হিরের মতো এতে কাটার বাহুল্য নেই। পোট্রেট কাট হিরে বরং দেখতে অনেকটা স্বচ্ছ কাচের মতো। এমন পাথর যার এ পার-ও পার দেখা যায়। হিরের মতো পাথরকে এমন স্বচ্ছ কাচের দেখানোর জন্য কাটার যে মুনশিয়ানা দরকার হয়, তা খাঁটি শিল্পীর পক্ষেই দেখানো সম্ভব। আর সেই জন্যই পোট্রেট কাট হিরে বিরল এবং তার দামও বেশি।

ছবি: সংগৃহীত।
নীতার হারের মূল্য কত!
পোট্রেট কাট বড় হিরের দাম অনেক বেশি। কারণ দাগহীন কাচের মতো ওই হিরে যত বড় হবে, কাটার দক্ষতা তত বেশি জরুরি। আড়াই ক্যারাট ওজনের একটি ছ’কোনা হিরের দাম ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। নিতার হিরেটি নিটোল গোল। ওজনও বেশি। ফলে সেটির দাম যে আরও অনেক বেশি হবে তা বলে দিতে হয় না। আর শুধু লকেটের দামই যদি আধ কোটি বা তার বেশি হয়, তবে ২০০টি পান্না আর ছোট ছোট হিরে গাঁথা হারের দাম কত হবে তার একটা আন্দাজ করাই যায়!