west bengal lockdown

করোনার গান গেয়ে খিদের জ্বালা মেটাচ্ছেন বর্ধমানের সদানন্দ

মলিন পোশাক, মুখে হাসি, গলায় ঝুলছে মাস্ক— মহানন্দে গেয়ে চলেছেন যন্ত্রণার গান। তাঁর বা তাঁদের জীবনের কঠিন বাস্তবতার গান।

Advertisement

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২০ ২০:১২
Share:

অঙ্গদ সরকার।

করোনা নিয়ে তাঁর গান পৌঁছে গিয়েছিল দিগ্বিদিকে। ভরা পেটে গান আর খালি পেটে গানে অনেক ফারাক। এই প্রবল সঙ্কটের কালে সেই ফারাকটাই যেন আমাদের কানে নতুন করে বিঁধিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অঙ্গদ সরকার। কাঞ্চননগর, বর্ধমানেরর এই বাসিন্দা সব্জি বিক্রি করে সংসার চালান। আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন, ‘‘সে দিন এই করোনার সময় কেউ আমার সব্জি নিতে আসছিল না। বাজার খুব খারাপ। কত ঝুঁকি নিয়ে যে বেরতে হয় আমাদের এই দুর্দিনে! বর্ধমানের সমরকুমার মোদক আমায় ভালবাসেন। উনি বললেন, একটা গান ধর তো...’’

Advertisement

এই ভাবেই করোনা নিয়ে স্বরচিত গান ধরেছিলেন সদানন্দ ওরফে অঙ্গদ সরকার। কঠিন সময়কে সহজে আনন্দের গানে পেরিয়ে যাওয়ার সাহস তাঁর গান দেখাতে পারে বলেই তাঁকে সকলে ‘সদানন্দ’ বলে ডাকে।

মলিন পোশাক, মুখে হাসি, গলায় ঝুলছে মাস্ক— মহানন্দে গেয়ে চলেছেন যন্ত্রণার গান। তাঁর বা তাঁদের জীবনের কঠিন বাস্তবতার গান। করোনা নয়, এই লকডাউনে পেটে দানা না পড়ার ভয়টাই তাঁর বেশি। তবুও বলছেন, ‘‘প্রশাসন যা বলবে তাই মানব।’’ হোয়াটস্অ্যাপ-ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে গানটি। শুরু হয়েছে এই ভাবে—

Advertisement

‘হরি বলো মন রসনা

দেশে আইল করোনা

তাই নে সবার ভাবনা

করি কী উপায়!

কাজ না করলে পরে

সংসার চলা দায়...”

আরও পড়ুন- ভাবনা মমতার, ফিল্ম বানাতে চলেছেন অরিন্দম শীল

বাড়িতে বেকার ছেলে, মেয়ে উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছে। এখন সব্জি বিক্রি করেও সংসার টানতে পারছেন না সদানন্দ। জানালেন, ‘‘আমাদের এখানে দিন আনি দিন খাই মানুষের বাস। ওরা সব্জি কেনার পয়সা পাবে কোথায়? কোনও টাকাই ঘরে আসছে না।’’ তবে সরকারি সাহায্যে গত পাঁচ দিন চাল আর আলু পেয়েছিলেন সদানন্দ। ব্যস! ওইটুকুই।

বেশ কিছু দিন আগে সরকারি হেলমেট সচেতনতা নিয়ে ক্যাম্পেনে গান লিখে ‘সরকারি বাউল’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি। ‘‘সরকার মাসে হাজার টাকা দেয়। কিন্তু পেটের জ্বালা মেটে না। সময় খুব খারাপ। খুব কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে আমার পরিবারকে। তাই গান লিখি। গান গাই।’’

ভয় পেলে, দুঃখ হলে তিনি গান গেয়ে ওঠেন। বাংলা ভাষার অনায়াস দক্ষতা জীবনে ছন্দ না এনে দিলেও গানে তিনি বাস্তবকে ছুঁয়ে থাকেন। ‘‘হারমোনি নেই, তবলাও নেই আমার,

শুধু মনের কথা সুরে বলার চেষ্টা করে চলেছি।’’

আরও পড়ুন- মৃত্যুর আগে প্রাক্তন প্রেমিকাকে ফোন, সলমনের ভাইপোকে নিয়ে প্রকাশ্যে নতুন তথ্য

আসলে গান দিয়ে জীবন দেখিয়ে ফেরেন এই গানপাগল মানুষ। অবিচার হলে প্রতিবাদ করেন গান দিয়ে। এক বার খেয়াল করে দেখেছিলেন তাঁর পরিচিত এক জন বাবা-মাকে দেখেন না, অথচ বাড়ির নাম দিয়েছেন ‘পিতামাতার আশীর্বাদ’। ছেলের এই ব্যবহারের প্রতিবাদ জানালেন গানে। কথা বলতে বলতেই টেলিফোনে গেয়ে উঠলেন সেই গান, ‘পিতামাতার দেয় না ভাত/ মুখে বড় বড় বাত/ আর বাড়ি করে নাম লিখেছে ‘পিতামাতার আশীর্বাদ’।’

এ ভাবেই সামাজিক ঘটনায় মুখর তিনি। মনে করেন, তপস্যা করে যা পাওয়া যায় না, গানে তা পাওয়া যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন