ঘর মুছতে হচ্ছে রোজ: নিজস্ব চিত্র
অঙ্কুশ হাজরা আগে অফ টাইমে কী করত? সিনেমা দেখত, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাত, বই পড়ত মাঝে মাঝে। সেই অঙ্কুশ হাজরা ইদানিং কী করছে? নিয়ম করে তাঁর পোষ্যের পটি পরিষ্কার করছে, সারা বাড়ি ঝাঁট দিচ্ছে, বাসন মাজছে, আরও কত কী... কারণ ‘লকডাউন’।
বাড়ির কাজ করার অভ্যেস কোনওদিনই আমার তেমন ছিল না। সময়ও পাইনি কোনওদিন তেমন। টাইট শুটিং শিডিউল, হাজারটা ইভেন্ট, এত কাজ থাকত সারা দিন — সে সব ফেলে এই সব বাসন ধোয়া, ঝাড়ু দেওয়ার ফুরসতই পেতাম না।
শখের বসে কোনওদিন ঝাঁটা তুলেছি হয়তো, তবে তা ‘শখ’-ই ছিল এত দিন। লকডাউন জীবনটাকে অন্য ভাবে দেখতে শেখাল। পরিচারক ছুটি নিয়েছেন। আমি না করলে কে করবে? নোংরা বাড়ি তো আর রেখে দেওয়া যায় না। সারাক্ষণ শুনছি, “হাইজিন মেইন্টেন করুন। জামাকাপড় পরিষ্কার রাখুন।”
আরও পড়ুন- ‘এই রিপোর্ট কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য’? কণিকার সমর্থনে প্রশ্ন তুললেন উর্বশী
এখন হাতে অনেক সময়। ঘরের কাজগুলোই আমার একমাত্র টাইমপাস।
যে দিন প্রথম ঝাঁটা হাতে ধরলাম, মনে হল ‘এ তো মেরি বাঁয়ে হাতকা খেল’। গেঞ্জি, বারমুডা, ঝাঁটা আর আমি! হাতে কলমে করতে গিয়ে সে আর এক কেলো। ধুলোটুলো সব জড় করে এক জায়গায় নিয়ে এলাম, এ বার তুলে ফেলব, ওহ, বাবা! সে ধুলোর পাহাড় সরে তো না, উল্টে দেখি এ দিক, ও দিক ছড়িয়ে যাচ্ছে। সে গুলোকে আবার ঝাঁট দিতে শুরু করলাম। এক বারে শট ওকে হল না, তাই রি-টেক। মনে হল, এত কায়দা-র ঝাঁটা না নিয়ে মায়েদের সেই সেকেলে ঝাঁটা হলেই তো সুবিধে হত। এ কী ঝাঁটা রে বাবা! ধুলো গুলো সব আমার দিকে চলে আসছে। উফ্! সে যে কী ঝামেলা। বেশ অনেক সময় লাগল। তাঁর পর গলদঘর্ম হয়ে শেষ হল আমার ঘর পরিষ্কার পর্ব।
এ বার বাসন মাজা!
এ বার বাসন মাজা! সে আর এক বিপত্তি। মাজতে গিয়েছি, হুস করে এক গাদা ডিটারজেন্ট পড়ে গেল। বাসন মাজতে গিয়ে নিজেই ভিজে গেলাম। এক সপ্তাহ পার হয়ে গেল লকডাউনের, আমি এখনও বুঝেই উঠতে পারলাম না, কতটা সাবান নেওয়া উচিত। কাজ করতে গিয়ে উল্টে বিগড়েই দিচ্ছি সব।
আরও পড়ুন- করোনার ত্রাণে শুধু টাকাই দিলেন না, খরচের জায়গাও বলে দিলেন শাহরুখ
এই লকডাউনে বেশ বুঝেছি, কোনও কাজই অবহেলার নয়। ঘর মোছা, বাসন ধোয়া, এগুলো এক একটা শিল্প। যাঁরা নিয়মিত এ সব করে থাকেন তাঁরা সবাই শিল্পী। ঝাড়ু দেওয়ার যে আলাদা টেকনিক আছে, তা এই লকডাউনেই প্রথম জানলাম। কত কিছু শিখছি রোজ। এ ভাবেই কেটে যাচ্ছে আমার লকডাউন পিরিয়ড।