এক খামারে বড় হওয়া সাত ভাই। বাইরের দুনিয়ার কাছে পরিচিত ‘অভদ্র’ ও ‘অমার্জিত’ বলে। কী করে তাঁরা পরিবর্তন করলেন নিজেদের মানসিকতার। তাই নিয়েই এগিয়েছে গল্প। অ্যাকশন-কমেডি-রোমান্সে ভরপুর ছবি ‘সত্তে পে সত্তা’। মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮২ সালে। সাত ভাইয়ের ভূমিকায় যাঁরা অভিনয় করেছিলেন সেই কুশীলবরা এখন কী করছেন? কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন নিজেদের কেরিয়ারে?
সবথেকে ছোট ভাইয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সচিন পিলগাঁওকর। চরিত্রের নাম ছিল শনি আনন্দ। শৈশবে পিতৃহীন সচিন কেরিয়ার শুরু করেছিলেন শিশুশিল্পী হিসেবে। শিশুশিল্পী হিসেবে তিনি জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছিলেন।
পরবর্তী কালে অভিনয়কেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন তিনি। তবে প্রাপ্তবয়স্ক সচিন নায়ক হিসেবে ততটা সাফল্য পাননি। বরং, তিনি ছবিতে অভিনয়ের তুলনায় অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়েছেন সঞ্চালক হিসেবে।
বিক্রম সাহু ছিলেন ষষ্ঠ ভাইয়ের ভূমিকায়। ছবিতে তাঁর নাম শুক্র আনন্দ। তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত ভিকি সাহু, বিমল সাহু, ইন্দ্রজিৎ নামেও। বিভিন্ন ছবিতে এগুলি ছিল তাঁর স্ক্রিন-নেম। পরবর্তী সময়েও অভিনয় করেছেন তিনি। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি হল ‘ওম শান্তি ওম’, ‘বার্থ ডে কেক’ এবং ‘জমিন’। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি পরিচালনাও করেছেন।
পঞ্চম ভাইয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন কানওয়ালজিৎ সিংহ। সুদর্শন এই অভিনেতা নায়ক হওয়ার দৌড়ে প্রথম সারিতে থাকতে পারেননি। তবে হিন্দি ও পঞ্জাবি ছবি এবং টেলিভিশনে চরিত্রাভিনেতার ভূমিকায় তিনি পরিচিত ও জনপ্রিয় মুখ। ‘সত্তে পে সত্তা’ ছবিতে তাঁর অভিনীত চরিত্রের নাম ছিল গুরু আনন্দ।
চতুর্থ ভাই বুধ আনন্দের ভূমিকায় অভিনয় করা কানওয়ারজিৎ পেন্টাল আবার কুশীলব হওয়ার থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন অভিনয়ের শিক্ষক হওয়ায়। ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি পরিচিত পেন্টাল এবং মাখ্খন নামেও। ‘জওয়ানি দিওয়ানি’, ‘রফু চক্কর’, ‘বাওরর্চি’, ‘পিয়া কা ঘর’, ‘জঙ্গল মেঁ মঙ্গল’, ‘খোটে সিক্কে’, ‘রোটি’ এবং ‘হীরা পান্না’ তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি।
কানওয়ারজিতের ভাই গুফি পেন্টালও জনপ্রিয় অভিনেতা। আটের দশকে তিনি-ই ছিলেন দূরদর্শনের ‘মহাভারত’-এর শকুনি। কানওয়ারজিতের ছেলে হিতেনও একজন অভিনেতা। ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া থেকে প্রশিক্ষিত কানওয়ারজিৎ ওই প্রতিষ্ঠানের অভিনয়-শিক্ষণ বিভাগের প্রধান পদের দায়িত্বে ছিলেন দীর্ঘদিন।
সাত ভাইয়ের তৃতীয় বা সেজো ভাই ছিলেন শক্তি কপূর। ছবিতে তাঁর চরিত্রের নাম ছিল মঙ্গল আনন্দ। কয়েক দশকের দীর্ঘ কেরিয়ারে তিনি অভিনয় করেছেন সাতশোর বেশি ছবিতে। বলিষ্ঠ চরিত্রাভিনেতা শক্তি ভিলেন এবং কমেডিয়ান, দুই মেরুর অভিনয়ই করেন সমদক্ষতায়। তাঁর মেয়ে শ্রদ্ধাও এখন বলিউডের প্রথম সারির নায়িকা।
বুধ, মঙ্গলের পরে মেজো ভাই সোম আনন্দ। সেই ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সুধীর আনন্দ। তাঁর আসল নাম ভগবানদাস মূলচাঁদ লুথিরা। ১৯৬২ থেকে ২০০৯ অবধি, সাড়ে চার দশকের কেরিয়ারে তিনি অভিনয় করেছেন দু’শোটিরও বেশি ছবিতে। তিনি ছিলেন পর্দার সুপরিচিত খলনায়ক। ২০১৪ সালের ১২ মে তিনি প্রয়াত হন ৭০ বছর বয়সে।
সবার শেষে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। বড় ভাই সোম আনন্দ। অভিনয়ে, অমিতাভ বচ্চন। তাঁকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে ছবির চিত্রনাট্য। ‘সত্তে পে সত্তা’ ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন দ্বৈত ভূমিকায়। নায়ক ‘সোম আনন্দ’ এবং খলনায়ক ‘বাবু’-র ভূমিকায়। সত্তে পে সত্তার সে দিনের নায়ক আজ নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান। ‘বিগ বি’ নামটা আজ কার্যত বলিউডেরই সমার্থক।
কন্নড় ভাষায় ‘সত্তে পে সত্তা’-র রিমেক হয়েছিল, ‘জগ্গু’ নামে। ছবির মরাঠি সংস্করণের নাম ‘আমহি সাতপুতে’।