গণেশ কি সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের খুব প্রিয়? গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
মা দুর্গার খুব প্রিয় সন্তান। গণেশ তাঁর খুব আদরের। গায়ে মাটি তুলে ছেলেকে গড়েছিলেন মনের মতো করে। তার পর প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন অন্তর দিয়ে। যেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই কবিতার পংক্তি, ‘ইচ্ছা হয়ে ছিলি মনের মাঝারে’।
আমি মা দুর্গাকে খুব ভালবাসি। ওঁর প্রিয় সন্তান আমারও খুব প্রিয়। গণেশকে দেখলেই মনে হয়, খুব ভোলেভালা একজন কেউ। জন্ম থেকে তাঁর কপালে দুর্ভোগ। অনেকেই জানেন না, গণেশ কন্দর্পকান্তি ছিলেন। ওঁর মতো রূপবান কেউ ছিলেন না। ওঁর ভাই কার্তিকও না। সেই তিনি-ই ভাগ্যের পরিহাসে হাতির মুণ্ড নিয়ে প্রাণে বাঁচেন। আর ‘কটাক্ষে’র শিকার, মজার পাত্র আজীবন। ‘গণেশদাদা পেটটি নাদা, ঘোল খেয়েছে গাদা গাদা...!’
প্রচলিত ছড়ার পংক্তি একটা গল্প মনে করিয়ে দিল। পুরাণে আছে, খুব শান্ত, নিরীহ গণেশ এক বার এক ভক্তের বাড়ি থেকে ফিরছেন। সারা দিন ধরে ভক্তদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রচুর মোদক, মিষ্টি খেয়েছেন। আসলে, উনি ‘না’ বলতে পারেন না কাউকে। ভরপেট খেয়ে নড়াচড়া করতে পারছেন না। বাহন ইঁদুরের পিঠে বসে ধীরগতিতে এগোচ্ছেন বাড়ির দিকে। হঠাৎ ইঁদুরের চোখে পড়ল, মাঝরাস্তায় একটা সাপ শুয়ে। ভয়ের চোটে ইঁদুর পালিয়ে যেতেই গণেশ উল্টে পড়েছেন। আঘাত পেয়ে পেট ফেটে বেরিয়ে পড়েছে মোদক আর মিষ্টি!
তাই দেখে আকাশের চাঁদ পর্যন্ত তাঁকে ‘কটাক্ষ’ করেছিল, ‘সবাইকে সব বলে দেব, তুমি ছোঁচা’!
আমারও অবশ্য গণেশপুজো বললেই মনে পড়ে মোদক আর মিষ্টির কথা। আমিও খেতে আর খাওয়াতে ভালবাসি বলেই হয়তো। একা আমি নই, আমার ছেলে আদিদেবও এই দেবতাকে খুব পছন্দ করে। আসলে, ওঁকে কেন যেন খুব আপন মনে হয়। আমরা রোজ রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ঠাকুরের সঙ্গে গল্প করি। তার পর শুতে যাই।
যিনি সকলের মজার পাত্র সেই তিনি-ই বিদ্যায়, বুদ্ধিতে সেরা। ওঁর বসার ভঙ্গি দেখবেন। বাংলায় যাকে বলি, গেঁড়ে বসা। মানে, দখল করে বসা। সেটাই তো গণপতি। জনগণের ঈশ্বর, সিদ্ধিদাতা, বিঘ্নবিনাশক, বুদ্ধিমত্তার প্রতীক। ওই জন্যই কার্তিক যখন ময়ূরে চেপে ব্রহ্মাণ্ড প্রদক্ষিণ করেছিলেন, তখন গণেশ শিব-পার্বতীকে পাশাপাশি বসিয়ে তাঁদের প্রদক্ষিণ করে বাজিমাত করেছিলেন।
এই প্রসঙ্গে বলি, প্রিয়জনদের মধ্যে দু’জনের সঙ্গে গণপতির খুব মিল পাই। এক, আমার ছেলে আদিদেব। দুই, প্রিয় বন্ধু অভিনেতা অম্বরীশ ভট্টাচার্য। আপনারা জানেন না, অম্বরীশের একটা খাতা আছে। একটা ঝাঁটা কিনলেও সেই খাতায় লেখা থাকে! এত হিসাবি। আর বুদ্ধির কথা কী বলব? ওর মতো তীক্ষ্ণ নজর আর বুদ্ধি খুব কম জনেরই হয়।