Aparajita Apu

Sushmita: মরে গিয়ে যে কী উপকার হয়েছিল আমার! ভাগ্যিস গল্পে অপুর মৃত্যুদৃশ্য ছিল: সুস্মিতা

অপু আমায় পুরো বদলে দিয়েছে। আগে ভীষণ শান্ত ছিলাম। এখন তুলনায় ছটফটে। আগে দশটা কথা বললে একটা উত্তর দিতাম। এখন একাই দশটা কথা বলি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২২ ১৮:৩৩
Share:

সুস্মিতা দে।

প্রশ্ন: দেড় বছর ধরে চলা প্রথম অভিনীত ধারাবাহিক ‘অপরাজিতা অপু’ শেষ, অপুর কী অবস্থা?

Advertisement

সুস্মিতা: অবশ্যই খারাপ লাগছে। একটা ধারাবাহিক শেষ হলে কী হয়, সেটা এই প্রথম বুঝলাম। শেষ শ্যুটের দিন সেটে খুব কান্নাকাটি হবে, সেটাও আগাম টের পাচ্ছি। এখনই মনখারাপ করছে সবার জন্য। বিশেষ করে আমার পর্দার ‘দিদিভাই’-এর জন্য। ওঁর সঙ্গে আমার বেশি দৃশ্য ছিল। তার মধ্যেও শান্তি, সঠিক সময়ে শেষ হচ্ছে। অপু বিডিও হতে চেয়েছিল। অনেক লড়াইয়ের পর তার স্বপ্নপূরণ হয়েছে। এর পরেও ধারাবাহিক চললে মনে হত, টেনে বাড়ানো হচ্ছে।

Advertisement

প্রশ্ন: দর্শকেরাও সোশ্যাল মিডিয়ায় বলছেন, ধারাবাহিকটির শুরু থেকে শেষের মধ্যে সামঞ্জস্য রয়েছে...

সুস্মিতা: এটা আমি নিজে দেখেছি, অনুভব করেছি। বিশেষ করে বাইরে শো করতে গিয়ে বুঝেছি, দর্শকেরা একটি মেয়ের লড়াইকে ভীষণ সম্মানের চোখে দেখেন। খুব প্রশংসা পেয়েছি। অপুর লড়াই তাঁদের লড়াই হয়ে গিয়েছিল।

প্রশ্ন: ‘দীপু অ্যাসিসট্যান্ট’ ওরফে রোহন ভট্টাচার্যের নাম করলেন না তো?

সুস্মিতা: (হেসে ফেলে) ওরে বাবা! ওর নাম না বললে হয়। ‘দীপু অ্যাসিস্ট্যান্ট’, ‘আন্টি নম্বর ১’ সবাইকে মিস করব।

প্রশ্ন: ধারাবাহিক শেষের আগে অপু মরেও গেল!

সুস্মিতা: (অট্টহাসি) ফিরেও এসেছে। নতুন রূপে। মিসেস গোমস হয়ে। আসলে মরেনি। মরার ভান করেছিল অপরাধীদের ধরতে নতুন ছদ্মবেশ নেবে বলে।

প্রশ্ন: প্রথম ধারাবাহিকেই মৃত্যুদৃশ্য, কেমন লাগল?

সুস্মিতা: মরে গিয়ে কী যে উপকার হয়েছে আমার! সেই সময়ে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। এ দিকে ধারাবাহিকের ৯০ শতাংশ দৃশ্য আমাকে নিয়েই। ফলে, ছুটি নেওয়ার কথাও বলতে পারছিলাম না। মৃত্যুদৃশ্যে অভিনয়ের পরেই গোটা এক দিন ছুটি। পরের কয়েকটি দিন অভিনয়ের চাপ কম। কাজও করেছি। বিশ্রামও পেয়েছি। তখন মনে হয়েছিল, ভাগ্যিস অপু মরল। (আবার হাসি)

প্রশ্ন: পর্দায় দেখে বাড়ির সবার কী অবস্থা?

সুস্মিতা: পর্ব দেখে মা-বাবার মুখ ভার। কেঁদে ফেলেছিলেন ওঁরা। ডেকে বললেন, ‘‘আজকের পর্ব ভাল হয়নি জানিস তো!’’ আমার খুব মজা লেগেছিল শুনে। জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘‘কেন?’’ জানালেন, ওই সব দেখতে ভাল লাগে না!

প্রশ্ন: দীপু অ্যাসিস্ট্যান্ট কিন্তু পর্দায় ডাক ছেড়ে কেঁদেছে অপুর জন্য!

সুস্মিতা: (হাসতে হাসতে) জানি, আর আমরা হেসে গড়াগড়ি খেয়েছি। আমায় মৃত দেখে ভেঙে পড়বে দীপু। যখন ওই দৃশ্যটা শ্যুট হচ্ছে আমি তখন ক্যামেরার পিছনে চেয়ারে বসে। রোহন ওর সংলাপ বলতে শুরু করতেই হাসতে শুরু করে দিয়েছি। আমাদের হাসির চোটে ও সংলাপ ভুলেছে। রি-টেক হয়েছে। তার পর পরিচালক স্বপন নন্দী মৃদু ধমকাতেই সবাই চুপ। এ ভাবে হাসি-ঠাট্টা করতে করতেই আমরা শ্যুট করি।

প্রশ্ন: দেড় বছরে শুধুই হাসিঠাট্টা হল? ইন্ডাস্ট্রির রাজনীতি চোখে পড়েনি?

সুস্মিতা: সত্যিই চোখে পড়েনি। আমাদের সেটে অন্তত চোখে পড়েনি। আর প্রথম এসেছি বলে আমি সেটের বাইরে অন্যত্র যেতাম না। ফলে, বাকিরা কে, কী করছেন বা করেন, জানি না।

প্রশ্ন: প্রথম দিনের কথা মনে পড়ে?

সুস্মিতা: অবশ্যই। আমরা প্রথম দিন বানতলায় শ্যুট করতে গিয়েছিলাম। প্রথম দিনেই আমার পায়ের নখ ভেঙে গিয়েছিল! সেই শুরু। গোটা ধারাবাহিক জুড়ে তার পর কিছু না কিছু হয়েইছে। পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পেয়ে হাসপাতালে। হাতে আঘাত পেয়েছি। আর তখন আমি চারটে লাইন সংলাপও বলতে পারতাম না। এখন আট পাতা গড়গড়িয়ে বলতে পারি। সবটাই পরিচালক স্বপনদা আর প্রযোজক সুশান্ত দাসের জন্য। ওঁরা ভরসা করেছিলেন আমার উপরে। তাই ‘অপরাজিতা অপু’ হয়ে উঠতে পেরেছি।

প্রশ্ন: আর কী কী শিখলেন?

সুস্মিতা: অপু আমায় পুরো বদলে দিয়েছে। আগে ভীষণ শান্ত ছিলাম। এখন তুলনায় ছটফটে। আগে দশটা কথা বললে একটা উত্তর দিতাম। এখন একাই দশটা কথা বলি। অজস্র জবাব ঠোঁটের গোড়ায় তৈরি। সাক্ষাৎকার দিতে পারতাম না। সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করতেন। আমি বোকার মতো চুপচাপ। এখন পারলে আমি প্রশ্ন-উত্তর দুটোই বলে দিই... (হাসি)। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখেছি। প্রচুর উন্নতি হয়েছে আমার।

প্রশ্ন: মঞ্চে প্রথম দিনের অনুষ্ঠানের কথা মনে আছে?

সুস্মিতা: আছে। শহরের বাইরের এক বিরাট মেলায় অনুষ্ঠান। আমি তার আগে কোথাও বলেছিলাম, মেলার গরমগরম জিলিপ খেতে খুব ভালবাসি। সেটা এক অনুরাগী মনে রেখেছিলেন। যেতেই তিনি আমার হাতে শালপাতার ঠোঙায় মোড়া জিলিপি তুলে দিয়েছিলেন। আমি হতভম্ব! আমার জন্যেও উপহার আসছে। আনন্দে সে দিন চোখে জল এসে গিয়েছিল। এত দিন আমি পছন্দের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দেখব বলে অপেক্ষা করতাম। এ বার আমার জন্য সবাই অপেক্ষা করছেন। মাঠ ভর্তি লোক। আমাকে দেখে পাগলের মতো সবাই চেঁচাচ্ছেন। একটু ছুঁতে চাইছেন। বিশেষ করে বাচ্চারা আমায় প্রচণ্ড ভালবাসে। এ সব যে আমার জীবনেও ঘটবে, কোনও দিন ভাবিনি।

প্রশ্ন: ছোট পর্দা জয় হল, এ বার কোন মাধ্যমে?

সুস্মিতা: আপাতত ছুটি নেব কয়েক দিন। বাইরে বেড়াতে যাব। তার পরে ভাবব। এমনও হতে পারে, এ বার আমায় দেখতে সবাইকে বড় পর্দায় চোখ রাখতে হবে।

প্রশ্ন: বড় পর্দার পরিচালক-প্রযোজকেরা যে আপনার মুখে দেবী প্রতিমার আদল খুঁজে পান! সাহসী চরিত্রের জন্য নাকি আপনি নন...

সুস্মিতা: হ্যাঁ, এটা আমিও অনেক বার শুনেছি। কী বলি? এটুকুই বলতে পারি, এক বার ভরসা করে দেখতে পারেন। যেমন ভরসা করেছেন সুশান্তদা।

প্রশ্ন: কাজ, বেড়ানো লিস্টে, বিয়ের পরিকল্পনা নেই? পাত্র তো রেডি!

সুস্মিতা: এক্ষুণি বিয়ে! না না। আগে নিজেকে আরও প্রতিষ্ঠিত দেখি। তার পর। বিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে না। অনির্বাণও পালিয়ে যাচ্ছে না। ও প্রথম দিন থেকে আমার সঙ্গে। ওর হাতেই সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার সেরার মুকুট পরেছিলাম। তাই জানি, সময়ে সব হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন