গেরুয়া রংটা এখন কেমন লাগছে?
গেরুয়া ইজ দ্য নিউ রেড। এখন আমি গেরুয়ার প্রেমেই রয়েছি।
‘দিলওয়ালে’র সব ক’টা গান তো হিট। মুম্বইতে নিজের ফ্ল্যাট-ট্যাট কেনা হল নাকি?
(হেসে) কী-যে বলেন। না-না। এখনও হয়নি। আরও একটু শো-টো করতে হবে...আসলে প্লে-ব্যাকের জন্য যে পরিচিতিটা হয়...সেটা থেকেই শো-এর অফার আসে তো! আমি আবার খুব তেড়েফুঁড়ে শো করতে পারি না। ধীরেসুস্থে এক-আধটা...
‘দিলওয়ালে’র আগে তো ‘রাজনীতি’, ‘গোলমাল থ্রি’ ছবিতেও...
আরে ন’বছর ধরে মুম্বইতে রয়েছি। গাইছি। সোনু, শান, অরিজিৎ...অনেকের সঙ্গেই গাওয়া হয়ে গেছে। ভাল কথা, বাংলাতেও কাজ করেছি কিন্তু। ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের সঙ্গে। ‘যোদ্ধা’, ‘অভিশপ্ত নাইটি’।
‘শাড়িকে ফল সা... কভি ম্যাচ কিয়া রে’...গানটাও তো হিট।
(হাসি) ওটা সোনাক্ষী সিংহের লিপে। আমি কিন্তু আমার প্রিয় নায়িকাদের জন্য ইতিমধ্যেই গান গেয়ে ফেলেছি। কাজল, সোনাক্ষী, ক্যাটরিনা... উফ্ মাধুরী দীক্ষিতের জন্য যদি গাইতে পারি। এক বার এক অনুষ্ঠানে আমি রিহার্সাল করতে গেছি... দেখি মাধুরীও সেখানে, একটা গোলাপি লহেঙ্গা পরে ডান্স রিহার্সাল করতে এসেছেন... আমার তো হাত-পা ঠান্ডা হওয়ার জোগাড়।
বনগাঁর মছলন্দপুর থেকে মুম্বই... রূপকথা তো—
সত্যি। বনগাঁর তিন-চারটে স্টেশন আগে মছলন্দপুরে থাকতাম। স্কুল ছিল ‘ভূদেবস্মৃতি বালিকা বিদ্যালয়’। তার পর ‘রাজবল্লভপুর হাইস্কুল’ থেকে পিওর সায়েন্সে হায়ার সেকেন্ডারি। তার পরই ‘ইন্ডিয়ান আইডল’-এ অডিশন।
আর তার পরই তো কী হতে কী হয়ে গেল, তাই না?
এক্কেবারে...অডিশনে চান্স পেয়ে সোনু নিগমের সামনে গাইব, ভাবতে ভাবতেই পাগল হয়ে গেলাম। অডিশনের পরে ধীরে ধীরে টপ ফাইভ ফাইনালিস্ট হওয়া পর্যন্ত যেন ঘোরের মধ্যে ছিলাম। যে কারণে কয়েক মাসের জন্য ইংলিশে অনার্স নিয়ে ‘কল্যাণী ইউনিভার্সিটিতে’ ভর্তি হয়েও শেষ পর্যন্ত আর চালাতে পারলাম না। মুম্বই চলে এলাম। আর সোনুকে দেখেই হাত-পা ঠান্ডা!
আপনার তো দেখছি মাঝে মধ্যেই হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়?
(হেসে) সত্যিই। আমি একেবারে ‘ফ্যান গার্ল’ টাইপ। মুম্বইতে পেডার রোডে লতাজির বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ে আজও কপালে হাত ঠেকিয়ে প্রণাম করি। মা-বাবা এলে, ওঁরাও প্রণাম করেন (হাসি)। একবার তো দিল্লি এয়ারপোর্টে গুলজার সাহেবকে দেখে হাত-পা এমন ঠান্ডা হয়ে গেল যে গিয়ে আলাপ পর্যন্ত করতে পারলাম না।
শাহরুখ খানের সঙ্গে আলাপ হল?
হ্যাঁ-অ্যা-অ্যা-অ্যা।
আবার হাত-পা ঠান্ডা?
হবে না! ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ যখন রিলিজ করে, আমি তখন ক্লাস সিক্সে। কাজলের মতো চুল কেটে, ওই রকম নানা রঙের হেয়ারব্যান্ড পরে সাইকেল চালিয়ে সারা মছলন্দপুর ঘুরে বেড়াতাম... হাত-পা ঠান্ডা হবে না? ‘দিলওয়ালে’র সময়ে প্রীতমদার স্টুডিওয় অনেকবার শাহরুখের সঙ্গে দেখা হয়েছে। কথা হয়েছে।
কী রকম?
আসলে প্রীতমদার (চক্রবর্তী) স্টুডিওতে গানটা তৈরি হওয়ার সময় শাহরুখ এসেছেন কয়েক বার। আমি ছিলাম সেই সময়ে। আসলে আমার ফ্ল্যাট আন্ধেরি ওয়েস্টে হওয়ায়, ডাকলেই চট করে স্টুডিওয় চলে আসতে পারতাম। প্রীতমদা হয়তো বলল, ‘‘অন্তরা গানটা একটু শোনা তো’’, আমিও প্রীতমদার গিটারের সঙ্গে খালি গলায় শাহরুখকে গানটা শুনিয়ে দিলাম— এই রকম আর কী!
...‘গেরুয়া’র শুটিং করে এসে শাহরুখ অনেকক্ষণ ধরে আইসল্যান্ডের গল্পও করেছিলেন আমাদের সঙ্গে।
আর কাজল?
ওঁর সঙ্গে মিউজিক লঞ্চেই আলাপ, কিছুক্ষণের জন্য। খুব প্রশংসা করলেন। আমার আসলে খুব ভয় ছিল, চিরকাল কাজলের গলায় অলকা যাজ্ঞিক গেয়েছেন, সেখানে আমি কি আদৌ ফিট করব! ভগবানের কৃপায় আমার স্বপ্নের নায়িকার গলায় উতরে গেলাম।
এখন মছলন্দপুরে গেলে প্রতিবেশীরা কি অন্য চোখে দেখেন?
অন্য চোখে নয়। তবে হ্যাঁ, এখন সকলেই নানা রকম গল্প জানতে চায়...
ফিল্মস্টারদের কথা... গানের কথা... তবে ওই প্রথম কয়েক দিনই। তার পর আমি সেই আগের মতো সাইকেল চালিয়ে ঘুরে বেড়াই। পাশের বাড়ির উঠোনে যদি দেখি কোনও কাকিমা কাঠের জ্বালে গুড় জ্বাল দিচ্ছে, আমি হয়তো গিয়ে বাটি করে একটু গরম গুড় চেখে নিলাম.... সঙ্গে ‘মনমা ইমোশন জাগে’র ‘সাঁইয়া’ অংশটা কাকিমাকে শুনিয়ে দিলাম ওই উঠোনে বসেই।
তাই! মুম্বইয়ের গ্ল্যামারে চোখ ধাঁধায়নি বলতে চাইছেন?
প্রশ্নই নেই। আমাদের আগে কত বাঙালির কত কীর্তি আছে, আমার মাথা ঘুরলে চলবে! তা ছাড়া আমি মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়ে। মা হাউজ ওয়াইফ, বাবা গানের টিচার। আমাদের বাড়িতে বলতে গেলে একটাই বড় ঘর। সামনে বিরাট উঠোন। ছোট্টবেলা থেকেই আমার ঘুম ভাঙত বাবার রেওয়াজে... আমার মাথা ঘুরলে চলবে?
এখানে একটা কথা বলে রাখি, বাবা সলিল চৌধুরীর ভক্ত। সে জন্য ওঁর মেয়ের নামের সঙ্গে আমার নামের মিলের ব্যাপরটা বাবার খুব ভাল লাগে। আমার প্রথম গানের গুরুও আমার বাবা। তার পর শিখি শোভনা মুখোপাধ্যায়ের কাছে। পিওর ক্ল্যাসিকালের গলাটা দিদিমণিই তৈরি করে দিয়েছিলেন।
বুঝলাম। কিন্তু মুম্বইতে টানা কাজ পাওয়াটাও তো বিরাট চাপ। তা ছাড়া আপনার তো দেখছি বেশির ভাগ কাজই প্রীতমের সঙ্গে?
প্যাশন ধরে আঁকড়ে আছি। এখানে বাঙালিদের একটা খুব স্ট্রং বন্ডিং আছে। প্রীতমদা, অনুরাগ বসু... এঁরা আমাকে খুব স্নেহ করেন। প্রত্যেক বছর আমি অনুরাগদার বাড়িতে সরস্বতী পুজোয় যাই। পুজোর ফলও কাটি। বাড়ির মেয়ের মতো।
ও! বাঙালি বন্ডিং!
একটা মজার ঘটনা বলি, প্রথম যখন পেয়িং গেস্ট হিসেবে মুম্বইতে থাকতে যাই, তখন ওয়ান বিএইচকে ফ্ল্যাটের ড্রয়িংরুমে আমরা তিন জন পেয়িং গেস্ট থাকতাম। বাড়িওয়ালি যে একটু ছিটগ্রস্ত, জানতাম না। যাই হোক, আমি শুতাম একটা বেতের সোফায়। কুঁকড়ে। বুঝতে পারতাম না, কেন ঘুম ভাঙলেই প্রত্যেক দিন আমার গা-হাত-পায়ে এত ব্যথা হয় (হাসতে হাসতে)... তার পর তো...
একদিন বাড়ির মালকিনের মাথা বিগড়ালো। দুম করে জিনিসপত্র বার করে দিল আমাদের। কী করি? আমার সঙ্গে অন্য যারা থাকত, তারা বয়ফ্রেন্ডদের ফোন করে ব্যবস্থা করে নিল। আমার তা-ও নেই। শেষে দিদির মতো এক পরিচিতা, অরুণিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে এক মাসের জন্য আশ্রয় পাই। উনি আবার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ভাইঝি হন। বললাম না, বাঙালিদের এই বন্ডিংটায় আলাদা একটা আরাম আছে।
তা এখন তো বেশ পরিচিতি হয়ে গেছে?
(হাসি) জানেন, সবচেয়ে মজা হল, ‘রং দে তু মোহে গেরুয়া’র রেকর্ডিংয়ের জন্য প্রীতমদা রাত দুটোর সময় ডেকেছিল। তখনই ফাইনাল রেকর্ডিং করে শাহরুখকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেই গানের ওপরেই শাহরুখ-কাজলের শুটিংটা হয় আইসল্যান্ডে। আমার মনটা
খুঁত খুঁত করছিল। ক্লান্ত গলায় গাইলাম... প্রীতমদাকে বললাম, ‘‘দাদা একটা ফ্রেশ গলায় নাও না।’’ দাদা আবার রেকর্ডিং করল। আবার শাহরুখকে পাঠাল। দুটো গান শোনার পরে শাহরুখ বললেন, ‘‘না, না আগেরটাই একদম ঠিক।’’ আমার খুব মজা লেগেছিল। তার মানে আমার রাত দুটোর গলাটাই পছন্দ হল শেষ পর্যন্ত!