Death Anniversary Of Actor Soumitra Chatterjee

সৌমিত্রবাবুকে সামনাসামনি দেখতে না পাওয়ার কষ্টে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলেছিল এক ষোড়শী!

“কলেজবেলায় সচেতন ভাবেই যেন সৌমিত্রবাবুকে সমর্থন জানিয়েছি। ওঁর আভিজাত্য, ওঁর পাণ্ডিত্য, ওঁর সৌন্দর্য— সব মিলিয়ে অনন্য।”

Advertisement

লীনা গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৫ ১৩:২৪
Share:

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে অনর্গল লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে নানা স্মৃতি। একটা স্মৃতি খুব প্রিয়। সৌমিত্রবাবু এলেই তাঁর ছায়া হয়ে দশম শ্রেণির এক ষোড়শীও স্মৃতিপথে হাজির। মেয়েটি তাঁর স্বপ্নের অভিনেতাকে প্রথম দেখার সুযোগ হারিয়ে ব্যথায় হাউহাউ কেঁদেছিল! ওর সেই যন্ত্রণা কেউ বোঝেনি।

Advertisement

ওই মেয়েটি আমিই। পরের দিন অঙ্ক পরীক্ষা। আগের সন্ধ্যায় সৌমিত্রবাবুকে প্রথম দেখার সুযোগ করে দিয়েছিলেন পিসেমশাই। সৌমিত্রবাবুর ছেলে সৌগত চট্টোপাধ্যায় আমার বয়সের কাছাকাছি ছিলেন। ওঁকে দেখলেই সে সময়ে যেন সৌমিত্রবাবুকে অর্ধেক দেখা হয়ে যেত! যাই হোক, উৎসাহে, আগ্রহে সকাল থেকে প্রহর গুনছি। হঠাৎ বাড়ি থেকে মা-বাবার নির্দেশ, “ও সব হবে না। সন্ধ্যায় পরের দিনের পরীক্ষার প্রস্তুতি না নিয়ে একজন অভিনেতাকে দেখতে যাওয়া কথা ভাবলে কী করে?”

স্বপ্নের অভিনেতাকে সামনাসামনি দেখার সুযোগ তৈরি হয়েও ভেস্তে গেল! প্রচণ্ড কষ্টে বুকের ভিতরটা যেন দুমড়ে যাচ্ছে। অঝোরে কাঁদছি। আমার অনেক কান্নার মধ্যে এই কান্নাটা খুব প্রিয়। ঠিক সৌমিত্রবাবু যেমন প্রিয়।

Advertisement

অভিনেতাকে নিয়ে এ রকম স্মৃতি কি একটা? ‘সাঁঝবাতি’ ছবিতে পরিচালনার আগেই আলাপ ওঁর সঙ্গে। তখন আমি একটি পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত। এক বন্ধুকে নিয়ে গিয়েছি সৌমিত্রবাবুর সাক্ষাৎকার নিতে। প্রচুর পড়াশোনা করে গিয়েছি। কথায় কথায় দু’ঘণ্টা পার। আমরা খুশি, দারুণ সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। তখন টেপ রেকর্ডারের চল। ফিরে এসে লিখতে বসে মাথায় হাত! বন্ধু সৌমিত্রবাবুকে দেখে এতটাই মুগ্ধ, যে রেকর্ডার চালাতে ভুলে গিয়েছে। কী করে লিখব? আর লেখাই হল না। এ দিকে যখনই দেখা হয়, তখনই সৌমিত্রবাবু জিজ্ঞাসা করেন, “তোমাদের সেই সাক্ষাৎকারের কী হল? কবে বেরোবে?” আমরা তো নানা অজুহাতে পাশ কাটাই। শেষে লজ্জা সরিয়ে একদিন সত্যি কথাটাই জানালাম। বললাম, বন্ধুর কাণ্ড। শুনে হা-হা করে ভীষণ চেনা হাসিটা হাসলেন। তার পরেও বলতে পারছি না, আর একবার সময় দেবেন? সঙ্কোচ সরিয়ে সে কথাও বলে ফেললাম। হাসতে হাসতে উনি বললেন, “এসো। কিন্তু সে দিন টেপ রেকর্ডার চালানোর মতো তৈরি হয়ে এসো।”

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের হাসিতেও মায়া জড়িয়ে! ছবি: ফেসবুক।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মাথা থেকে পা পর্যন্ত বাঙালিয়ানায় মোড়া। ধুতি-পাঞ্জাবি বা পাজামা-পাঞ্জাবি। অনর্গল জীবনানন্দ দাশের কবিতা আবৃত্তি। নানা বিষয়ে প্রগাঢ় পাণ্ডিত্য। আভিজাত্য ওঁর বর্ম। নানা বিষয়ে কথা বলে আরাম। কারণ, যে কোনও বিষয়ে তিনি অনায়াস। নারী তো এ রকম পুরুষেই মুগ্ধ! আমার কলেজবেলায় উত্তমকুমার আর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়— এই দুই শিবির ছিল। আমি ইচ্ছা করেই দ্বিতীয় দলে। অবুঝ জেদ, বাকিদের থেকে নিজেকে আলাদা দেখাতে হবে। আর অভিনেতার প্রতি অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ।

এমন এক কিংবদন্তির সংসারী রূপও দেখেছি। ঠিক হয়েছে, ওঁর নাতি রণদীপ বসু আমাদের একটি ধারাবাহিকে অভিনয় করবেন। আগের দিন লুক টেস্ট হয়েছে। সৌমিত্রবাবু খুব খুশি। যাক, নাতি একটা জায়গায় নিয়ম বেঁধে কাজ করবে। পরের দিন শুটিং। আগের রাতে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। রণদীপের জীবনটাই বদলে গেল! তখন দেখেছি, শালগাছের মতো শক্তপোক্ত এক মানুষ কী ভাবে ভিতরে ভিতরে ভেঙে যাচ্ছেন! সেই সময়ে পরিবারের কিছু কিছু কথা বলতেন। ব্যস, ওটুকুই। নিজের ইচ্ছায় যতটা বলতেন, কোনও দিন তাই নিয়ে বাড়তি আগ্রহ দেখাইনি।

সৌমিত্রবাবুকে ঘিরে আফসোস রয়ে গেল। সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, মাধবী মুখোপাধ্যায়ের জীবনী লিখেছি। উনি নিজের মুখে ওঁর জীবনী লেখার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তার পরেই করোনাকাল। ওঁকে নিয়ে আর কলম ধরাই হল না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement