বারীন বিশ্বাস অফিসের চেয়ারটা ছেড়ে উঠতেই ভুলে গিয়েছিলেন। ফল? হঠাৎ একদিন রক্তচাপ, কোলেস্টেরল বেড়ে গেল। সে যাত্রা যদিও কোনও মতে বেঁচে ফিরলেন। এ রকম সদা ব্যস্ত এক্সিকিউটিভদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। আরে বাপু, শারীরিক কসরত না হয় না-ই করলেন। হাঁটতে তো পারেন!
দেখবেন আপনার ডাক্তারবাবুও আপনাকে এই পরামর্শই দিচ্ছেন। সহজ রোগমুক্তির উপায় যে একমাত্র এটাই।
হাঁটাহাঁটি
যে কোনও বয়সের মানুষই হাঁটায় যোগ দিতে পারেন। জিমে গিয়ে কসরত করার প্রয়োজন নেই। আবার বিশেষ শারীরিক সক্ষমতারও দরকার নেই। দরকার নেই বিশেষ কোনও কায়দা শেখারও। যে কোনও জায়গায়, সে বাড়িই হোক বা পার্ক, মাঠ বা রাস্তা হাঁটলেই হল।
দল বেঁধে ক’জনে মিলে
হাঁটার একঘেয়েমিটাই কেটে যাবে তা হলে। একা হাঁটছেন? মনে হতেই পারে কোনও মোটিভেশন পাচ্ছেন না। বেশ কয়েক জনের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় করে নিয়ে রোজ একই সময়ে হাঁটতে বেরিয়ে পড়ুন। কোনও দিন যান পার্কে, কোনও দিন কোনও বাড়ির কাছের কোনও সরোবরের ধারে। দেখবেন হাঁটাটাই রোজের নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পাওয়ার ওয়াকিং
দু’হাতে দু’টো ৫০০ মিলি জলভর্তি বোতল নিন। এ বার ১ মিনিট জোরে হাঁটুন। হাতদু’টোও জোরে চলবে তখন। এর পর ১ মিনিট আস্তে হাঁটুন। কনুই না ভেঙে হাত সোজা করে রিল্যাক্স করে হাঁটুন। তার পর আবার জোরে হাঁটা। এ ভাবে ১০ মিনিট হাঁটলেই দেখবেন ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। একে বলে পাওয়ার ওয়াকিং। জলের বোতলের বদলে রিস্ট ওয়েট পরেও পাওয়ার ওয়াকিং সম্ভব।
টিপস
• হাঁটার কিছু কৌশল আছে। হাঁটার সময় পায়ের পাতা ফেলার একটা কায়দা আছে। প্রথমে মাটিতে পড়বে গোড়ালি। তার পর পড়বে পায়ের পাতা। যাকে পরিভাষায় বলে হিল, দেন টো
• হাঁটার জন্য ভাল জুতো ব্যবহার করুন। জুতোর সোল যেন ১ ইঞ্চি পুরু হয় আর তা যেন মাঝারি ধরনের নমনীয় হয়
• হাঁটা শেষ হলে অতি অবশ্যই কুল ডাউন স্ট্রেচ করবেন। বিশেষ করে থাইয়ের পেশি, কাফ, হিপের পেশি আর হ্যামস্ট্রিং। স্ট্রেচগুলো ১০-৩০ সেকেন্ড ধরে রাখুন।
• হাঁটার মজা ধরে রাখতে দু’সপ্তাহ বাদে বাদে আপনার ওয়ার্কআউটের জায়গা বদলান। ভিক্টোরিয়া থেকে চলে যান আউট্রাম ঘাট। নতুন জায়গা মোটিভেশন বাড়াবে
• টানা এক ঘণ্টা হাঁটবেন না। ২৫-৩০ মিনিটই যথেষ্ট। বেশি হাঁটলে হাঁটুতে ‘ওভারইউজ ইনজ্যুরি’ আসতে পারে
ভ্রমণ-প্রাণায়াম
হাঁটতে হাঁটতে সেরে নিতে পারেন প্রাণায়ামও। সহজ ব্যাপার। চার পা হাঁটুন গভীর ভাবে শ্বাস নিতে নিতে। তার পর শ্বাস ছাড়তে ছাড়তেও চার পা হাঁটুন। শ্বাস নেওয়ার সময় খেয়াল রাখবেন যেন পেট পর্যন্ত পৌঁছয়। মানে ডায়াফ্রাম ব্রিদিং হয়। এ ভাবে শ্বাস নেওয়া আর ছাড়ার প্রক্রিয়া চালিয়ে যান ৪-৫ মিনিট। একটু বিশ্রাম নিয়ে ২-৩ বার রিপিট করুন এই হাঁটার পদ্ধতিটা।
হাঁটুন, স্ট্রেচও করুন
অনেকেই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হেঁটেই যান। ওয়ার্ম আপ, কুল ডাউন বলে কিছু জানেনই না। হাঁটার শুরুতে বা হাঁটতে হাঁটতে করে নিন কয়েকটা স্ট্রেচও। যেমন এক পা হেঁটে একটা হাঁটু ভাঁজ করে নিয়ে আসুন কোমরের কাছে। ওই হাঁটুটা দু’হাত দিয়ে কোমরের কাছে আরও টেনে নিন। এর পর অন্য হাঁটু ভাঁজ করে কোমরের কাছে টানুন। মোট ৩-৫ বার করুন। হিপ ফ্লেক্সর পেশি দীর্ঘায়িত হয় এতে। হাঁটুন আর সামনের দিকে হাঁটু সোজা রেখে লাথি ছুড়ুন। এতে হ্যামস্ট্রিং পেশি স্ট্রেচ হবে। হাঁটুন আর ডান পা-টা হাঁটু ভাঁজ করে হিপের কাছে তুলুন। এ বার ডান হাত দিয়ে ওই পায়ের পাতা টেনে ধরুন কয়েক সেকেন্ড। তার পর করুন বাঁ পা-টা। দু’পায়েই করুন ৩-৫ বার করে। এতে থাইয়ের পেশি স্ট্রেচড্ হবে। এ ভাবে পায়ের পেশি স্ট্রেচ করে নিয়ে হাঁটা শুরু করলে আপনার চোট-আঘাত লাগবে না। হাঁটতেও সুবিধে হবে।
ইন্টারভ্যাল ওয়াকিং কার্ডিও
নাগাড়ে ৪৫ মিনিট একঘেয়ে হাঁটার চেয়ে অনেক চ্যালেঞ্জিং এই ইন্টারভ্যাল হাঁটার ড্রিল। এতে ক্যালোরিও খরচ হয় অনেক বেশি। এই ড্রিলটা করতে ২ মিনিট সাধ্যমতো জোরে হাঁটুন। তার পর ১ মিনিট হাঁটুন একদম আস্তে। এ ভাবে মোট ১৫-২০ মিনিট হাঁটতে হবে। এক সপ্তাহ এই পদ্ধতি অনুসরণ করার পর দ্বিতীয় সপ্তাহে ২ মিনিট জোরে হাঁটুন। আবার ৩০ সেকেন্ড হাঁটুন আস্তে। এ ভাবে করুন ১৫-২০ মিনিট। পরের সপ্তাহে ৯০ সেকেন্ড জোরে হেঁটে ৩০ সেকেন্ড আস্তে হাঁটুন। জোরে আর আস্তে হাঁটার অনুপাত বারবার কমান বাড়ান।
ফিউশন ড্রিল
পার্ক, লেক, মাঠ যে কোনও জায়গায় করতে পারেন এই ড্রিলটা। ২ মিনিট জোরে হাঁটুন। এ বার নরম ঘাসে বসে পড়ুন। হাঁটু ভাঁজ করে মাটিতে রাখুন। শরীরটা ৪৫ ডিগ্রি পিছন দিকে আনত করুন। দেখতে এমন লাগে যেন পিঠ হেলিয়ে রয়েছেন। এ বার দু’হাত একসঙ্গে এক বার শরীরের ডান দিকে নিন। আরেক বার নিন বাঁ দিকে। মোট দু’দিকে ১০ বার করে করুন। এই ব্যায়ামটাকে বলে সিটেড রাশিয়ান ট্যুইস্ট। আমাদের কোর পেশির জোর বাড়ে এতে। এর পর উঠে দাঁড়ান আর ১ মিনিট হেঁটে আসুন। তার পর আবার দু’মিনিট জোরে হাঁটা আর বসে পড়ে রাশিয়ান ট্যুইস্ট। মোট ৪-৫ বার জোরে হাঁটা, রাশিয়ান ট্যুইস্ট, আস্তে হাঁটার সিকোয়েন্সটা চালান। ২ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে ৩ বার ড্রিলটা রিপিট করতে পারেন। হাঁটুতে আর্থ্রাইটিস থাকায় বা মোটা হয়ে যাওয়ার কারণে দৌড়তে পারেন না যাঁরা, তাঁদের জন্য হাঁটার বিকল্প নেই। তবে একটানা হাঁটা এড়িয়ে হাঁটার সঙ্গে জুড়ে দিন বক্সিং। যেমন আট পা হাঁটুন। এ বার জায়গায় দাঁড়িয়ে আড়াআড়ি দু’হাত দিয়ে আটটা ঘুষি মারুন শূন্যে। তার পর আবার আট পা হাঁটা, আটটা ঘুষি। মোট ১০ বার হাঁটা আর ঘুষির সিকোয়েন্স সম্পূর্ণ হলে ২ মিনিটের বিশ্রাম নিতে হবে। ড্রিলটা রিপিট করতে হবে ৩-৫ বার।