বাউলের সুরে। নিজস্ব চিত্র।
রবিবার থেকে হাবরার বাণীপুরে শুরু হল বাণীপুর লোকউৎসব। এ বার উৎসব ৬১ বছরে পড়ল। উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট বাউল শিল্পী সুভদ্রা শর্মা। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক নিমাই ভট্টাচার্য, স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, হাবরা পুরসভার চেয়ারম্যান নীলিমেশ দাস প্রমুখ। উৎসবের মূল মঞ্চের নামকরণ করা হয়েছে সদ্য প্রয়াত চেয়ারম্যান সুবীন ঘোষের নামে। উৎসব চলবে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম রবিবার উৎসবের সূচনা হয়। এই উপলক্ষে একটি সাহিত্য-ভিত্তিক স্মরণিকাও প্রকাশিত হয়েছে।
সুভদ্রা বলেন, “লোকশিল্পীদের আজ কেউ সম্মান দেয় না। কিন্তু বাণীপুরে এসে আমরা লোকশিল্পীরা যথার্থ সম্মান পাই। তাই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসি।” নিমাইবাবু ক্ষোভের সুরে বলেন, “রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ন্যাকামির শেষ নেই। অথচ সেই মানুষই লোকসংস্কৃতি ও লোকশিল্পীদের সম্মান করেন না।”
উৎসবের বিভিন্ন দিনে আয়োজন করা হয়েছে ঢাক বাদন, ছৌ নাচ, যাত্রা, লোকনাট্য লেটো, ভাওয়াইয়া গান, বাউল, নাটক, লোকনাট্য গম্ভীরা, কবিগান, রায়বেঁশে, মূকাভিনয়, তরজা গান, ঝুমুর, মতুয়া সঙ্গীত, রামযাত্রা, লোকসঙ্গীত ও পুতুল নাচ। থাকছে স্বাস্থ্যমেলা, যোগাসন ও জিমন্যাস্টিকের প্রদশর্নী। বিভিন্ন গ্রামীণ খেলার প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা রয়েছে। দেখা যাবে পুলিশের সমাজ সচেতনামূলক কাজের প্রদশর্নী, পটচিত্রও।
উৎসব উপলক্ষে স্থানীয় সবুজ সঙ্ঘের মাঠ থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হয়েছিল। গরুর গাড়ি, কুচকাওয়াজ, আদিবাসী নৃত্য, ছৌ নৃত্য, রণ-পায়ে সজ্জিত স্কুল-কলেজ পড়ুয়ারা তাতে যোগ দেয়। শুধু হাবরার মানুষই নন, এই উৎসবের টানে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ আসেন বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। গোটা দেশ থেকে লোকশিল্পীরা আসেন। হাবরার মানুষের কাছে উৎসবটি বার্ষিক পার্বণে পরিণত হয়েছে। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, উদয়শঙ্কর, অন্নদাশঙ্কর রায় কে আসেননি এই উৎসবে। স্থানীয় মানুষের কথায়, “এই লোকউৎসবের মাধ্যমে আমরা গোটা দেশের লোক সংস্কৃতির মানচিত্রে জায়গা করে নিতে পেরেছি।”
বেঁধেছো যে বাহুডোরে...। গোবরডাঙা উৎসবে ইন্দ্রাণী দত্তের অনুষ্ঠান। ছবি: শান্তনু হালদার।