ফ্যাটি লিভার নির্মূল হবে ৩০-৩০-৩ নিয়মে। ফাইল চিত্র।
লিভারকে যা সওয়ানো হবে, তা সইবে না মোটেই। নিয়মের বাইরে অনিয়ম করলেই সে বিগড়ে যাবে। শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গটির প্রতি অবহেলাই ডেকে আনছে যত সমস্যা। আজ অম্বল তো কাল হজমের গোলমাল, অ্যাসিড রিফ্লাক্স থেকে ফ্যাটি লিভার— সব কিছুর জন্যই দায়ী লিভার। শরীরকে দূষণমুক্ত করা থেকে শুরু করে রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখা, রক্ত জমাট বাঁধতে না দেওয়া, চর্বি বা ফ্যাটকে ভাঙতে সাহায্য করা, হজমে সাহায্য করা, জরুরি পুষ্টি তৈরি, সংক্রমণ ঠেকানো— এর কাজ গুনে শেষ হওয়ার নয়। তাই লিভারের যত্ন না নিলে, শরীরের হাল খারাপ হবেই। পেটও বিগড়ে যাবে যখন তখন। লিভার ভাল রাখতে ওষুধের উপর নির্ভরশীলতা কমানোরই কথা বলছেন গবেষকেরা, বদলে ৩০-৩০-৩ নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।
৩০-৩০-৩ নিয়মেই বশে থাকবে লিভার?
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ থেকে প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুসারে, লিভার ভাল থাকলে বিপাকক্রিয়ার হার বাড়বে। আর সে জন্যই জরুরি ৩০-৩০-৩ নিয়ম। কী এই নিয়ম?১) দিনের প্রথম খাবার অর্থাৎ, প্রাতরাশে অন্তত ৩০ গ্রাম প্রোটিন খেতেই হবে।
২) সারা দিনের খাবারে ৩০ গ্রামের মতো ফাইবার রাখতেই হবে।
৩) দিনে অন্তত ৩টি প্রোবায়োটিক খেতে হবে।
প্রথম আসা যাক প্রাতরাশে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, সারা দিনে ১০০ গ্রামের মতো প্রোটিন খাওয়া উপকারী। তার মধ্যে ৩০ গ্রাম রাখতেই হবে সকালের জলখাবারে। দু’টি ডিম খেলে ১২ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যাবে, যা চাহিদা পূরণ করতে পারবে না। কাজেই এর সঙ্গে আরও কিছু খেতে হবে। যাঁরা দু’টি করে ডিমসেদ্ধ খাচ্ছেন, তাঁরা সঙ্গে দু'টি রাগি বা বাজরার রুটি ও এক বাটি ফল রাখুন। মুগ ডালের ইডলি বা দোসা, পনিরের পুর ভরা দোসা খাওয়া যেতে পারে। এতে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবারের চাহিদা মিটে যাবে। তবে ডিম খাওয়ারও নিয়ম আছে। যদি ডিমের পোচ খেতে হয়, তা হলে রান্না করবেন জলে, তেলে নয়। রোজকার ডায়েটে বাদ দিন ভাজা ডিমের পদগুলি। কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড খুব বেশি হলে, প্রাতরাশে ক’টা ডিম খেতে পারবেন, তা চিকিৎসকের থেকে জেনে নিতে হবে।
ফাইবারের সুবিধা হল,এই জাতীয় খাবার খেলে পেট ভর্তি থাকবে। অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতেও ইচ্ছে করবে না। শসা, আপেল, পেয়ারার মতো ফলে রয়েছে ভরপুর পরিমাণে ফাইবার। ডাল, কাঠবাদাম, বিভিন্ন ধরনের দানাশস্য ফাইবারে ভরপুর। প্রতি দিনের খাবারে রাখতে পারেন ব্রাউন ব্রেড কিংবা ব্রাউন রাইস। এতে ফাইবারের পরিমাণ অন্যান্য খাবারের চেয়ে বেশি। আটার রুটিতেও পাবেন প্রচুর পরিমাণে ফাইবার।
সারা দিনে অন্তত ৩ রকম প্রোবায়োটিক খেতে বলছেন গবেষকেরা। প্রোবায়োটিক হল এমন কিছু জৈব পদার্থ, যা শরীরে উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়। ভাল ব্যাক্টেরিয়া খাদ্য বিপাকে সাহায্য করে। হজম ক্ষমতা বাড়ায়। দই সবচেয়ে সহজলভ্য প্রোবায়োটিক। দই খেলে হজম ভাল হয়। তবে টকদই খেতে হবে। আবার ইডলি, দোসা, আচারেও প্রোবায়োটিক থাকে। প্রোবায়োটিক পানীয় হিসাবে কাঞ্জিতেও চুমুক দিতে পারেন। সব্জি বা ভাত গেঁজিয়ে এটি তৈরি হয় বলে প্রচুর প্রোবায়োটিক পাওয়া যায়। যাঁদের দই সহ্য হয় না, তাঁরা প্রোবায়োটিকের জন্য কাঞ্জি খেতেই পারেন।