হার্টের ক্ষতি হতে পারে অজান্তে। ছবি: সংগৃহীত।
বছরের শেষ মাস পড়ে গিয়েছে। বড়দিন, বর্ষপূর্তির মতো উৎসব প্রায় এল বলে। আর পার্বণ মানেই অনিয়ম। জমজমাটি খাওয়াদাওয়া থেকে অনিয়মিত ঘুম। আনন্দের মাঝে কখন যে স্বাস্থ্যের উপর অত্যাচার চলতে থাকে, তা টের পাওয়া যায় না। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই ছোট ছোট ঘটনাই হৃদ্স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। আমেরিকার হার্টের চিকিৎসক ডিমিট্রি ইয়ারানভ ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিয়োয় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তাঁর দাবি, ছুটি বা উৎসবের সময়ে অজান্তেই কিছু ভুল করে বসেন অনেকে। আর তার ফল ভোগ করতে হয় হার্টকে।
চিকিৎসকের পরামর্শ, শরীরে ছোটখাটো পরিবর্তন দেখা দিলে অবহেলা করা উচিত নয়। নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতন হওয়া, যে কোনও উপসর্গ দেখা দিলে সতর্ক হওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার বলে মত ডিমিট্রির। উৎসবের সময়ে সাধারণ ৫টি ক্ষতিকারক অভ্যাসের কথা তুলে ধরলেন তিনি।
খাবারে উচ্চ মাত্রায় সোডিয়ামের উপস্থিতি
উৎসবের সময়ে বাইরের খাবার খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। সে সব খাবারে উচ্চ মাত্রায় সোডিয়াম থাকে। অধিকাংশ রেস্তরাঁয় রান্নার সময়ে বেশি করে নুন দেওয়া হয়। কিন্তু সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে শরীরে তরলের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়, ফলে হার্টে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। শরীর ফুলে যাওয়া বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা বেড়ে যায় এই কারণেই। তাই এই সময়ে নুনের বিষয়ে সতর্ক হতে হবে সকলকে। প্যাকেটজাত খাবার কিনলে লেবেলে সোডিয়ামের পরিমাণ পড়়ে নিতে হবে। পরিমাপ বুঝে খাওয়াদাওয়া করলে বিপদের ঝুঁকি কমে যাবে।
প্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিরিক্ত সোডিয়ামের উপস্থিতি। ছবি: সংগৃহীত।
খাওয়ার পর শ্বাসপ্রশ্বাসে পরিবর্তন
অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি পরিমাণে খেয়ে নেওয়ার পর শ্বাসপ্রশ্বাসের ধরন পাল্টে যেতে দেখা যায় অনেক সময়ে। পেট অতিরিক্ত ভরে গেলে রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। ফলে হার্টে অতিরিক্ত চাপ পড়তে থাকে। চিকিৎসক বলছেন, নতুন করে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে, সোজা হয়ে শুয়ে থাকতে অসুবিধা হলে, অথবা খাওয়ার পরে ঘুম থেকে উঠে শ্বাসকষ্ট হলে বুঝবেন, শরীরে অতিরিক্ত তরল জমা হয়েছে। এই লক্ষণগুলিকে উপেক্ষা করা উচিত নয়। কারণ, এগুলি থেকেই হার্টের গুরুতর রোগ শনাক্ত হতে পারে। শ্বাসপ্রশ্বাসের পরিবর্তনে নজর দেওয়া, অল্প পরিমাণে খাওয়া, শোয়ার আগে শরীরকে খাবার হজম করার জন্য সময় দেওয়া হৃৎপিণ্ডের যত্নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন
অনেকেই উৎসব-পার্বণের সময়ে অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন করে ফেলেন। যাঁদের হার্টের রোগ রয়েছে, তাঁদের জন্য অল্প পরিমাণে সেবন করাও ক্ষতিকারক। অ্যালকোহলের কারণে রক্তচাপ নেমে যেতে পারে, অ্যারিদমিয়ার কবলে পড়তে পারেন। তা ছাড়া কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের সঙ্গে অ্যালকোহলের যুগলবন্দি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। যাঁদের হার্টের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা নন-অ্যালকোহলিক পানীয় বেছে নিতে পারেন উৎসবের সময়ে।
ক্লান্তিকে উপেক্ষা করা
উৎসব মানেই হইহুল্লোড়ে যোগ দেওয়া। রাত জাগা, যখন-তখন খাওয়াদাওয়া করা, উত্তেজনা, ইত্যাদি উদ্যাপনেরই অংশ। এ সবের কারণে শরীর অত্যধিক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ভাল খাওয়াদাওয়া করে বা ঘুমিয়ে নেওয়ার পর ক্লান্তি কেটে গেলে, তা উদ্বেগজনক নয়। কিন্তু যদি ক্লান্তি দীর্ঘ দিন থেকে যায়, তা হলে তা হার্টের স্বাস্থ্যের অবনতির ইঙ্গিত হতে পারে।
অত্যধিক ওজন বৃদ্ধিকে অবহেলা করা
শরীর ফুলে যাওয়া বা হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা যদি দেখা যায় উৎসবের মরসুমে, তা হলে সতর্ক হোন। শরীরে তরল জমতে থাকার স্পষ্ট ইঙ্গিত এই দু’টি। হার্ট ফেল করে যাওয়ার অন্যতম কারণও এটি। তাই এ সময়ে ওজন মাপতে থাকা, শরীর ফুলছে কি না পরীক্ষা করাতে থাকা জরুরি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক।