কপালে ব্রণ হওয়ার নেপথ্য কারণ কী? ছবি: সংগৃহীত।
কপালে ব্রণ বা ফোঁড়া শুধু ত্বকের সমস্যা নয়, সামগ্রিক স্বাস্থ্য সম্পর্কেও ইঙ্গিত দেয়। কপালের ত্বক মুখের অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশি তেল উৎপাদন করে। সিবেসিয়াস গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত তেল (সিবাম) উৎপাদিত হয়ে ছিদ্রগুলি আটকে যায়। তেল, ঘাম আর মৃত কোষ মিশে যখন ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়, তখনই জন্ম নেয় কপালের ব্রণ। কিন্তু এই গোটা প্রক্রিয়ার নেপথ্যে নানা কারণ থাকে। সেগুলি ত্বকের সমস্যার থেকেও বেশি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত।
ব্রণ মানেই কেবল লাল রঙের ফোঁড়া নয়, হোয়াইহেড্স, ব্ল্যাকহেড্সও তৈরি হতে পারে কপালে। নীচের অংশ থেকে একেবারে উপরে চুলের রেখা ধরে ব্রণের দৌরাত্ম্য থাকে, যা কখনও কখনও ব্যথা, অস্বস্তির তৈরি করতে পারে।
কী কী কারণে কপালে ব্রণ হতে পারে?
হরমোনের ওঠানামার প্রভাব
বয়ঃসন্ধি, ঋতুস্রাবের আগে ও পরে, গর্ভাবস্থা, রজোনিবৃত্তি, মানসিক চাপের সময় শরীরে অ্যান্ড্রোজেন হরমোন বেড়ে যায়। এই হরমোন ত্বকের তেল গ্রন্থিকে অতি সক্রিয় করে তোলে। ফলে ত্বকে সিবাম জমে ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়। তখনই কপালে ফুস্কুড়ি বা ব্রণ দেখা দেয়। পুরুষদেরও টেস্টোস্টেরন হরমোনের হেরফের হলে কপালে ব্রণ দেখা দিতে পারে। এই ধরনের ব্রণ দীর্ঘস্থায়ী হয়, দেখতে গোল গোল হয়।
ব্রণ মানেই কেবল লাল রঙের ফোঁড়া নয়, হোয়াইহেড্স, ব্ল্যাকহেড্সও তৈরি হতে পারে কপালে। ছবি: সংগৃহীত।
চুল ও প্রসাধনীর প্রভাব
চুলের তেল, সিরাম, জেল বা স্টাইলিং পণ্য কপালের গায়ে লেগে ছিদ্র বন্ধ করে দেয়। চুলের রেখার ধার দিয়ে স্ফীতি তৈরি হয়।
ঘর্ষণের প্রভাব
কপালে বার বার চুল পড়ে যে ঘর্ষণের তৈরি হয় তা থেকে ব্রণ হতে পারে। হেলমেট বা টুপি অথবা হেডব্যান্ড পরলেও কপালে চাপ পড়ে। ঘর্ষণ বা চাপে সৃষ্ট ব্রণ অস্বস্তির সৃষ্টি করে।
মানসিক চাপ ও ঘুমের অভাব
উদ্বেগ বা মানসিক অবসাদের সময় শরীরে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ত্বকের তেল উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ঘুমের অভাবেও শরীরের স্বাভাবিক কাজকর্মের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, ত্বকে প্রদাহের সৃষ্টি হয় এবং কপালে ফুস্কুড়ি দেখা দেয়।
খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব
অতিরিক্ত চিনি, ভাজাভুজি বা দুগ্ধজাত খাবার খেলে কপালের তেল গ্রন্থি প্রভাবিত করতে পারে। বদলে ফল, সব্জি ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাদ্য ত্বকের প্রদাহ কমিয়ে কপালকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
পরিবেশগত প্রভাব
অতিরিক্ত আর্দ্র পরিবেশ, উচ্চ তাপমাত্রা, পরিবেশ দূষণ, ইত্যাদিও কপালের ব্রণের জন্য দায়ী। অতিরিক্ত তেল, ঘামের সঙ্গে ধুলোবালি মিশে কপালের ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করে দেয়। শহরের দূষণে নানা রকমের কণা এবং রাসায়নিক জমে গিয়ে ত্বকে প্রদাহ তৈরি করে।
জিনগত প্রভাব ও ওষুধ
পরিবারের কারও যদি ব্রণ হওয়ার প্রবণতা থেকে থাকে, তা হলে তাঁর বংশধরেরও একই সমস্যা থাকতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ ওষুধের প্রভাবে হরমোনের মাত্রার হেরফের হওয়া থেকে তেল উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।