অ্যানেস্থেশিয়ার সময়ে কী রোগ হতে পারে? ফাইল চিত্র।
দাঁত তুলতে গিয়ে এমন বিপদ ঘনাবে তা ঘুণাক্ষরেও টের পাওয়া যায়নি। মুখের ভিতর অসাড় করার জন্য স্থানীয় ভাবে অ্যানেস্থেশিয়ার (অজ্ঞান বা শরীরের কোনও অংশ অসাড় করার প্রক্রিয়া ) ইঞ্জেকশন দিয়েছিলেন চিকিৎসক। তাতে প্রথমে কোনও অসুবিধাই হয়নি বছর নয়েকের মেয়েটির। দিব্যি শান্ত হয়েই শুয়ে ছিল সে। কিন্তু ঘণ্টাখানেক পরেও যখন তার সাড়া পাওয়া যায়নি, তখন চিন্তায় পড়ে যান চিকিৎসক। পরীক্ষা করে দেখা যায়, মেয়েটির শরীরে কোনও স্পন্দনই নেই। সারা শরীর নীলচে হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও শেষরক্ষা হয়নি। শরীরের রক্ত জমাট বেঁধে মৃত্যু হয় তার।
এই ঘটনা ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগোর। কাউন্টি মেডিক্যাল সেন্টারের অফিস থেকে জানানো হয়েছে, অ্যানেস্থেশিয়ার সময়েই বিরল রোগ দেখা দেয় বালিকার শরীরে। রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়েই মৃত্যু হয় তার। অ্যানেস্থেশিয়ার সময়ে এমন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা খুবই বিরল। বিশ্বে খুব কম জনেরই হয়। সাধারণত এক লাখে এক জনের হতে পারে এই রোগ। চিকিৎসার পরিভাষায় একে বলে ‘মেথেমোগ্লোবিনেমিয়া’।
অ্যানেস্থেশিয়া কি নিরাপদ নয়?
অ্যানেস্থেশিয়া অভিজ্ঞ হাতে হলে তা অবশ্যই নিরাপদ, এমনই জানালেন চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার। তবে ডোজ়ের মাত্রা যেন সঠিক থাকে। লোকাল অ্যানেস্থেশিয়ার সময়ে এমন কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যেমন বেঞ্জোকেন, প্রিলোকেন, যা থেকে সমস্যা হতে পারে। তবে সকলের নয়। ‘মেথেমোগ্লোবিনেমিয়া’ খুবই বিরল রোগ। এই রোগটি জন্মের সময়ে হতে পারে আবার পরবর্তী কালে বিশেষ কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় দেখা দিতে পারে।
‘মেথেমোগ্লোবিনেমিয়া’ থাকলে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা থাকে। তা ছাড়া এই রোগে লোহিত রক্তকণিকা আর অক্সিজেন বয়ে নিয়ে যেতে পারে না। ফলে শরীরের কোষে কোষে অক্সিজেন পৌঁছোতে পারে না। এর প্রভাব পড়ে দু’ভাবে— ১) সায়ানোসিস, যাতে সারা শরীর নীলচে হয়ে যায়। ঠোঁট, আঙুলে নীলচে ছোপ পড়ে। ২) শ্বাসের ভয়ঙ্কর সমস্যা শুরু হয়। মাথাব্যথা, ক্লান্তি, বমি ভাব, শ্বাসকষ্ট, ঘন ঘন অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। অনিয়মিত হয়ে যায় হৃৎস্পন্দনের হার। এতে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
‘মেথেমোগ্লোবিনেমিয়া’ রোগটি নিয়ে গবেষণা চলছে। ‘জামা ইন্টারনাল মেডিসিন’ জার্নালে এই বিষয়ে একাধিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, অ্যানেস্থেশিয়ার সময়ে যদি ওষুধের মাত্রা বেশি হয়ে যায়, তা হলে কোষে কোষে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যেতে পারে আচমকা। সে ক্ষেত্রে ‘হাইপক্সিয়া’ দেখা দিতে পারে। একজন সুস্থ মানুষের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৯০-১০০ শতাংশ থাকা উচিত। সেটা কম হয়ে গেলেই সমস্যা। সিওপিডির রোগী বা যাঁদের রক্তাল্পতা আছে, তাঁদের এই সমস্যা বেশি হয়। আবার ৬ মাসের নীচে শিশুদেরও এই রোগ হতে পারে, যাকে বলে ‘ব্লু বেবি সিনড্রোম’। ‘মেথেমোগ্লোবিনেমিয়া’ ধরা পড়লে দ্রুত এর চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন। রোগটি শরীরে রয়েছে কি না তা জানতে রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। জিন টেস্টিং করেও দেখা হয় সেটি বংশগত ভাবে ছড়াচ্ছে কি না। রক্তে যদি মেথেমোগ্লোবিন নামক উপাদানের মাত্রা বেশি থাকে, তা হলে সতর্ক হতে হবে। সে ক্ষেত্রে কেবল অ্যানেস্থেশিয়ার সময়ে নয়, যে কোনও অস্ত্রোপচার বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও প্রাণ সংশয় বাড়বে।