হাঁটুর ব্যথা, অর্থ্রাইটিসের যে কোনও ব্যথার নিরাময় করবে জেল। ছবি: ফ্রিপিক।
জটিল অস্ত্রোপচার নয়। বাতের ব্যথায় ইঞ্জেকশন নেওয়ার দরকার পড়বে না। যন্ত্রণা দ্রুত কমিয়ে দেবে থকথকে জেলির মতো এক রকম পদার্থ। যে সে জেলি নয়। এমন এক আধার, যা তার পেটের ভিতর ওষুধ পুরে নিয়ে দৌড়বে শরীরের ঠিক যেখানে প্রদাহ হচ্ছে, ঠিক সেখানে। হাড়ে টিউমার গজাক বা ক্যানসার, এই জেল পৌঁছে যাবে যে কোনও জায়গাতেই। এমনটাই দাবি করেছেন কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা। রিউমাটয়েড ও অস্টিয়োআর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় জেল থেরাপি নিয়ে গবেষণা চলছে।
‘আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি’-র জার্নালে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, আর্থ্রাইটিসে শরীরের ভিতরে প্রদাহ সাঙ্ঘাতিক ভাবে বেড়ে যায়। এই প্রদাহ কমাতেই ওষুধ দেওয়া হয়। যদি ধরা পড়ে, হাড়ে টিউমার হয়েছে আর তা থেকে প্রদাহ হচ্ছে, তা হলে অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন হয়। অনেক ক্ষেত্রে হাড়েও ক্যানসার কোষের বিভাজন হয়, যা মারাত্মক। সে সব ক্ষেত্রে ওষুধ ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। তখন কেমোথেরাপি বা রেডিয়োথেরাপি দেওয়ার প্রয়োজন হয়। এই যাবতীয় সমস্যার সমাধান জেল দিয়ে হবে বলে দাবি করেছেন গবেষকেরা।
কেমব্রিজের বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ওষুধ খেলে বা শরীরে ইনজেক্ট করলে সেটি সঠিক জায়গায় যাচ্ছে কি না অথবা সুস্থ কোষগুলির ক্ষতি করে ফেলছে কি না, তা বোঝা যায় না। তাই কোনও ওষুধ এক জনের শরীরে কার্যকরী হলেও, অন্য জনের ক্ষেত্রে না-ও হতে পারে। এই জেলের এমন ত্রিমাত্রিক গঠন রয়েছে, যা ওষুধ তার ভিতর ভরে নিয়ে সরাসরি ব্যথার জায়গায় পৌঁছে যেতে পারে। সেখানে গিয়ে শরীরের পিএইচ ব্যালান্স মেপে ও প্রদাহের তীব্রতা বুঝে নির্ধারিত ডোজ়ে ওষুধটিকে বার করতে পারে। গবেষকেরা দাবি করেছেন, যে কোনও ধরনের ক্রনিক ব্যথা হোক, প্রদাহজনিত ব্যথা বা অস্টিয়োআর্থ্রাইটিস— এই জেল দিয়ে সব রকম যন্ত্রণার উপশম সম্ভব। জেল থেরাপি করলে সারা জীবন ওষুধ খেয়ে যাওয়ারও প্রয়োজন পড়বে না।
জেলটি কী ভাবে কাজ করবে, তা নিয়ে গবেষণা এখনও চলছে। সাফল্যের মুখও দেখা গিয়েছে। মানুষের শরীরে ট্রায়ালের পরে আরও নিশ্চিত ভাবে এর কার্যকারিতা বোঝা যাবে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।