ডেস্কে বসে কাজ ডেকে আনতে ‘মৃত্যু’! কী ভাবে ঠেকাবেন? ছবি : সংগৃহীত।
সেই কবে থেকে চিকিৎসকেরা বলে আসছেন, দীর্ঘ ক্ষণ একই ভাবে এক জায়গায় বসে থাকার অপকারিতার কথা। কিন্তু এ যুগে কাজের দুনিয়াটাই এমন যে, কম্পিউটার বা ল্যাপটপের সামনে থেকে সরার উপায় নেই!
যাঁরা বাড়ি থেকে ল্যাপটপের সামনে বসে কাজ করছেন, তাঁরা তো বটেই, যাঁরা অফিসের ডেস্কে বসে কাজ করছেন, তাঁরাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই জায়গায় বসে থাকছেন। ফলে শারীরিক সক্রিয়তা কমছে। তাতে স্বাস্থ্যের ক্ষতি তো হচ্ছেই, বিভিন্ন গবেষণা বলছে, মৃত্যুকেও এগিয়ে আনছে। তৈরি হচ্ছে ক্যানসার, হৃদরোগ, টাইপ টু ডায়াবিটিসের মতো নানা জটিল রোগের ঝুঁকি। প্রতিকার হিসাবে প্রতি ২০ মিনিট অন্তর অন্তত এক বার মিনিট তিন-চারেকের জন্য নিজের আসন ছেড়ে উঠতে বলছেন স্নায়ুরোগ এবং অস্থিরোগের চিকিৎসকেরা। কিন্তু কাজের চাপ মাথার উপর খাঁড়ার মতো ঝুলে থাকলে আসন ছেড়ে ২০ মিনিট তো দূর দু’-তিন ঘণ্টা পরও ওঠা হয় না অনেক সময়ে। তবে কি এই অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস থেকে মুক্তি নেই? অফিসের ডেস্কে বসে বসেই কি ধীরে ধীরে গুরুতর অসুস্থতা এবং তা থেকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাবেন?
এক হৃদ্রোগ চিকিৎসক অবশ্য অভয় দিয়ে বলছেন, মুক্তির উপায় আছে। তার জন্য শুধু কয়েকটি ভাল অভ্যাস তৈরি করতে হবে।
কোন কোন অভ্যাস তৈরি করতে বলেছেন চিকিৎসক?
মেডিসিনের চিকিৎসক তথা হৃদ্রোগের ওই চিকিৎসকর নাম জেরেমি লন্ডন। তিনি আমেরিকার সাভানার ক্যান্ডলার হাসপাতালের কার্ডিয়োথোরাসিক সার্জন। একই সঙ্গে ইনস্টাগ্রামেও নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তেমনই এক পোস্টে জেরেমি বলেছেন, কোন কোন অভ্যাস অফিসের ডেস্কে দীর্ঘ ক্ষণ বসে কাজ থেকে তৈরি হওয়া রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
১। বসে ব্যায়াম
ডেস্কে বসে কাজ করেও শরীর ভাল রাখার একটি অত্যন্ত ভাল উপায় হল ব্যায়াম। এমন অনেকগুলি ব্যায়াম রয়েছে। যার জন্য চেয়ার থেকে উঠতেও হবে না। তার মধ্যে একটি হল ‘হিল রেইজ়’। শুধু এই একটি ব্যায়াম নিয়মিত করলেই টাইপ টু ডায়াবিটিসের আশঙ্কা কমিয়ে নিতে পারবেন। এ ছাড়াও ‘শোল্ডার ব্লেড স্কুইজ়’, ‘চিন টাক’, ‘লোয়ার ব্যাক স্ট্রেচ’, ‘নেক স্ট্রেচ’— এর কোনওটিই করার জন্য চেয়ার ছেড়ে উঠতে হবে না।
২। ডেস্কে টিফিন নয়
প্রাতরাশ, জলখাবার এবং দুপুরের খাবার— কোনওটিই অফিসের ডেস্কে বসে খাবেন না। সুযোগ বা সুবিধা থাকলে এর জন্য একটি আলাদা জায়গা বেছে নিন। তাতে খাবার আগে এবং পরে একটু হলেও হাঁটাহাঁটি হবে।
৩। শ্বাস চর্চা
গভীর শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস করুন। দিনে অন্তত এক বার মিনিট পাঁচেকের জন্য গভীর শ্বাস নিন। চেষ্টা করুন সম্পূর্ণ মনযোগ ওই শ্বাস ছাড়া এবং নেওয়াতেই নিবদ্ধ রাখার।
৪। রিমাইন্ডার
ডেস্ক থেকে ওঠার কথা যদি মনে না থাকে, তবে প্রতি এক ঘণ্টা অন্তর মোবাইলে রিমাইন্ডার দিয়ে রাখুন। আট ঘণ্টা কাজ করলে অন্তত আট বার আসন ছেড়ে ওঠা হবে।
৫। একটি নিয়ম
কোনও একটি নিয়ম বানান। যেমন যত বার ফোন ধরবেন, তত বার আসন ছেড়ে উঠে যত ক্ষণ কথা বলছেন, তত ক্ষণ পায়চারি করবেন। কিংবা প্রতি বার ইমেল পাঠানোর পরে এক বার আসন ছেড়ে উঠবেন। আর সেই নিয়ম মন দিয়ে অনুসরণ করুন।
চিকিৎসক বলছেন, এই কয়েকটি নিয়ম মেনে চললেই অফিসে বসে থাকা কয়েকটি ঘণ্টা জটিল রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে না। বরং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে সাহায্য করবে।