প্রতীকী চিত্র। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
অতিমারির দিনগুলি মানুষের মনকে নানা ভাবে প্রভাবিত করেছিল। পাঁচ বছর আগে এক কঠিন সময় পেরিয়ে এসেছে সমাজ। কিন্তু অতিমারি তার রেশ রেখে গিয়েছে মানবদেহে। অতিমারি মানব মস্তিষ্কের বয়স (ব্রেন এজিং) বৃদ্ধি করেছে! সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় এ প্রসঙ্গে নানা তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে।
কী দাবি
অতিমারি মানব মস্তিষ্কে কী প্রভাব ফেলেছে, তা বোঝার জন্য একদল ব্রিটিশ গবেষক মানুষের মস্তিষ্কের স্ক্যান বিশ্লেষণ করেছেন। গবেষণার জন্য তাঁরা ২০২১ থেকে ২০২২— এক বছরের সময়কালকে বেছে নিয়েছিলেন। জানা গিয়েছে, এই সময়কালে মানুষের মস্তিষ্কের বয়স বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে মস্তিকের গঠনগত পরিবর্তনও সাধিত হয়েছে। গবেষণাপত্রটি ‘নেচার কমিউনিকেশন’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
জানা গিয়েছে, যাঁরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে গণনা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো বেশ কিছু কাজের গতি কমে এসেছে। ‘ইউনিভার্সিটি অফ নটিংহ্যাম’-এর গবেষক আলি রেজ়া মহমাদি নেজাদ বলেন, ‘‘মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের ক্ষেত্রে ক্ষতি বেশি হয়েছে। আবার যাঁরা সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির মানুষ, তাঁদের ক্ষেত্রেও মস্তিষ্ক উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রভাবিত হয়েছে।’’
পদ্ধতি
এই গবেষণার জন্য করোনা আক্রান্তদের মস্তিষ্কের স্ক্যানের সঙ্গে তুলনার জন্য ১৫ হাজার ৩৩৪ জন সুস্থ মানুষের স্ক্যানও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তার পর ৯৯৬ জন মানুষের মস্তিষ্কের দু’টি স্ক্যান বিশ্লেষণ করা হয়। দু’টি স্ক্যানের মধ্যে প্রায় ২ বছর তিন মাসের পার্থক্য ছিল। ৫৬৪ জনের প্রথম স্ক্যানটি করা হয় অতিমারির পূর্বে। বাকি ৪৩২ জনের দ্বিতীয় স্ক্যানটি অতিমারির সময়ে করা হয়। তার ফলে কী ভাবে মস্তিষ্কের পরিবর্তন ঘটেছে, তা গবেষকেরা শনাক্ত করতে পেরেছেন।
বয়সের সঙ্গে মানুষের মস্তিষ্কের আকার ছোট হয়ে আসে। কিন্তু সময়ের আগে তা ঘটলে সিদ্ধান্ত নেওয়া, স্মৃতি লোপ পাওয়ার মতো একাধিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। গবেষকেরা জানতে পেরেছেন, অতিমারির ফলে সার্বিক ভাবে মস্তিষ্কের সাড়ে পাঁচ মাস বয়স বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য দিকে, পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে সেই বৃদ্ধির গড় পার্থক্য আড়াই মাস।
কাদের ক্ষতি বেশি
এই পর্যবেক্ষণে কোনও নির্দিষ্ট কারণের অনুসন্ধান করা হয়নি। বরং সামাজিক বিভিন্ন পরিস্থিতিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মহমাদি বলেন, ‘‘নেপথ্যে অবসাদ, একাকিত্ব, আলস্য, দৈনন্দিন জীবযাত্রার পরিবর্তন সহ একাধিক কারণ রয়েছে।’’ এরই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘‘করোনা আক্রান্ত বা যাঁরা আক্রান্ত হননি, তাঁদের ক্ষেত্রেও অতিমারির একই প্রভাব দেখা গিয়েছে।’’
২০২৪ সালে ‘ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন’-এর তরফে অতিমারি এবং কিশোর মস্তিষ্কের উপর একটি সমীক্ষা করা হয়। সেখানে দাবি করা হয়, অতিমারির সময়ে কিশোরদের মস্তিষ্কের বয়স প্রায় ১.৪ বছর বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য দিকে, কিশোরীদের ক্ষেত্রে তা ছিল ৪.২ বছর।