কাঁধ ও ঊরুতে আলট্রাসাউন্ড করলেই আঁচ পাওয়া যাবে জটিল রোগের! ছবি: এআই।
ডায়াবিটিস হওয়া মানেই নিয়মে বেঁধে ফেলতে হবে জীবন। এটা খাওয়া যাবে না, সেটা খেলে রক্তে শর্করা বাড়বে, ওষুধ খেতে হবে, দরকারে ইনসুলিন ইঞ্জেকশন ফোটাতে হবে শরীরে— হাজারো ঝক্কি। ডায়াবিটিস নিরাময় হয় না, একে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। সারাটা জীবনই এই বোঝা বয়ে বেড়ানোর চেয়ে তো ভাল, রোগ আদৌ হবে কি না তা জেনে ফেলা। শুধু রক্ত পরীক্ষায় তা সম্ভব নয়। গোড়ায় গন্ডগোল ধরতে তাই নতুন আলট্রাসাউন্ড থেরাপি আসতে চলেছে।
ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্স ধরবে আলট্রাসাউন্ড
শরীরে ইনসুলিন হরমোনের মতিগতি গোড়াতেই চিহ্নিত করবে আলট্রাসাউন্ডের এক বিশেষ পদ্ধতি। আমেরিকার মিশিগান ইউনিভার্সিটির রেডিয়োলজি বিভাগের গবেষকেরা এই থেরাপি নিয়ে গবেষণা করছেন। প্রাথমিক ভাবে ২৫ জনের উপর আলট্রাসাউন্ড থেরাপিটি করা হয়। কাঁধ ও ঊরুর পেশিতে আলট্রাসাউন্ড করে দেখা হয়, শরীরে ইনসুলিন হরমোন ঠিক কী ভাবে কাজ করছে, হরমোনটির ক্ষরণে কোনও গোলমাল হচ্ছে কি না।
আসলে ডায়াবিটিসের কারণই হল ওই ইনসুলিন হরমোনের গন্ডগোল। ওই হরমোনটির ঘাটতি হলে বা তার কাজ করার ক্ষমতা কমে গেলে, তখন গ্লুকোজ জারিত হয়ে শক্তি তৈরি করতে পারবে না। ফলে রক্তে গ্লুকোজ জমা হতে থাকবে এবং রক্তে এর মাত্রা বেড়ে গিয়ে ডায়াবিটিস হবে। ‘ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্স’ এমন এক অবস্থা, যেখানে হরমোনটি কাজ করাই প্রায় বন্ধ করে দেয়। কোষে ইনসুলিন ঢোকার পথ সেটা বন্ধ হয়ে যায়। কোনও ব্যক্তির শরীরে ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্ট হলে পরবর্তীতে তার ডায়াবিটিস হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। মূলত টাইপ-২ ডায়াবিটিসই বেশি হয় এ ক্ষেত্রে।
এই ‘ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্স’ নিয়ে বিশ্ব জুড়েই গবেষণা চলছে। ডায়াবিটিস বা প্রি-ডায়াবেটিক রোগীকে চিহ্নিত করতে, ‘ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্স’ অন্যতম প্রধান উপায়। আগে থেকেই যদি শরীরে ইনসুলিনের এই গোলমাল ধরা পড়ে যায়, তা হলে ডায়াবিটিস হওয়ার আগেই ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। রোগটি সারা জীবন আর বয়ে বেড়াতে হবে না।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক স্টিভেন সলিম্যান জানিয়েছেন, নতুন আলট্রাসাউন্ড থেরাপিটি কাঁধ ও ঊরুর পেশিতে করা হবে। পেশির ভিতরে কী কী বদল আসছে, তা লক্ষ্য করা হবে। যদি ইনসুলিনের গোলমাল শুরু হয়ে যায়, তা হলে পেশির কোষে এমন কিছু বদল হবে, যা ধরা পড়বে ওই থেরাপিতে। তখন চিকিৎসক আগেই সাবধান করে দেবেন যে, ভবিষ্যতে ডায়াবিটিস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অতএব সাবধান হয়ে যেতে হবে। ৩০০ জনের উপর থেরাপিটি করা হয়। তাতে দেখা যায়, বেশির ভাগের শরীরে অজান্তেই ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্স তৈরি হয়েছে, যা ডায়াবিটিসের কারণ হয়ে উঠতে পারে। অতিরিক্ত মেদ, লিভারের রোগ, মদ্যপানের কারণে হরমোনটির কাজ করার ক্ষমতা অনেক কমে গিয়েছে। যদিও তার কোনও লক্ষণ প্রকাশ পায়নি, কিন্তু তলে তলে শরীরে বদল হয়ে চলেছে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, শরীরের ভিতরের কার্যকলাপ যদি আগে থেকে জানা যায়, তা হলে অনেক দুরারোগ্য ব্যাধি হওয়ার আগেই তার নিরাময় সম্ভব হবে।