টাইফয়েড নিয়ে কেন সতর্ক করছেন গবেষকেরা? কী লক্ষণ এই রোগের?
এক সময়ে বর্ষা এলে টাইফয়েডের প্রকোপ বাড়ত। কিন্তু এখন যে কোনও মরসুমেই হানা দিতে পারে জলবাহিত এই রোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র সমীক্ষা জানাচ্ছে, ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে টাইফয়েডের জন্য দায়ী সালমোনেল্লা টাইফি ব্যাক্টেরিয়া। এর নতুন নতুন প্রজাতি হানা দিচ্ছে। সালমোনেল্লার নতুন রূপ ঢুকেছে এ দেশেও। বার বার জিনগত মিউটেশনের (জিনের রাসায়নিক বদল) কারণে সেই সব রূপ আর ওষুধ বা টিকাতেও নাকি ধ্বংস হবে না।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে টাইফয়েডের প্রকোপ বাড়ছে। হু জানাচ্ছে, প্লেগের মতোই মারাত্মক এই রোগ। ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল অবধি নানা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, বাংলাদেশে সালমোনেল্লা টাইফির অন্তত সাড়ে তিন হাজার নতুন রূপ ছড়িয়েছে। আমেরিকা ও কানাডাতেও রোগ ছড়াচ্ছে এই ব্যাক্টেরিয়া। চিন্তার কারণ আরও রয়েছে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, টাইফয়েড সারানোর জন্য যে সব ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিক এত দিন দেওয়া হত, সেগুলি নাকি ওই হাজার তিনেক নতুন রূপকে ধ্বংস করতে সক্ষম নয়। টাইফয়েডের চেনা কিছু ওষুধ, যেমন, অ্যাম্পিসিলিন, ক্লোরামফেনিকলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ব্যাক্টেরিয়া। টিকাকে হার মানাতে পারে ব্যাক্টেরিয়ার নতুন রূপ। কাজেই এই ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আরও বেশি কার্যকারিতা সম্পন্ন টিকার প্রয়োজন। শুধু তা-ই নয়, এই ব্যাক্টেরিয়ায় আক্রান্ত হলে রোগের উপসর্গও তীব্রতর হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
টাইফয়েড নিয়ে কী ধরনের সতর্কতা জরুরি?
টাইফয়েড চট করে বোঝার উপায় নেই। রাস্তার খোলা খাবার, কাটা ফল, কাঁচা স্যালাড বেশি খেলে এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তা ছাড়া দূষিত জল থেকেও সংক্রমণ ছড়ায়। প্রত্যন্ত এলাকায় পুকুর, ডোবা বা জলাশয়ের জল দৈনন্দিন কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। ওই জলে গবাদি পশুকেও স্নান করানো হয়। আর পশুর শরীর থেকে জীবাণু, তাদের মলমূত্র বাহিত হয়ে জলে মেশে। সেখান থেকে রোগ ছড়ায়। টাইফয়েড খুবই ছোঁয়াচে। আক্রান্তের থেকে রোগ দ্রুত ছড়াতে পারে।
কী কী লক্ষণ দেখে চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
জ্বর বাড়বে। পেশিতে ব্যথা, পেশির খিঁচুনি ভোগাতে পারে।
পেটে অসহ্য যন্ত্রণা হবে, বমি, ডায়েরিয়ার লক্ষণ দেখা দেবে।
শরীরে জলশূন্যতা তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে, শিশুদের টাইফয়েড হলে এই লক্ষণ বেশি দেখা যায়।
অনেক রোগীর ক্ষেত্রে জন্ডিসের লক্ষণও দেখা দেয়। যদি দেখেন, টানা সাত দিনেও জ্বর কমছে না, পেটখারাপের ওষুধ খেয়েও কাজ হচ্ছে না, সেই সঙ্গে জন্ডিসের লক্ষণ ফুটে উঠছে, তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
টাইফয়েড থেকে সেরে উঠতে সুষম ও সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে মাসখানেক। বাঁধাকপি, ফুলকপি জাতীয় সব্জি এই সময়ে না খাওয়াই ভাল। ফাইবার বেশি আছে, এমন খাবার কিছু দিনের জন্য বন্ধ করতে হবে। কাঁচা স্যালাড একেবারেই খাবেন না।