প্রথম বার ঋতুস্রাবের সময়ে কঙ্গনার মানসিক অবসাদ। ছবি: সংগৃহীত।
প্রথম ঋতুস্রাব। বিস্ময়, হতাশা, কষ্ট, শারীরিক যন্ত্রণা- সব মিলিয়ে এক ধাক্কায় যাবতীয় কিছু বদলে যাওয়ার মতো ঘটনা এক মেয়ের জীবনে। প্রথম বারের কথা সাধারণত মনে রাখারই মতো। কারণ প্রথম বার শরীরে এমন এক পরিবর্তন হওয়া এবং সেটিকেই স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়ার মধ্যে থাকে এক লড়াই। আর পাঁচজনের মতোই অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌতের জীবনেও স্মরণীয় ছিল সে দিনটি। কিন্তু তা যে খুব সুখকর, তা নয়৷
সম্প্রতি একান্ত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলেন অভিনেত্রী। প্রথম বার ঋতুস্রাব হওয়ার যে স্বাভাবিক বয়স, তার বেশ পরেই প্রথম বার ঋতুস্রাব হয় কঙ্গনার৷ সময় মতো শরীরে পরিবর্তন না আসায় মা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। তখনও কঙ্গনা পুতুল নিয়ে খেলতে ভালবাসতেন। এক দিন হঠাৎ তাঁর মা এসে তাঁর সমস্ত পুতুল ছুড়ে ফেলে দেন৷ আর বলেন, “এই কারণেই এখনও তোমার ঋতুস্রাব হল না!” কিশোরী কঙ্গনার জন্য কঠিন অভিজ্ঞতা ছিল সেটি।
নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় হঠাৎ এক সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখেন বিছানার চাদর রক্তে ভিজে গিয়েছে। তিনি ভয় পেয়ে যান, কান্নায় ভেঙে পড়েন। বুঝতে পারার প্রথম যে প্রশ্নটি মাথায় আসে, ‘‘ঠিক এই ঘটনাটাই কি প্রতি মাসে হবে?’’ মা যদিও স্বস্তি পেয়েছিলেন, কঙ্গনার কাছে ঘটনাটি ছিল আতঙ্কজনক। সেই মুহূর্তে তাঁর মনে হয়েছিল, যেন রাতারাতি তিনি বড় হয়ে গিয়েছেন, এমনকি বাবার ভালবাসা বা মায়ের স্নেহ হারাবেন ভেবেও ভয় পেয়েছিলেন। নিজেকে অস্পৃশ্য, অপ্রিয় বলে মনে হতে থাকে তাঁর।
কঙ্গনার এই অকপট স্বীকারোক্তি শুধু তাঁর ব্যক্তিগত স্মৃতি নয়, বরং সমাজে ঋতুস্রাব নিয়ে লজ্জা ও ভয়ের আবরণ সরিয়ে খোলামেলা আলোচনার প্রয়োজনীয়তাকেও স্পষ্ট করে তোলে।
আর সেই সূত্র ধরেই মনোবিদ এবং অধ্যাপিকা আত্রেয়ী ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘কথাতেই বলে, তথ্যই আসল ক্ষমতা। আগামী দিনের যাপনের সঙ্গে যুঝে ওঠার জন্য সেই তথ্য আমাদের প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রেও তা-ই দেখা যাচ্ছে৷ যে প্রজন্ম, অর্থাৎ জেনারেশন আলফা এখন প্রথম ঋতুস্রাবের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবে বা হচ্ছে, তারা এখন দৈহিক এই পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এগুলি যে ঘটবে, সেই বিষয়ে আগে থেকে তাদের অবগত করে তোলা উচিত। আগের প্রজন্মের মতো ঋতুস্রাব নিয়ে ফিসফাস করলে বা ছুৎমার্গ নিয়ে বসে থাকলে এমন অভিজ্ঞতাকে অসহনীয়ই মনে হবে। কারণ, তাদের কাছে সম্পূর্ণ তথ্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে না।’’
মনোবিদ মনে করেন, জেনারেশন জ়েড এই বিষয়ে অনেক বেশি খোলামেলা হতে শিখেছে মিলেনিয়ালদের থেকে৷ তেমনই তিনি আশা করেন, জেনারেশন আলফা আরও বেশি স্পষ্ট ভাবে তাদের মনোভাব প্রকাশ করবে এবং একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করবে। তাতে ধারণা স্বচ্ছ হবে। দৈহিক পরিবর্তনের পাশাপাশি মানসিক পরিবর্তনকেও চিহ্নিত করতে পারবে, যা কঙ্গনাদের প্রজন্ম বা তাঁদের মায়েদের প্রজন্ম করে উঠতে পারেনি।