অহমদাবাদের হাসপাতালে ডিএনএ নমুনা দিল ২০০ পরিবার, কী ভাবে হচ্ছে পরীক্ষা? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
কোনও দেহ ক্ষতবিক্ষত। কারও অর্ধেক অঙ্গই নেই। কোনওটি এতটাই দগ্ধ যে, চেনার উপায় নেই। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের নাম-পরিচয় জানতেই নাভিশ্বাস উঠছে। অহমদাবাদ সিভিল হাসপাতালের সামনে স্বজনদের হাহাকার। কেউ এসেছেন গুরুতর জখম আত্মীয়ের জন্য। কেউ ঝলসে যাওয়া সন্তানের জন্য। বহু মানুষ আবার আপনজনকে কোনও দিন দেখতে পাবেন না জেনেই এসেছেন। দুর্ঘটনায় নিহতদের চিনতে প্রত্যেক পরিবারকেই বলা হয়েছে ডিএনএ নমুনা দিতে। অন্তত ২০০ পরিবারের তরফে নমুনা পাওয়া গিয়েছে বলে খবর। শুরু হয়েছে ‘ডিএনএ স্যাম্পলিং টেস্ট’।
ডিএনএ পরীক্ষা কী ভাবে হয়?
অপরাধের তদন্ত, পিতৃত্বের পরীক্ষা বা পরিচয় শনাক্তকরণের জন্য ডিএনএ নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সে ক্ষেত্রে পরিবারের লোকজনের দেহ থেকে লালা, চুল, ত্বকের কোষ অথবা তাঁদের ব্যবহার করা চিরুনি, টুথব্রাশ, পোশাকআসাক থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এ বার সেই নমুনার সঙ্গে মৃত বা নিহত ব্যক্তির দেহাংশ থেকে নেওয়া নমুনা মিলিয়ে দেখা হয়।
জিন বা ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) বংশগতির একক। শরীরের প্রতি কোষে এই ডিএনএ রয়েছে। প্রজননের সময়ে বাবা-মায়ের কাছ থেকে এই জিন ছেলেমেয়েদের মধ্যে চলে আসে। জিন থাকে ক্রোমোজ়োমে, একের পর এক সাজানো। মানুষের এক একটা ক্রোমোজ়োমে প্রায় ২০,০০০ জিন রয়েছে।এই জিনই নির্ধারণ করে কোনও প্রাণীকে কী রকম দেখতে হবে, তার স্বভাব কেমন হবে, কী ভাবে জীবনধারণ করবে ইত্যাদি। কাজেই জিনের গঠন ও বিন্যাস দেখেই সেই ব্যক্তির পরিচয় জানা সম্ভব।
ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য নানা রকম পদ্ধতি রয়েছে যেমন— পিসিআর (পলিমারেজ় চেন রিঅ্যাকশন) এবং ডিএনএ সিকুয়েন্সিং। জিনের বিন্যাস পরীক্ষার জন্য এই টেস্টগুলি করা হয়। ফরেন্সিক বিজ্ঞানীরা ‘শর্ট ট্যান্ডেম রিপিট’ (এসটিআর) পরীক্ষা করেন,যেটি দেহ শনাক্তকরণের জন্য খুবই কার্যকরী একটি পরীক্ষা। দেহ শনাক্তকরণ তো বটেই, দুর্ঘটনার সময়ে সেই ব্যক্তির অবস্থান কেমন ছিল, দুর্ঘটনার আগে বা পরে কতটা আঘাত লেগেছিল, এমন অনেক কিছুই ধরা পড়ে এই পরীক্ষায়। কোনও অপরাধের তদন্তের সময়ে অপরাধীর খোঁজ পেতে এই ধরনের পরীক্ষার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মীয়, পরিবার-পরিজনের থেকে নেওয়া ডিএনএ নমুনার সঙ্গে নিহতদের দেহাংশ থেকে নেওয়া নমুনা মিলিয়ে এই টেস্ট করা হচ্ছে।
এয়ার ইন্ডিয়ার এআই১৭১ বিমানে যাত্রী এবং বিমানকর্মী মিলিয়ে ২৪২ জন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ২৩০ জন ছিলেন যাত্রী। বেলা ১টা ৪০ নাগাদ ওড়ার কিছু ক্ষণের মধ্যে ওই বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। যেখানে বিমানটি ভেঙে পড়েছে, সেখানে অহমদাবাদ সিভিল হাসপাতালের পড়ুয়া এবং কর্মীরা থাকতেন। সেখানেও অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অন্তত ৫০ জনকে গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।