উর্ফীর মতো ফোলা ঠোঁটের বিপদ, লিপ ফিলার্সে কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে? —ফাইল চিত্র।
ফুলে ঢোল হয়েছে ঠোঁট। গাল-থুতনির পেশি ফুলেফেঁপে একাকার। নিদারুণ যন্ত্রণায় মুখ বিকৃত হয়ে যাচ্ছে উর্ফী জাভেদের। চোখে জল। লিপ ফিলার্স করিয়ে এক বার বিপদে পড়েছিলেন। এ বার তা সরাতে গিয়েও বিপদ। গোটা মুখই ফুলে জয়ঢাক হয়ে গিয়েছে। যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যেতে যেতে উর্ফী জানিয়েছেন, এমন আর কখনও করবেন না। বরং অনেক সূক্ষ্ম ও কম যন্ত্রণাদায়ক কিছু হলে তা প্রয়োগ করে দেখতে পারেন।
বলিউড থেকে টলিউড— নায়িকাদের ফোলা ঠোঁট, ফোলা গাল নিয়ে চর্চা চতুর্দিকে। সম্প্রতি উর্ফীর পরিণতি দেখে, এ নিয়ে চর্চা একটু বেশিই হচ্ছে। ঠোঁট পুরু করতে কেউ করাচ্ছেন বোটক্স, কেউ বেছে নিচ্ছেন ফিলার্স। ঠোঁটে সুচ ফুটিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকাও খসাচ্ছেন। উর্ফী যা করিয়েছেন, তার নাম ‘লিপ ফিলার্স’। যা এক ধরনের কসমেটিক প্রসেস, যাতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় না। কেবল একটি ইঞ্জেকশনই যথেষ্ট। সেই ইঞ্জেকশনে ভরা থাকে সিন্থেটিক হায়ালুরনিক অ্যাসিড। ঠোঁটে সুচ ফোটালে তা চামড়া ভেদ করে ঢুকে কোষের ভিতরে এক রকম থকথকে জেল ভরে দেয়। যাতে ঠোঁট ফুলেফেঁপে ওঠে। একে ফিলার্স ইঞ্জেকশনও বলা হয়। কে কতটা পুরু করবেন ঠোঁট, সেই বুঝে হায়ালুরনিক অ্যাসিডের ডোজ় ঠিক করা হয়। যদি এক বার সেই ডোজ়ের পরিমাণ এ দিক থেকে ও দিক হয়, তা হলেই বিপদ। হয় ঠোঁট ও তার আশপাশের এলাকা বেঁকেচুরে গিয়ে পুরোপুরি বিকৃত হয়ে যাবে। না হলে, উর্ফীর মতো ফুলে জয়ঢাক হয়ে যাবে ঠোঁট। তবে লিপ ফিলার্স ঠিকমতো হলে, ঠোঁট বেশ ভরাট দেখাবে, তার সূক্ষ্ম বলিরেখাগুলি দূর হবে। ঠোঁট নরম ও জেল্লাদারও দেখাবে।
লিপ ফিলার্স কি নিরাপদ?
লিপ ফিলার্সকে মোটেও নিরাপদ প্রক্রিয়া বলতে রাজি নন চিকিৎসকেরা। চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডল জানিয়েছেন, আগে মহিলাদের পাতলা ঠোঁটেরই আকর্ষণ ছিল। কিন্তু এখন পুরু, বেঢপ আকারের ঠোঁটই পছন্দ করছেন কমবয়সিরা। তারকাদের দেখাদেখি তা করতে গিয়ে বিপদেও পড়ছেন। ফিলার্স করাতে হলে তার খরচ বেশ ভালই। অভিজ্ঞ কারও কাছে করানোই জরুরি। না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। সামান্য ভুলচুক হলেই ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে?
১) ঠোঁট প্রচণ্ড ফুলে যাবে, যন্ত্রণা শুরু হবে।
২) ঠোঁটের রং বদলে যেতে পারে, ঠোঁট থেকে রক্তক্ষরণ হবে।
৩) ঠোঁটের কোষে এতটাই প্রদাহ হবে যে, নানা জায়গার মাংসপেশি ফুলে উঠবে। কেবল ঠোঁট নয়, তার চারপাশের পেশিতে টান ধরবে, গ্রন্থিগুলি ফুলে উঠবে।
৪) অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হতে পারে, এতে ঠোঁটে চুলকানি, র্যাশ হতে পারে।
৫) ঠোঁটের জায়গায় জায়গায় মাংসপিণ্ড ফুলে উঠবে, ভিতরে ছোট ছোট দানার মতো পিণ্ড তৈরি হবে। হায়ালুরনিক অ্যাসিড জমে থাকলে তা থেকে কোষের ক্ষতিও হতে পারে।
৬) ঠোঁটের ভিতরে রক্ত সঞ্চালন বাধা পাবে, ফলে রক্ত জমাট বাঁধতে থাকবে। এতে ঠোঁটের কোনায় গাঢ় রঙের কালশিটে পড়বে। সেখানে যন্ত্রণা শুরু হবে।
৭) ঠোঁটে হার্পিসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। যাঁদের কখনও পক্স বা হার্পিস হয়েছিল, তাঁদের সংক্রমণ ফিরে আসতে পারে।
৮) লুপাস বা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো রোগ থাকলে ফিলার্সের মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এর থেকে অটোইমিউন রোগ হতে পারে। স্নায়ুর অসাড়তা দেখা দিতে পারে।