বাইরের খাবারের লোভ ছাড়তেই পারেন না? শরীর কিন্তু ছেড়ে কথা বলবে না। ছবি: সংগৃহীত।
মনটা কেমন খাই খাই করছে? আজ রাবড়ি, কাল বিরিয়ানি, তরশু পিৎজ়া? ইচ্ছা হলে কি আর মনকে দুঃখ দেওয়া যায়? তাই নিয়মিত এটা-ওটা খাচ্ছেন। তা ছাড়া, আজ এই দোকানে এই অফার তো কাল অন্যটিতে, আবার ডেলিভারি অ্যাপ থেকেই বিশেষ ছাড়, এমন সুযোগ কে ছাড়ে?
রসনাতৃপ্তির জন্য খাবারের অভাব নেই। ভাজাভুজি থেকে জাঙ্ক ফুড, চাইনিজ় থেকে মোগলাই, আইসক্রিম থেকে মিষ্টি— আহা কী স্বাদ! এই স্বাদের গেরোয় যে নিঃশব্দে ক্ষতি হচ্ছে, তা টের পাচ্ছেন কী?
পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘ ইদানীং নানা কারণে খাদ্যাভ্যাসে বদল এসেছে। ছোট থেকে বড়— সকলেই প্রায় ভাজাভুজি, জাঙ্ক ফুড, রোল, বিরিয়ানি— এই ধরনের খাবারে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এই ধরনের খাবারগুলি সুস্বাদু হলেও এতে অত্যন্ত উচ্চ মাত্রায় ক্যালোরি থাকে, থাকে ট্রান্স ফ্যাট। তা ছাড়া, প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাটে পূর্ণ এই সব খাবারে ব্যবহার করা হয় রিফাইন্ড সুগার বা পরিশোধিত শর্করা, যেগুলির সব ক'টি স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। এতে যেমন ওজন বৃদ্ধির ভয় রয়েছে তেমনই হজমেও সমস্যা হতে পারে। দীর্ঘ দিন এই ধরনের খাবার খাওয়া হলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে পারে যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, এমনকি ক্যানসারও হওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়।’’
মুম্বইয়ের শল্যচিকিৎসক মনোজ জৈনের কথায়, ‘‘এই সব খাবারে পুষ্টিগুণ প্রায় কিছুই থাকে না। ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ— কোনওটাই মেলে না।’’ ফলে, যাঁরা বাড়িতে রান্না করা ঝক্কি বলে বাইরের খাবার খান বা যাঁদের বাইরের খাবার খাওয়ার প্রবণতা বেশি, তাঁদের সতর্ক হওয়া একান্ত জরুরি।
চিকিৎসক জানাচ্ছেন, ২০২০ সালে ‘বিএমসি পাবলিক হেলথ’ জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষালব্ধ ফল বলছে, বিপাকহারে এর প্রভাব পড়ে। যার ফলে রক্তচাপ কমতে বা বেড়ে যেতে পারে। তা ছাড়া, উচ্চ ক্যালোরির খাবার খেলে পেট-কোমরে মেদ বৃদ্ধির পাশাপাশি, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাও বেড়ে যেতে পারে। ডায়াবিটিস, হাইপারটেনশন, স্থূলত্ব, হার্টের অসুখের ঝুঁকি কয়েক গুণ বেড়ে যায় এতে।
আগেও কম-বেশি লোকে বাইরের খাবার খেতেন। কিন্তু অনলাইন ফুড ডেলিভারি অ্যাপের ফলে ঘরে বসে ১০ মিনিটে পছন্দের খাবার মেলে। তা ছাড়া, দোকানেও ‘রেডি টু ইট ফুড’ কেনার প্রবণতা বাড়ছে। এই ধরনের খাবার ২ থেকে ৫ মিনিটেই রান্না হয়ে যায়। ফলে ব্যস্ত জীবনে ‘বন্ধু’ হয়ে উঠছে এগুলি। কিন্তু এই সব খাবার নিয়েই সতর্ক করছেন পুষ্টিবিদ থেকে চিকিৎসকেরা।
শম্পা জানাচ্ছেন, বাইরের খাওয়ার থেকে বিপদ আসতে পারে নানা ভাবে। সেই খাবার কোথায় রাখা হচ্ছে, কী ভাবে রান্না হচ্ছে, তার উপর স্বাস্থ্যের বিষয়টি নির্ভর করে। অপরিচ্ছন্ন জায়গা বা সঠিক সংরক্ষণের অভাবে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। পেটের অসুখও হতে পারে। তা ছাড়া ছোট থেকে এই ধরনের খাবার খাওয়ার প্রবণতা অল্প বয়সেই ডায়াবিটিসের মতো অসুখের কারণ হয়ে উঠছে।
আর কী কী সমস্যা হয়?
· ভিটামিন, খনিজের অভাব দেখা দিতে পারে শরীরে। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট শরীর ভাল রাখতে অত্যন্ত কার্যকর। অথচ এর কোনও কিছুই পিৎজ়া, বার্গার, রোল, চাউমিনের মতো খাবারে মেলে না।
· এই সব খাবারে নুনের ভাগ বেশি থাকে। অতিমাত্রায় সোডিয়াম জাতীয় খাবার খেলে পটাশিয়াম, ক্যালশিয়ামের অভাব হতে পারে।
· ভিটামিনের ঘাটতি হতে পারে। পুষ্টি শোষণেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ক্ষতির মাত্রা অনেক বেশি। তবে তা বলে, কি একেবারেই খাওয়া যাবে না? চিকিৎসকেরা বলছেন, কোন ধরনের খাবার কিনে খাওয়া হচ্ছে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া পছন্দের খাবার একেবারে না খাওয়াটা সমাধান নয়। মাঝেমধ্যে, মাসে ২-৩ বার পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে।
একই সঙ্গে শম্পা বলছেন, ‘‘এই সমস্ত খাবারের ক্ষতিকর দিকগুলি নিয়ে ছোট থেকেই যদি সন্তানকে সচেতন করা দরকার। না হলে এমন খাদ্যাভ্যাস বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অনেক রকম সমস্যার জন্ম দিতে পারে।’’