মস্তিষ্কের ক্যানসার সারছে ওষুধে! গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
মস্তিষ্কের ক্যানসার মানেই আতঙ্ক। ব্রেনের কোষ ছিন্নভিন্ন হতে থাকে ভিতরে ভিতরে। ক্যানসার যদি তৃতীয় বা চতুর্থ পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তা হলে নিরাময়ের সম্ভাবনা প্রায় অসম্ভবই হয়ে পড়ে। শুধু রোগের তীব্রতা কমিয়ে রোগীর বেঁচে থাকার সময়কালটা আর একটু বাড়ানোর চেষ্টা করা হয় মাত্র। তবে এখন ইমিউনোথেরাপিতে সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করার চেষ্টা করছেন গবেষকেরা। মস্তিষ্কের ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিও নির্মূল করা সম্ভব একটি ওষুধে, এমনটাই দাবি করেছেন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন হসপিটালের গবেষকেরা। সেই ওষুধেই নাকি মস্তিষ্কের ক্যানসার সারিয়ে উঠেছেন ব্রেন ট্রটম্যান নামে বছর চল্লিশের এক ব্যক্তি। তবে ওষুধটির ট্রায়াল চলছে। সকলের ক্ষেত্রেই সেটি কার্যকরী হবে কি না, তা গবেষকেরা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি।
২০২২ সালে চল্লিশ বছর বয়সে মস্তিষ্কের ক্যানসারের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রূপ ‘গ্লিয়োব্লাস্টোমা’ ধরা পড়ে বেনের। রোগ শনাক্ত হতে হতে রোগীর অবস্থা প্রায় শেষ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছিল। গ্লিয়োব্লাস্টোমা ব্রেন টিউমারেরই একটি ধরন, যা প্রাণঘাতী। গ্লিয়োব্লাস্টোমার রোগীরা খুব বেশি দিন বাঁচেন না। আর এই টিউমার ধরাও পড়ে অনেক দেরিতে। তাই চিকিৎসা শুরু হতেও দেরি হয়। চিকিৎসকেরা বলেই দিয়েছিলেন, এ রোগ সারানো সম্ভব নয়। অস্ত্রোপচারে ঝুঁকি বেশি। রেডিয়োথেরাপি ও কেমোথেরাপিও যখন হার মানে, তখন ইমিউনোথেরাপির প্রয়োগ শুরু করেন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন হসপিটালের গবেষকেরা। বেনকে দেওয়া হয় একটি বিশেষ ওষুধ ইপিলিমুমাব। এটি এক ধরনের মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি, যা শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে চাঙ্গা করে তুলে শরীরকে শত্রু রোগগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ওই ওষুধের জোরেই বেন এখন সম্পূর্ণ রূপে ক্যানসার-মুক্ত বলে দাবি করা হয়েছে। স্বাভাবিক জীবনেও ফিরেছেন তিনি। এখন এক কন্যাসন্তানের পিতাও।
ক্যানসার চিকিৎসায় ক্রমেই জনপ্রিয়তা বাড়ছে ইমিউনোথেরাপি নামের এক চিকিৎসাপদ্ধতির। কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশনের বাইরে এই চিকিৎসা আশার আলো দেখাচ্ছে বহু ক্যানসার রোগীকে। রেডিয়োথেরাপি বা কেমোথেরাপিতে রোগীর যন্ত্রণা বাড়ে। ক্যানসার কোষগুলির পাশাপাশি সুস্থ কোষগুলিরও ক্ষতি হতে থাকে, ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তছনছ হয়ে যায়।
ইমিউনোথেরাপি রোগীর এই যন্ত্রণাকেই কমাতে সাহায্য করে। এই চিকিৎসাপদ্ধতিতে রোগীর শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বহু গুণে বাড়িয়ে তুলে ক্যানসার কোষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কাজ কেবল জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করাই নয়, কোষ ও কলাগুলি যাতে সুবিন্যস্ত, সুগঠিত থাকে তার উপর নজর রাখা। ক্যানসার হলে শরীরে কিছু কোষের স্বভাব, মতিগতি বদলে যেতে থাকে। তখন নজরদারির ওই পরিকাঠামো ভেঙে যায়। নিজের শরীরের কোষই বদলে গিয়ে শত্রু হয়ে যায়। তখন বাইরে থেকে ওষুধ, রেডিয়েশন দিয়ে সেই কোষগুলিকে নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা হয়। তাতে সুস্থ ও সবল কোষগুলিরও ক্ষতি হয়। ইমিউনোথেরাপি এই সব না করে বরং শরীরের প্রতিরোধের কাঠামোটিকেই নতুন করে সাজায়, যাতে প্রতিরোধী কোষগুলি আবার জেগে উঠে লড়াই করতে পারে। সেই কাজটিই ওই নতুন ওষুধটি করছে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে বেন একা নন, তাঁরই মতো মস্তিষ্কের ক্যানসারে ভুগছেন এমন অনেক রোগীকে বেছে নিয়ে তাঁদের উপরেও ওষুধটি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। যদি সকলের ক্ষেত্রেই সাফল্য আসে, তা হলে ক্যানসার-জয় করার নতুন দিশা পাওয়া যাবে বলেই আশা করা হচ্ছে।