খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে সারসত্যের সন্ধান পেয়েছেন খাদ্যরসিক বিশ্বনাথ বসু। ছবি : সংগৃহীত।
পর্দায় তিনি ধুতি পাঞ্জাবি পরা ডন হোন কিংবা মেজাজি দারোগা অথবা গদগদ প্রেমিক, অভিনেতা বিশ্বনাথ বসুর গোলগাল চেহারা ঠিকই মানিয়ে যায়। সেই তাঁকে এক ফিতে কাটার অনুষ্ঠানে দেখে তাক লেগে গেল। জিন্স আর সাদা টি-শার্টে এ কোন বিশ্বনাথ!
ঝরঝরে চেহারা। স্ফীতোদর, থুড়ি ভুঁড়ি প্রায় নেই বললেই চলে। গোলগাল ভাব কমে যাওয়ায় খানিক লম্বাও দেখাচ্ছে। ফাঁক পেয়ে প্রশ্ন করা গেল— ‘‘কী করছেন বলুন তো? এত রোগা লাগছে যে!’’ শুনে বিশ্বনাথ বললেন, ‘‘এখন আর অত খাই না। রুটিন পুরো বদলে ফেলেছি। তা না হলে বাঁচতে পারতাম না।’’
খেতে বরাবরই ভালবাসেন অভিনেতা। গত বছরেও দুর্গাপুজোয় আড়বেলিয়ায় গ্রামের বাড়িতে কব্জি ডুবিয়ে খাওয়াদাওয়ার গল্প শুনিয়েছিলেন। ‘কুমড়োর মলম’ দিয়ে লুচি, কচুরি-ছোলার ডাল, পাঁঠার মাংস, একাদশীতে বিউলির ডাল-পোস্তর সঙ্গে মুরগির ঝোল! আর তার সঙ্গে বিজয়ার মিষ্টিমুখে কদমা আর তাঁদের গ্রামের স্পেশ্যাল গজা। যা তাঁর মতে, ‘‘এক বার খেলে জীবনে ভোলা যাবে না’’। আদ্যোপান্ত খাদ্যরসিক সেই মানুষটা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন! প্রশ্ন করতে বিশ্বনাথ বললেন, ‘‘পুজোয় খাওয়াদাওয়া তো হবেই। কিন্তু এখন রাশ টানতে শিখে গেছি। ভাজাভুজি বন্ধ। মিষ্টি খেতে ভালবাসতাম। এখন মনে করে বলতেই পারব না শেষ কবে মিষ্টি খেয়েছি। পাঠার মাংস ছিল সবচেয়ে প্রিয় । সে-ও আর আগের মতো খাই না। মটন হলে এক পিস কি বড়জোর দুটো পিস। তবে মটনের ঝোলের আলুটা এখনও ছাড়তে পারিনি। ওটা এখনও খাই।’’
বিশ্বনাথের সারা দিনের খাওয়াদাওয়া এখন রুটিনে মোড়া। সকালে দিন শুরু করেন চিনি ছাড়া এক কাপ লিকার চা দিয়ে। তার সঙ্গে? অভিনেতা বলছেন, ‘‘আগে অনেকগুলো বিস্কুট খেতাম। এখন একটাও খাই না।’’ এর পরে প্রাতরাশ। তাতে বাঁধাধরা মেনু। বিশ্বনাথের কথায়, ‘‘আজ ধরুন ডালিয়া খেয়েছি। এক এক দিন দুধের সঙ্গে কর্নফ্লেক্স খাই। ফল খাই। মাঝেমধ্যে ২টো আটার রুটি আর অনেকটা সব্জিও খাই।’’
আগে দিনে দু’বেলা ভাত খেতেন। এখন তা-ও বন্ধ। থালায় ভাত রাখেন শুধু দুপুরেই, তা-ও খুব মেপেজুপে। অভিনেতা বলছেন, ‘‘আগে মন ভরে ভাত খেতাম, এখন শুধু পেট ভরার মতো খাই।’’
সারা দিনের রুটিনেও বদল এনেছেন। ইদানীং অনেক তাড়াতাড়ি রাতের খাওয়া খেয়ে নেন। খাবারের তালিকা থেকে শর্করাজাতীয় খাবার অর্ধেকেরও বেশি কমিয়ে ফেলেছেন। মিষ্টি বন্ধ। মাছ-ডিম খেতে বরাবরই ভালবাসতেন। ভালবাসেন ডাল খেতে। সেই সবই বেশি করে খাচ্ছেন। দিনে অন্তত একটা ফল এবং বেশি করে সবুজ শাকসব্জি খাওয়ার চেষ্টা করছেন। আর যেটা করছেন, তা হল এক্সারসাইজ়। প্রতি দিন সকালে অন্তত আধ ঘণ্টা করে। আর এই নিয়মানুবর্তিতার ছাপ পড়ছে চেহারাতেও। নতুন চেহারায় ভালই দেখাচ্ছে অভিনেতাকে।
কিন্তু হঠাৎ এই বদল কেন? বিশ্বনাথ জানাচ্ছেন, মাঝে হঠাৎই খুব ক্লান্তিবোধ করতে শুরু করেছিলেন। কোনও কাজেই উৎসাহ পাচ্ছিলেন না। শরীরও জানান দিচ্ছিল, সমস্যা হচ্ছে। তখনই জীবনযাত্রা বদলানোর সিদ্ধান্ত নেন।
আসলে অভিনয় যাঁদের পেশা, তাঁদের পর্দার কাজ ছাড়াও হাজার একটা কাজ করতে হয়। এই কোনও অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ রক্ষা করতে গেলেন, তো ওই ডাক পড়ল কোনও জলসায় বা ফিতে কাটার অনুষ্ঠানে। ছুটতে হয় সঙ্গে সঙ্গে। তার জন্য সুস্থ থাকা জরুরি। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখাও জরুরি। বিশ্বনাথ জানাচ্ছেন, একটু দেরিতে হলেও তিনি সেটা বুঝেছেন। আর বুঝেছেন একটি সারসত্য। সেটা কী? অভিনেতার জবাব— ‘‘খাওয়াটা প্রয়োজন নয়, প্রয়োজনের জন্য খাওয়া।’’