নারকেলের দুধ কি কোলেস্টেরল বেড়ে যায়? ছবি: সংগৃহীত।
চিংড়ির মালাইকারি হোক বা মুরগির মাংস, কিংবা নিরামিষ কোনও পদ— শেষ ধাপে একটু নারকেলের দুধ মিশিয়ে নিলেই বদলে যায় স্বাদ এবং গন্ধ। ১০০ গ্রাম নারকেলে ৩৫০ থেকে ৩৭০ ক্যালোরি মেলে। কার্বোহাইড্রেট থাকে ১৫ গ্রাম, ডায়েটরি ফাইবার মেলে ৯ গ্রাম, ফ্যাট ৩৩ গ্রাম, প্রোটিন ৩ গ্রাম। নারকেলের গুণাগুণ মেলে নারকেল পিষে তা থেকে বার করা দুধেও। এতে মেলে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। তবে কোলেস্টেরল থাকলেই যে নারকেলের দুধ খারাপ— এ কথা সরাসরি কোনও গবেষণা বলছে না। বরং কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা বলছে, নারকেলের দুধ শরীরের পক্ষে উপকারী এইচডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। আবার মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া, অনিয়ম, ব্যক্তিগত বিপাক হারের উপরেও এর ভাল-মন্দ নির্ভর করে।
উপকারী এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরল
কোলেস্টেরল মানেই তা কিন্তু শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। শরীরে বেশ কিছু উপকারী কোলেস্টেরলও থাকে। এই কোলেস্টেরলকে হাই ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন (এইচডিএল) বলা হয়। এটি খারাপ কোলেস্টেরলকে শোষণ করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখে। হৃদ্রোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। তাই শরীরে এইচডিএল-এর সঠিক মাত্রা বজায় রাখা জরুরি।
আবার রক্তে থাকা ‘এলডিএল’ বা লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন-কেই খারাপ কোলেস্টেরলের তালিকাভুক্ত করা হয়। কারণ, রক্তে এই কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে হার্টের ধমনীতে ‘প্লাক’ তৈরি সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ফলে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়তে থাকে।
‘পাবমেড’-এ প্রকাশিত ২০১৩ সালের একটি পরীক্ষালব্ধ ফলাফল থেকে জানা যাচ্ছে, নারকেলের দুধ খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং উপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ১৮-৫৭ বছর বয়সি ৬০ জনের উপর পরীক্ষাটি করা হয়েছিল। সপ্তাহে ৫ দিন তাঁদের নারকেলের দুধ দিয়ে রান্না করা পরিজ খেতে দেওয়া হয়। ৮ সপ্তাহ খাওয়ার পরে পরীক্ষায় এমন ফলাফল প্রকাশ্যে আসে।
যথেচ্ছ খাওয়া ঠিক নয়
নারকেলের দুধ ভাল হলেও, নিয়মিত এবং মাত্রাতিরিক্ত খেলে ঝুঁকিও রয়েছে। কারণ, এতে ফ্যাটের পরিমাণ যথেষ্ট। সুতরাং পরিমিত না খেলে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা এতে বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষত এর উপকারিতা বা অপকারিতা নির্ভর করে ব্যক্তিবিশেষের বিপাকহার এবং শরীরের উপর।
হার্ট-বান্ধব ডায়েটে কী ভাবে জুড়বেন?
· কোলেস্টেরলের সঙ্গে হার্টের গভীর যোগ। হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে হলে, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। সে কারণে নিয়মিত না খেয়ে মাঝেমধ্যে নারকেলের দুধ খাওয়া যেতে পারে।
· নারকেলের দুধে চিনি মেশালে তা তেলমশলাদার মুরগি মাংস বা মাছে তা জুড়লে উপকারিতা পাওয়া সম্ভব নয়। এতে বরং স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। হার্টের রোগীর জন্য তা উপযোগী নয়।
· স্যুপ, কম তেল মশলার তরকারি, স্মুদিতে নারকেল দুধ মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। চিনি ছাড়া খেজুর, কিশমিশ দিয়ে নারকেলের দুধের পায়েস বানানো যেতে পারে। এগুলি স্বাস্থ্যকর।