দুশ্চিন্তা ও অবসাদ কাটানোর সহজ কিছু উপায়। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। হাজারটা চিন্তা এসে ভিড় করল মাথায়। কর্মক্ষেত্রে কাজের চিন্তা থেকে পরিবারের নানা চিন্তা, এমনকি সারা দিনের খারাপ লাগাগুলোও একে একে এসে ঘিরে ধরল আষ্টেপৃষ্ঠে। এতে ঘুম নষ্ট তো হলই, শরীর ও মন আরও ক্লান্ত-বিধ্বস্ত হয়ে উঠল। এমন হাজারো চিন্তা প্রতিনিয়ত মাথায় ঢেউয়ের মতো উঠছে-নামছে। চিন্তার এই দুলুনিতে জন্ম ‘স্ট্রেস’ বিষয়টির, যার দৌলতে মন ভারাক্রান্ত হচ্ছে, কোনও কারণ ছাড়াই মনখারাপ হচ্ছে, অহেতুক উত্তেজনা, যখন তখন ভীষণ রাগও হচ্ছে। লাগামহীন প্রতিযোগিতা, ব্যর্থতার ভয় মনকে অশান্ত করে তুলছে প্রতি মুহূর্তে। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?
অনেকেই বলবেন যে, দুশ্চিন্তা কাটানো সহজ কথা নয়। চিন্তার জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টাই বৃথা। স্থির হয়ে বসে মেডিটেশন করার সময়েও নানা চিন্তা কিলবিল করে মাথায়। তবে দুশ্চিন্তাও কাটানো যায় কয়েক মিনিটে, কী ভাবে তা সম্ভব, তা নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ‘হার্ভার্ড হেল্থ’-এ। সেখানে গবেষকেরা জানাচ্ছেন, মনকে ধরেবেঁধে রাখার উপায় আছে, তবে তা মেনে চলতে হবে। কী রকম?
পছন্দের মানুষের সঙ্গে সময় কাটান। মন যতই খারাপ থাক, কখনওই একা থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করবেন না। বরং আর পাঁচজনের সঙ্গে থাকুন। পরিবারের লোকজন বা বন্ধুদের ডেকে গল্প করুন। মন ভাল না থাকলে মেলামেশা করার ইচ্ছা থাকে না। তবে গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ওই সময়ে একা থাকার ইচ্ছাই অবসাদ আরও বাড়িয়ে তোলে। বিরক্তি ভাবও বাড়ে। আশপাশে কাউকে না পেলে ফোনে কথা বলুন, তাতেও মন ভাল হয়ে যাবে।
মনখারাপ হলেই মেডিটেশন করার পরামর্শ দেন অনেকে। তবে ওই সময়ে মন স্থির না-ও হতে পারে। নীরবে চোখ বন্ধ করে বসলে বরং চিন্তাভাবনা আরও বেশি ঘিরে ধরে। তার চেয়ে প্রকৃতির মাঝে থাকার চেষ্টা করুন। বাইরে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করুন। গাছপালা রয়েছে, এমন জায়গায় থাকার চেষ্টা করুন। মন ভাল হবেই।
মানসিক চাপ কাটাতে ফোনে একটানা রিল দেখার অভ্যাস মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। তার চেয়ে লেখালিখি করার পরামর্শ দিচ্ছেন গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, চিন্তা আসবেই। তাই ওই সময়ে অন্য চিন্তাও করুন। সারা দিন কী করলেন, অথবা ছোটবেলা কেমন কেটেছিল, আগামী দিনের পরিকল্পনা কী, এই সব ভেবে লিখে ফেলুন। যত ক্ষণ লিখছেন, তত ক্ষণ মন সে দিকেই থাকবে। টানা ১০ মিনিট লিখলে দুশ্চিন্তা আর মাথাতেই আসবে না।
কেবলমাত্র দায়দায়িত্ব বা কাজকর্ম থেকেই যে মানসিক চাপ তৈরি হয়, তা নয়। চারপাশের সম্পর্কগুলি থেকেও প্রচণ্ড অস্থিরতা ও উদ্বেগ তৈরি হতে পারে। কর্মক্ষেত্রে বা পরিবারের লোকজনের সঙ্গে সম্পর্কের রসায়ন মনের উপর প্রভাব ফেলে। প্যারানয়েড ব্যক্তিত্বের মানুষ প্রচুর আছেন সংসারে৷ যাঁরা অন্যদের ব্যঙ্গ–বিদ্রূপ করে আনন্দ পান৷ তেমন মানুষকে এড়িয়ে চলুন বা উপেক্ষা করতে শিখুন। রাগ পুষে রাখলে মানসিক কষ্ট আরও বাড়বে।কারও উপর খুব রাগ হলে বা মন ক্লান্ত লাগলে মিনিট দশেক সময় নিয়ে টান টান হয়ে বসে গভীর ভাবে শ্বাস নিন ও ছাড়ুন। এই প্রক্রিয়ায় মন একটু শান্ত হবে। মনের ক্লান্তি কাটানোর অন্যতম ভাল উপায় হল প্রাণায়াম।
ক্রসওয়ার্ড, সুদোকু, হিতোরি ইত্যাদি নানা ব্রেনগেম খেলতে পারেন। সেগুলি খেললে সময় তো কাটবেই, মাথাও খেলবে ভাল। সঙ্গী পেলে দাবা, লুডো ইত্যাদি বোর্ডগেম নিয়েও বসে পড়তে পারেন। তাতেও মন ভাল হবে।