বেশি ডাল খেলে শরীরে কী প্রভাব পড়তে পারে? ছবি: সংগৃহীত।
গুরুজনেরা বলেন, ‘‘কোনও কিছুই অতিরিক্ত ভাল নয়।’’ সে কথাই বোধ হয় বার বার প্রমাণিত হচ্ছে। অনেকেই ওজন কমানোর জন্য ডায়েটে ভাত-রুটি কমিয়ে ডাল ও তরকারির পরিমাণ বাড়িয়ে নেন। ওজন কমানোর জন্য অনেকাংশে সেরা ডাল। অন্য দিকে সব্জিতেও প্রচুর ফাইবার, নানাবিধ পুষ্টিগুণ। কিন্তু এখানেই ফাঁক রয়ে যাচ্ছে। ডাল আর সব্জি খাওয়ার সময়ে পরিমাপবোধ না থাকলে এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। বিশদ জানালেন মেডিসিনের চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডল।
কতটা ডাল আর কতটা সব্জি খাওয়া উচিত?
চিকিৎসক বলছেন, ‘‘৬০ কেজি ওজনের এক প্রাপ্তবয়স্কের ক্ষেত্রে ৬০ থেকে ৭০ গ্রাম প্রোটিন খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু যদি কিডনির সমস্যা থেকে থাকে, বা কারও যদি ডায়ালিসিস চলে, তা হলে এই পরিমাপ একেবারে বদলে যাবে। আসলে এক দিনে দু’টি মাছ খেলেই মোট ৪০ গ্রাম প্রোটিনের চাহিদা মিটে যাচ্ছে। তার মানে ডালের পরিমাণ এর পর আর বেশি হলে চলবে না।’’ অন্য দিকে, সব্জি ৩০০-৪০০ গ্রাম মতো খাওয়া যায় এক দিনে।
অতিরিক্ত সব্জি খেলে হজমপ্রক্রিয়ায় সমস্যা হতে পারে। ছবি: সংগৃহীত।
এর থেকে বেশি খেলে কী প্রভাব পড়তে পারে?
অতিরিক্ত ডাল, বিশেষ করে মুগ এবং মুসুর রান্না করার সময়ে অনেক ক্ষেত্রে তেল, ঘিয়ের পরিমাণ বেশি হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে ক্যালোরি বেড়ে যায় পদের। পাশাপাশি কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমানোর জন্য ডাল খান অনেকে। কিন্তু ডালেও কার্বোহাইড্রেট থাকে। আর সেই কার্বোহাইড্রেটের একটি অংশ হল অলিগোস্যাকারাইড নামক একটি উপাদান। সব মিলিয়ে উল্টে ওজন বেড়ে যায়। অতিরিক্ত ডাল খেলে এই অলিগোস্যাকারাইডের কারণেই বদহজম হয়। গ্যাস বা পেটফাঁপার মতো সমস্যাও দেখা দেয়। চিকিৎসকের কথায়, ‘‘রোগীদের শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে আমরা মুসুর ডাল খেতে নিষেধ করি। কারণ মুসুর ডালে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যেতে পারে। কিডনির রোগীরা এবং ডায়াবিটিকেরা বুঝেশুনে ডাল খাবেন।’’
একই ভাবে অতিরিক্ত সব্জি খেলে হজমপ্রক্রিয়ায় সমস্যা হতে পারে। উচ্চ ফাইবার পেটফাঁপা, গ্যাস এবং বদহজমের কারণ। চিকিৎসক বলছেন, ‘‘এখনকার কৃষিব্যবস্থায় রাসায়নিক সার দেওয়া হয় বলে এমনিতেই বেশি সব্জি খাওয়া যায় না। উপরন্তু এতে থাকে উচ্চ ফাইবার। আর তার উপর বেশি বেশি সব্জি খেলে সেই ফাইবারগুলি অন্ত্রে গিয়ে জমা হয়। আর সেই জমে থাকা ফাইবারের উপর ব্যাক্টেরিয়ার জন্ম হতে থাকে। ফলে অন্ত্রের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। অন্ত্র ভাল না থাকলে আলসারের প্রবণতা তৈরি হয়। আর এই অবস্থা গুরুতর হয়ে গেলে ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যাবে।’’
কী ভাবে খেলে কুপ্রভাব কম পড়বে?
ডাল রান্নায় বদল আনতে হবে। রান্না করার আগে শুকনো ডাল অনেক ক্ষণ জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তাতে আদা, হিং, জিরের মতো মশলা মেশাতে পারেন। ব্রাউন রাইস বা কিনোয়া অথবা অল্প পরিমাণে ভাতের সঙ্গে মেখে খেলে উপকার মিলবে।
সব্জি রান্নায় বেশি তেল, ঘি দিলে চলবে না। এতে ক্যালোরি বেড়ে গিয়ে উল্টে ক্ষতি হবে। অল্প তেলে সব রান্না করা দরকার। অল্প তেলে, কম রান্না করলেই তাতে পুষ্টিগুণগুলি বজায় থাকে।
কেবল ডাল আর সব্জির উপর নির্ভরশীল খাদ্যাভ্যাস হলে শরীরে পুষ্টিগুণের ভারসাম্য রক্ষা হবে না। ডায়াবিটিস, কিডনির রোগ, থাইরয়েডের মতো রোগে আক্রান্তদের জন্য এই পরিমাপবোধ সবচেয়ে বেশি জরুরি।