কোরিয়ার মানুষেরা কী ভাবে স্বাস্থ্য রক্ষা করেন? ছবি: সংগৃহীত।
আমেরিকা থেকে ভারতবর্ষ, নতুন প্রজন্মের উপর দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতির প্রভাব বেশ উল্লেখযোগ্য। তা সে কে-পপ অর্থাৎ গানবাজনা হোক, কে-ড্রামা বা ওয়েব সিরিজ হোক, তাঁদের ত্বকচর্চার রুটিন বা খাদ্যাভ্যাস অথবা ফিটনেসই হোক, দক্ষিণ কোরিয়া নিয়ে মাতামাতি চলছে পৃথিবীর একাধিক দেশে। কোরিয়ান গ্লাস স্কিন নিয়ে অনেকেই পরীক্ষানিরীক্ষা করে নিয়েছেন, এ বার পালা তাঁদের ফিটনেস সম্পর্কে জানার। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, কোরিয়ার মানুষেরা কী ভাবে স্বাস্থ্য রক্ষা করেন? কেমন তাঁদের জীবনধারা? তাঁদের সুস্থতার চাবিকাঠি কী?
খাদ্যাভ্যাস: কোরিয়ার খাদ্যাভ্যাসের ঝলক তো এখন কলকাতা শহরে মোড়ে মোড়ে পাওয়া যায়। কিমচি, কিমবাপ, বিবিমবাপ, রামেন, এ ধরনের খাবার চেখে দেখলেই বুঝবেন, তেলমশলার আধিক্য নেই। বরং মজানো খাবারের প্রতিই প্রীতি বেশি। কোরিয়ার খাবারের মূলমন্ত্রই হল, প্রচুর সব্জি, কম রান্না, কম তেলমশলা। যেমন কিমচি বানানো হয় সব্জি (চিনা বাঁধাকপি আর কোরিয়ান মূলো) মজিয়ে। প্রোবায়োটিক, ভিটামিন এ এবং সি, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ভরপুর এই পদে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, হজমে সুবিধা হয়। তেমনই বিবিমবাপ-এ মিক্সড রাইসের উপর ডিম ভাজা, প্রচুর সব্জি, একটু মাংস আর সস দেওয়া হয়। প্রোটিন, ফাইবার, খনিজের দুর্দান্ত উৎস এই পদটি। অর্থাৎ মূল খাওয়াদাওয়া যেমনই সুস্বাদু, তেমনই স্বাস্থ্যকর এবং কম ক্যালোরির।
সামান্য তেলে ভাজা, ভাপানো, সেদ্ধ করা, গ্রিলড রান্নাই প্রধানত পছন্দ কোরিয়ানদের। ছবি: সংগৃহীত।
মাইন্ডফুল ইটিং: কোরিয়ার মানুষেরা নিজেদের খাদ্যাভ্যাসে মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন করেন। তাঁরা খাওয়ার সময়ে ওই মুহূর্তের প্রতি মনোযোগী হন। যাঁরা একা থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রে বিষয়টা আলাদা, কিন্তু বড় পরিবারে সকলে মিলে একসঙ্গে রকমারি পদে টেবিল সাজিয়ে খাওয়াদাওয়া করেন। আর সে সময়ে টিভি দেখা বা ফোন দেখার মতো অভ্যাস বর্জন করার চেষ্টা করা হয় বড় পরিবারে। হজমপ্রক্রিয়ায় সাহায্য করে এই ধরনের অভ্যাস।
চিনিযুক্ত পানীয় এড়ানো: সোডা বা চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে যান তাঁরা। বরং বার্লির জল খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে অনেক বাড়িতে। যেটিকে সে দেশে ‘বোরি-চা’ বলা হয়। ক্যাফিন-মুক্ত, কম ক্যালোরিযুক্ত এই পানীয় অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ভরপুর।
হাঁটাচলার উপর অনেকটা নির্ভরশীল কোরিয়ানদের জীবন যাপন। ছবি: সংগৃহীত।
স্বাস্থ্যকর উপায়ে রান্না করা: সামান্য তেলে ভাজা, ভাপানো, সেদ্ধ করা, গ্রিলড রান্নাই প্রধানত পছন্দ কোরিয়ানদের। ফ্যাট এবং তেলের প্রয়োগ কম রেখে হালকা রান্না-নির্ভর খাওয়াদাওয়া করেন কোরিয়ানরা।
শরীরকে সক্রিয় রাখা: হাঁটাচলার উপর অনেকটা নির্ভরশীল কোরিয়ানদের জীবন যাপন। গাড়িঘোড়ার কি অভাব রয়েছে সে দেশে? তা তো নয়। কিন্তু নিজেদের শরীরকে সক্রিয় রাখার জন্য শহর এবং শহরতলিতেও স্থানীয়রা হাঁটাচলা করে, কায়িক শ্রম করে দিন কাটান। তা ছাড়া বাড়ির কাজ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিজেরাই করেন তাঁরা।
কোরিয়ানদের খাবারে সব্জির আধিক্য, তেলের কম প্রয়োগ ওজন কমানো ছাড়াও হার্টের নানাবিধ রোগ, ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরলকে দূরে রাখতে পারে। হজমপ্রক্রিয়া উন্নত করে বিপাকের হার বৃদ্ধি করতে পারে। ফলে সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভাল থাকে।