ভারী শরীরচর্চা করেও ওজন বেড়ে যেতে পারে, কেন এমনটা হয়? ছবি: শাটারস্টক।
ভাইফোঁটার পর্ব মিটতেই অনেকেই ডায়েট শুরু করেছেন। দুর্গাপুজোর সময় থেকে যে হারে ভূরিভোজ চলেছে তা কমাতে হবে তো! অনেকেই আছেন যাঁরা সবে ডায়েট করা শুরু করলেও, সুযোগ পেলেই ওজন মেশিনে উঠে পড়েন। কতটুকু ওজন কমল, তা দেখার কৌতূহল সকলেরই থাকে। কিন্তু সমস্যা হল, যেখানে যত বার ওজন মাপছেন, প্রত্যেক জায়গাতেই এক এক রকম সংখ্যা ফুটে উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে ওজন যদি বেশি দেখে অনেকেরই মনে হয় যন্ত্রটির কোনও দোষ রয়েছে। আবার কম দেখালে মনে এতটাই আনন্দ হয় যে, ডায়েট ভুলে আইসক্রিম খেয়ে ফেলার কথা ভাবেন। তবে চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদ সকলেই বলেন, ওজন মাপার কিন্তু নির্দিষ্ট সময় এবং পদ্ধতি আছে।
ফিটনেসবিদেরা বলছেন, ওজন মাপার জন্য আদর্শ সময় হল সকালবেলা। ঘুম থেকে ওঠার পর ওজন মেপে নেওয়া ভাল। তখন ওজন মাপলে দেহের বাড়তি ওজন আসার সম্ভাবনা কম। কিন্তু সেই নিয়ম মানলেও অনেক সময় দেখা যায় এক দিনেই আপনার ওজন ২ কেজি বেড়ে গিয়েছে! মেশিন সেই কঠিন সত্য প্রকাশ্যে আনতেই পারে। তার মানে কি ওজন মাপার যন্ত্রটি বদলের সময় এসেছে? তমন্না ভাটিয়ার ফিটনেস প্রশিক্ষক সিদ্ধার্থ সিংহ বলেন, ‘‘আগের দিনই আপনি ওজন মেপেছিলেন আর পরের দিন আবারও ওজন মাপতে গিয়ে দেখলেন ২ কেজি বেড়ে গিয়েছে, এমনটা হলে কিন্তু হতাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই। কেবল ফ্যাট নয় এই ওজন বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে থাকতে পারে ৬টি মূল কারণ।’’
১) সকালে উঠে প্রাতকৃত্য না সেরেই ওজন মাপার যন্ত্রে উঠে দাঁড়ালে ওজন বেশি আসতেই পারে। তাই ঘুম থেকে উঠে প্রাতকৃত্য সেরেই ওজন মাপুন।
২) আগের দিন রাতে অতিরিক্ত নোনতা খাবার কিংবা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খেয়ে থাকলেও এমনটা হতে পারে। সোডিয়াম শরীরে জলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, আর সেই কারণেও ওজন বেশি দেখাতে পারে। একই সমস্যা হতে পারে রাতে বেশি মাত্রায় ভাত, রুটি, মিষ্টি খেয়ে নিলেও।
৩) রাতে ভাল ঘুম না হলে সেই প্রভাবও পড়তে পারে শরীরের উপর। ঘুম না হলে শরীরে প্রদাহ তৈরি হতে পারে, যার ফলে ওজন বেড়ে যায় এবং ওজন মাপার যন্ত্রেও ওজন বেশি দেখায়।
৪) ঋতুস্রাবের সময় ওজন মাপলে কিন্তু সাধারণ দিনের থেকে বেশি দেখানো স্বাভাবিক। এই সময়েও শরীরে প্রদাহ হয়, যার প্রভাব পড়ে ওজনে।
৫) অতিরিক্ত শরীরচর্চা করলেও শরীরে প্রদাহ হয়, শরীর ফুলে থাকে। তাই আগের দিন অতিরিক্ত শরীরচর্চার পরের দিন ওজন মাপতে গেলে ওজন বেশি দেখাতেই পারে।
ফিটনেসবিদেরা বলছেন, ওজন মাপার জন্য আদর্শ সময় হল সকালবেলা। ছবি: সংগৃহীত।
কী ভাবে ওজন মাপলে সঠিক ফল আসবে?
১) সপ্তাহে একবার ওজন মাপা ভাল। প্রতি দিন যে কোনও সময়ে মাপতে শুরু করলে তা মানসিক চাপ ও উদ্বেগ আরও বাড়াবে। রোজ মাপতে গেলে দেহের প্রকৃত ওজন সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া একটু সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, জল খাওয়ার পরিমাণ একটু বেশি হয়ে গেলেও তা দেহের মোট ওজনের উপর প্রভাব ফেলে। রাতে কী খাচ্ছেন, তার উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করে। আগের দিন রাতে কার্বহাইড্রেট জাতীয় খাবার বেশি খেলেও পরের দিন ওজন বেড়ে যেতে পারে।
২) সকালে প্রাতকৃত্য সেরে খালি পেটে ওজন মেপে নিলে ভাল হয়। জল, চা, কফি কিংবা ওষুধ খাওয়ার আগেই ওজন মেপে ফেলা উচিত।
৩) ওজন মাপার একটি নির্দিষ্ট সময় স্থির করে নিন। প্রতি বার ওজন মাপার সময় কিছু কথা মাথায় রাখতে হবে। যেমন ধরুন, জুতো খুলে ওজন মাপুন, একটি যন্ত্রই ব্যবহার করুন, একই ধরনের পোশাক পরুন।
৪) প্রতি সপ্তাহে কতটা কমছে বা বা আদৌ কিছু কমছে কি না সেই হিসাব রাখুন নিজের কাছে। প্রয়োজনে স্মার্ট অ্যাপের সাহায্য নিতে পারেন।
৫) সপ্তাহান্তের পরে সোমবার ওজন মাপতে যাবেন না। ছুটির দিনে খাওয়াদাওয়ার হেরফের হয়ই, কাজেই পর দিনই ওজন মাপতে গেলে তা বেশি দেখাবেই।