বয়স পঞ্চাশ পেরোলে ঠিক কতটুকু ব্যায়াম করা স্বাস্থ্যকর? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন গোবিন্দ। মাথা ঘোরা, ঝিমুনি, বুকে ব্যথা নিয়ে হঠাৎই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় ৬১ বছরের অভিনেতাকে। ছাড়া পেয়েই গোবিন্দ জানিয়েছেন, প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরিশ্রম শুরু করেছিলেন। ফিটনেস বৃদ্ধি করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শারীরিক কসরতও করতেন। এই বয়সে এত বেশি ব্যায়ামের ধকল সহ্য হয়নি। তাই আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
শরীরচর্চা ভাল, তবে কোন বয়সে কতটা জরুরি তার সুনির্দিষ্ট মাপকাঠি আছে। অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ষাটের কোঠায় পৌঁছেও নিয়মিত জিম করেন। সমাজমাধ্যমের পাতায় অনেককেই স্ট্রেংথ ট্রেনিং বা কার্ডিয়ো করতে দেখা যায়। তবে তা কি সকলের জন্যই প্রযোজ্য?
শরীরচর্চার যেমন ভাল দিক আছে, তেমনই প্রয়োজনের অতিরিক্ত করলে তা ক্ষতির কারণও হয়ে উঠতে পারে। এমনই জানিয়েছেন ফিটনেস প্রশিক্ষক অনুপ আচার্য। তিনি বলেন, "বয়স পঞ্চাশ পেরিয়ে গেলে শরীরচর্চা করার সময়ে কিছু নিয়ম মানতে হয়। হঠাৎই একদিন মনে হল যে ফিটনেস বাড়িয়ে তুলতে ব্যায়াম শুরু করবেন এবং জিমে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কার্ডিয়ো শুরু করলেন, এতে হিতে বিপরীত হবে। তারকারা যে ধরনের ব্যায়াম করেন তা তাঁদের প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিয়েই। সকলের জন্য তা প্রযোজ্য নয়। গোবিন্দ যে ধরনের ব্যায়াম করেছেন তা হয়তো ওই বয়সে তাঁর শরীরের জন্য ঠিক নয়। অত্যধিক পরিশ্রমের কারণে পেশির সক্রিয়তা কমেছে, হরমোনের ক্ষরণে গোলমাল বেধেছে, ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।"
নিয়ম কী?
শরীরচর্চা করার আগে ও পরে শরীরকে মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। শুরুর আগে খালি হাতে ওয়ার্ম আপ করে নিলে শরীরের উষ্ণতা শরীরচর্চার উপযুক্ত হয়। পাশাপাশি, মূল ব্যায়াম শেষ হয়ে গেলে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে তবেই অন্য কাজ করতে হয়। এতে পেশির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। শরীরচর্চা সেরে উঠেই অন্য কাজ শুরু করা বা বেশি পরিশ্রম করতে শুরু করলে হার্টের উপর চাপ বাড়বে।
৫০ পেরিয়ে গেলে শরীরে ক্লান্তি আসা স্বাভাবিক। কিন্তু রোজ নিয়ম মেনে এক ধরনের ব্যায়াম করলে শরীরও ধীরে ধীরে মানিয়ে নেবে। নানা রকম ব্যায়াম একদিনেই শুরু করবেন না। এতে শরীরের উপর ধকল বাড়বে।
ইন্টারনেট দেখে অনেকেই জিমে যাওয়া শুরু করেন। কিন্তু শরীরচর্চা করতে হলে আগে তার নিয়ম কোনও প্রশিক্ষকের থেকে জেনে নেওয়া উচিত। কারণ, সঠিক ভঙ্গি ছাড়া পেশির উপর প্রয়োজনীয় প্রভাব পড়ে না। বরং ভুল ব্যায়াম করলে চোট-আঘাতের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।
শরীরচর্চা করলে বা জিমে গিয়ে বেশি সময় কাটালে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন। কারণ, ঘুমের মাধ্যমেই দেহ তার প্রয়োজনীয় বিশ্রাম এবং শক্তি সংগ্রহ করে। কিন্তু ঘুম না হলে ক্লান্তি নিয়ে শরীরচর্চার ফল মারাত্মক হতে পারে।
সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন শরীরচর্চা করলে সাধারণত বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্ত যদি পাঁচ থেকে ছ’দিন টানা শরীরচর্চা করেন, তা হলে এক দিন বিশ্রাম নিতেই হবে। কার্ডিয়ো বা স্ট্রেংথ ট্রেনিং করলে তার নিয়ম হল, সপ্তাহে পাঁচ দিন শরীরচর্চার পর অন্তত দু’দিন বিশ্রাম নিতেই হবে। তবে যদি হালকা প্রাণায়াম বা যোগাসন করেন, তা হলে রোজই অল্প অল্প করে করা যায়।
গোবিন্দ যে বয়সে গিয়ে ভারী শরীরচর্চা করছেন, সেই বয়সে যোগাসনই ভাল ব্যায়াম। আগে কিছু দিন যোগব্যায়াম, প্রাণায়াম করে শরীরকে ধাতস্থ করে নেওয়া উচিত। তার পর ধীরে ধীরে অন্য ব্যায়াম শুরু করা ভাল।
কম বয়স থেকে শরীরচর্চা করেন যাঁরা, তাঁরা ভাবেন পঞ্চাশের পরেও একই ভাবে ব্যায়াম করা যায়। তা ঠিক নয়। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শরীরচর্চা ধরন বা সময়ে পরিবর্তন আনতেই হবে। না হলে সমূহ বিপদ।