প্রোটিন ডায়েটে ভুল হলে ওজন আরও বাড়বে, কী নিয়ম মানবেন? ছবি: ফ্রিপিক।
শুধু মাছ, মাংস খেয়ে ওজন কমানোর যে ধারণা এখন এ দেশে জনপ্রিয়, তা ইউরোপ-আমেরিকায় বহু আগেই শুরু হয়েছে। পঞ্চব্যঞ্জন খেয়ে অভ্যস্ত বাঙালিদের একাংশও রোজের খাওয়া থেকে ভাত-রুটি ছেঁটে ফেলে বেক করা মাছ, মাংস সেদ্ধ, ডিমের স্যালাড খেয়ে ওজন কমানোর চেষ্টা করছে। এই ধরনের ডায়েটের নাম দেওয়া হয়েছে ‘হাই-প্রোটিন ডায়েট’ বা ‘প্রোটিন ডায়েট’। লোকজনের বিশ্বাস, এ ভাবে খেলে তাড়াতাড়ি ওজন কমতে পারে। প্রোটিন ডায়েট ঠিকমতো করতে পারলে তার উপকার অনেক, ওজনও কমবে। তবে নিয়ম মানতে হবে। শুধু প্রোটিনই একগাদা খেতে শুরু করলে তার ফল উল্টো হবে। এতে ওজন কমার বদলে তা বৃদ্ধি পাবে।
হাই-প্রোটিন ডায়েটে নিয়ম না মানলে কী কী সমস্যা হবে?
মাছ-মাংসের মতো খাবার হজমের সময় বিপাক হার প্রায় ২০–৩৫ শতাংশ বাড়ে, কার্বোহাইড্রেট বা ফ্যাট হজমের সময় বাড়ে ৫–১৫ শতাংশ৷ প্রোটিন ডায়েট নিয়ম মেনে করলে মেটাবলিক রেট অনেকটাই বেড়ে যায়। তবে সমস্যা তৈরি হয়, যখন খাওয়ার পরিমাণ ঠিক থাকে না। যিনি দু’হাতা ভাতের সঙ্গে বড় পিস মাছ বা তিন থেকে চার টুকরো মাংস খেয়ে অভ্যস্ত ছিলেন, তিনি যদি ভাত বাদ দিয়ে শুধু মাছ বা মাংসটুকু খান, তা হলে পরিমাণটা সেখানে বেশি বা কম হবেই। অনেকটা মাংস খেয়ে ফেললে বা এক বারে অনেকগুলি ডিম খেয়ে ফেললে, ক্যালোরি কমার চেয়ে বাড়বে,তখন ওজন কমার বদলে বৃদ্ধি পাবে।
শরীরের কাজ হল কার্বোহাইড্রেট ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট পুড়িয়েই শক্তি বা ‘এনার্জি’ তৈরি করা। এই শক্তিই আসলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলিকে সচল ও সক্রিয় রাখে। এই দু’টিকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে দিলে তখন সঞ্চিত কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট ফুরিয়ে যাবে, ফলে শরীর কার্ব-শূন্য বা নো কার্ব দশায় চলে যাবে। এই অবস্থায় ওজন কমে গেলেও, শরীরকে চালানোর মতো শক্তি থাকবে না। তখন আচমকা হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে, অথবা কিডনি ফেলিয়োর হবে। যাঁরা মাসের পর মাস নিয়ম না মেনেই কেবল মাছ, মাংস খেয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেশি।
তা হলে উপায়?
শুধু মাছ বা মাংস খেলেই হবে না, তার সঙ্গে শরীরের পুষ্টির জন্য ভিটামিন ও খনিজ উপাদানগুলিও জরুরি। তার জন্য নানা রকম মরসুমি ফলও খেতে হবে। খনিজ উপাদানগুলির ঘাটতি হলে প্রোটিন ডায়েটে কোনও লাভই হবে না।
খাওয়ার পাশাপাশি শরীরচর্চাও জরুরি। প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন মেপে খেতে হবে, তেমনই শরীরচর্চাও নিয়ম করে করতে হবে। তাতেই ওজন কমবে।
প্রোটিন বিপাকের জন্য প্রচুর জল লাগে। তাই রোজ পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা জরুরি। না হলে শরীরে জলের ঘাটতি হবে, হজমের সমস্যাও হবে।
প্রোটিন খেতে হলে সঠিক খাবার নির্বাচন করাও জরুরি। লিন ফ্যাট (চর্বি ছাড়া মাংস)-এর বদলে যদি বেশি চর্বিযুক্ত মাংস, রেড মিট বা তৈলাক্ত মাছ খেতে থাকেন, তা হলে ক্যালোরি পোড়ার চেয়ে বরং বৃদ্ধি পাবে।