প্রি-ডায়াবেটিকেরা কী কী নিয়ম মানলে সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে? ছবি: ফ্রিপিক।
ডায়াবিটিস ধরা পড়লেই আতঙ্ক শুরু হয়। তবে যাঁর ডায়াবিটিস হয়নি, কিন্তু রক্তে শর্করার মাত্রা বিপদসীমায়, তাঁকে শুরু থেকেই নিয়ম মানতে হবে। ডায়াবিটিসের মতোই প্রি-ডায়াবেটিক পর্বটিও যথেষ্টই উদ্বেগের। ডায়াবিটিসের যাবতীয় উপসর্গ এই পর্ব থেকেই স্পষ্ট হতে থাকে। শুধু যে ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসবে, তা নয়। এর সঙ্গে আরও কিছু লক্ষণ দেখা দেবে, যেমন ওজন কমে যাবে, হাত ও পায়ের ত্বক শুকিয়ে যেতে থাকবে, ঘাড়ে-বাহুমূলে কালচে দাগ দেখা দেবে, অতিরিক্ত ক্লান্তিতে নাজেহাল হতে হবে। ঘন ঘন মূত্রনালির সংক্রমণও হতে পারে। এমন সব লক্ষণ দেখা দিলে রোজের জীবনে কিছু নিয়ম কঠোর ভাবে মেনে চললে এক মাসের মধ্যেই সুগার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
এক মাসের মধ্যে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের উপায় কী?
দেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ থেকে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে প্রি-ডায়াবেটিক পর্বে কী কী নিয়ম মানা জরুরি, সে বিষয়ে বিস্তারিত লেখা হয়েছে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, শুরুটা হতে হবে প্রাতরাশ দিয়ে।
সকালে ৩০ মিনিট হাঁটা
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে। বাইরে গিয়ে প্রকৃতির মাঝে হাঁটতে পারলে ভাল হয়। সে অবকাশ না থাকলে, বাড়ির ছাদেই হাঁটুন। তবে ঘড়ি ধরে ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে। প্রথম ৫ মিনিট জোরে, পরের ৫ মিনিট ধীরে। এই ভাবে হাঁটতে থাকুন।
প্রোটিন সমৃদ্ধ প্রাতরাশ
সকালের জলখাবারও গুরুত্বপূর্ণ। তাতে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকতে হবে। অন্তত ৩০ গ্রাম প্রোটিন খেতে হবে। তার জন্য পুষ্টিবিদের থেকে পরামর্শ নিয়ে ডায়েট চার্ট করিয়ে ফেলুন। সকালে দু’টি ডিম খাওয়া যেতেই পারে, সঙ্গে ব্রাউন ব্রেড, সেদ্ধ ছোলা খেতে পারেন। ছাতু, ওট্সের খিচুড়ি, উপমা, ডালিয়াও রাখা যেতে পারে। ডিম না খেলে পনির বা ছানা খেতে পারেন।
দুপুর ও রাতে খাওয়ার পরে ১০ মিনিট হাঁটা
ভারী খাবার খাওয়ার পরে অন্তত মিনিট দশেক হাঁটতেই হবে। রক্তে শর্করার মাত্রা বেশির দিকে থাকলে প্রাতরাশ ভারী করতে হবে, দুপুর ও রাতের খাওয়া হালকা হবে। প্রতি বার খাওয়ার পরে দশ মিনিট করে হাঁটতে হবে। এতে অতিরিক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
কার্বোহাইড্রেটের বিকল্প হতে পারে দানাশস্য
ভাত বা রুটি যে একেবারেই বন্ধ করে দিতে হবে, তা নয়। তবে কম খেতে হবে। দুপুরে কোনও কোনও দিন ভাতের বদলে ব্রাউন রাইস, ডালিয়া বা কিনোয়া খেতে পারেন। সাদা পাউরুটি, ময়দা, মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া একেবারেই বন্ধ রাখতে হবে। ডালিয়া, ওট্স, কিনোয়ার মতো দানাশস্যে ফাইবারের মাত্রা বেশি থাকে, যা রক্তে গ্লুকোজ়ের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
রাতে ৮ ঘণ্টা ঘুম
রাতে শুতে যাওয়ার অন্তত ঘণ্টা তিনেক আগে রাতের খাবার খেয়ে নিতে হবে। আর রাতে ৭-৮ ঘণ্টা টানা ঘুমোতে হবে। বেশি রাত জাগা বা রাত জেগে মুখরোচক কিছু খাওয়ার অভ্যাস বিপদ ডেকে আনবে।
নিয়মিত পরীক্ষা জরুরি
ফাস্টিং ব্লাড সুগার টেস্ট, এইচবিএ১সি টেস্ট তিন মাস অন্তর করাতে হবে। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা কতটা বাড়ল, তা ধরা পড়বে। তা ছাড়া গ্লুকোজ় টলারেন্স টেস্ট, র্যানডম ব্লাড সুগার টেস্টও করিয়ে রাখা জরুরি।