অন্তর্বাসে বসানো ট্র্যাকারই ধরবে স্তনে ক্যানসার বাসা বাঁধছে কি না? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বিশ্ব জুড়ে মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগ চিহ্নিত করে চিকিৎসা, শুরু করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন ক্যানসার চিকিৎসকেরা। সেই লক্ষ্যে দ্রুত রোগ নির্ণয়ের জন্য নানা রকম পদ্ধতি আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে। দ্রুত রোগ নির্ণয়ের জন্য পোর্টেবল আলট্রাসাউন্ড ডিভাইস তৈরি হয়েছে আগেই। এ বার আরও এক নতুন পদ্ধতি আবিষ্কারের দাবি করলেনম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির গবেষকেরা। সেটি হল আলট্রাসাউন্ড স্ক্যানার ডিভাইস, যা বসানো থাকবে অন্তর্বাসে। এই যন্ত্রই চিহ্নিত করবে স্তনের ভিতরে ক্যানসার কোষ বেড়ে উঠছে কি না।
ডিভাইসটি নরম প্যাচের মতো, যা অন্তর্বাসের সঙ্গে যোগ করা যাবে। এই প্যাচে লাগানো থাকবে আলট্রাসাউন্ড ট্র্যাকার। অন্তর্বাস পরার পরে প্যাচটি ত্বকের সংস্পর্শে আসার পর থেকেই ট্র্যাকার তার কাজ শুরু করবে। স্তনের ভিতরে ব্যথাহীন মাংসপিণ্ড গজাচ্ছে কি না অথবা টিউমার কোষের বৃদ্ধি ও বিভাজন শুরু হয়েছে কি না, তা ধরা পড়বে ট্র্যাকারে। যদি টিউমার কোষের অস্বাভাবিক বিভাজন শুরু হয়ে থাকে, তা হলে সেই জায়গার ত্রিমাত্রিক ছবিও তুলবে ট্র্যাকার। সেই ডেটা বিশ্লেষণ করে চিকিৎসকেরা ধরতে পারবেন, স্তনে ক্যানসার বাসা বেঁধেছে কি না অথবা ক্যানসার কোন পর্যায়ে রয়েছে।
স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রেও যদি সঠিক সময়ে রোগ ধরা পড়ে তা হলে মৃত্যুর হারও অনেকটাই কমে আসে, এমনটাই জানিয়েছেন অনকোলজিস্ট শুভদীপ চক্রবর্তী। স্তন ক্যানসার নির্ণয়ে আগে বহু ক্ষেত্রেই ভুল রিপোর্ট আসত। যার ফলে চিকিৎসায় জটিলতা বাড়ত। তাই এখন এমন সব পদ্ধতি আবিষ্কার হচ্ছে, যা দ্রুত ও নির্ভুল রিপোর্ট দিতে পারে। স্তন ক্যানসার গোড়ায় চিহ্নিত করতে ম্যামোগ্রাম টেস্ট করাতে বলেন চিকিৎসকেরা। তবে অনেকেই এমন ধরনের পরীক্ষা করাতে চান না। নিজে পরীক্ষার যে পদ্ধতি অর্থাৎ, ‘সেল্ফ এগজ়ামিনেশন’, তা যদি নিয়ম মেনে না করা হয়, তা হলে কোনও লাভই হয় না। সে জায়গায় পোর্টেবল আলট্রাসাউন্ড ডিভাইসটি কাজে আসতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকেরা।
যন্ত্রটি ছোট, সহজেই ব্যবহার করা যাবে। বাড়িতেই পরীক্ষা করে দেখা যায়। আপাতত যন্ত্রটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে। ৭১ বছরের এক বৃদ্ধার স্তনে ০.৩ সেন্টিমিটার ব্যাসের টিউমার কোষ চিহ্নিত করতে পেরেছে যন্ত্রটি। এমআইটি-র ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের গবেষক অনন্ত চন্দ্রকাসন জানিয়েছেন, টিউমার কোষ ছোট থাকতেই তা ধরা পড়বে যন্ত্রে। সেই সময় থেকে চিকিৎসা শুরু হলে ক্যানসার আর ছড়িয়ে পড়তে পারবে না। তা ছাড়া যন্ত্রটিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রয়োগও সম্ভব। কাজেই, সঠিক ভাবে সেটি ক্যানসার চিহ্নিত করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।