Strategies to improve attention

‘পপকর্ন ব্রেন’ রোগে ভুগছে এখনকার প্রজন্ম! মুক্তি পেতে প্রয়োজন ‘আড়াই মিনিট’

২০০৪ সাল অবধি মনোযোগের গড় সময় ছিল আড়াই মিনিট। এখন তা কমে কত হয়েছে, জানলে চমকে যেতে হবে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২৫ ১২:৩৫
Share:

যে কোনও কাজে কতটুকু মন দিতে পারেন? হিসেব জেনে নিন। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম। গ্রাফিক সহায়তা: এআই।

মনোযোগ দিতেই বড় অনীহা। অস্থির মন এক জায়গায় স্থির হতেই চায় না। ভেবে দেখুন তো, শেষ কবে একটা গল্প একবারে পড়ে শেষ করেছিলেন। সংখ্যাটা হাতগোনাই হবে। এমনকি মোবাইলে একটি রিল চালালেও তা বেশি ক্ষণ দেখতে ভাল লাগে না। বই পড়া, মোবাইল দেখা বা নিজের শখের কোনও কাজও একটানা মনোযোগ দিয়ে করার পাট উঠেই গিয়েছে প্রায়। এখনকার প্রজন্ম একই সময়ে বিভিন্ন কাজে মনঃসংযোগ করার চেষ্টা করে। এতে একাগ্রতার ঘাটতি হয়, কাজটিও নিখুঁত ভাবে হয় না। একই সময়ে চারদিকে মাথা ঘামাতে গিয়ে স্মৃতির পাতাও ধূসর হতে থাকে। সদ্য যে কাজটি করলেন, সেটিও মনে থাকে না বেশির ভাগ সময়ে। গাড়ির চাবি থেকে চশমা, নিজের হাতে তুলে রেখেও পর ক্ষণেই আর মনে পড়ে না। মনে করতে না পারলে একটা অস্বস্তিও কাজ করে। এই সবই হয় মনোযোগের অভাবের কারণে। অস্থির আর ছটফটে ভাবকে গবেষকেরা বলছেন ‘পপকর্ন ব্রেন’। আর এই বিষয়টি নিয়েই সমীক্ষা চালাতে গিয়ে, চক্ষু চড়কগাছ হয়েছে গবেষকদের।

Advertisement

ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকেরা সাম্প্রতিক প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের ছটফটে মন নিয়ে সমীক্ষা চালাচ্ছেন দীর্ঘ সময় ধরেই। গবেষক গ্লোরিয়া মার্ক জানিয়েছেন, কোনও একটি কাজে কত ক্ষণ টানা মনোযোগ দিচ্ছেন, তার নির্দিষ্ট মাপকাঠি আছে। ধরুন, বই পড়ছেন, ঠিক কতটা সময় অন্য কোনও কাজে মন না দিয়ে কেবল বইটুকুও পড়বেন, তারও কিন্তু হিসেব আছে। দেখা গিয়েছে, ২০০৪ সাল অবধি যে কোনও একটি কাজে আড়াই মিনিটের মতো মনোযোগ দিতে পারতেন কমবয়সিরা, ২০১০ সালের পরে তা কমে হয় ৭৫ সেকেন্ড, আর এখন আরও কমে ৪৭ সেকেন্ড। অর্থাৎ ‘অ্যাটেনশন স্প্যান’ কমতে কমতে ৪৭ সেকেন্ডে গিয়ে ঠেকেছে।

কেন কমছে একাগ্রতা?

Advertisement

২০১১ সালে ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের গবেষক ডেভিড লেভি এই বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। তিনিই প্রথম ‘পপকর্ন ব্রেন’ সিনড্রোমের কথা বলেন। গবেষকের বক্তব্য ছিল, একটি কাজ থেকে অন্য কাজে ঝাঁপিয়ে চলে যেতে কয়েক সেকেন্ড সময় নিচ্ছে এখনকার প্রজন্ম। ফলে কোনও কাজই ঠিকমতো সম্পন্ন হচ্ছে না। সে পড়াশোনা করা হোক, বই পড়া, টিভি দেখা বা নিজের পছন্দের কোনও কাজ। পড়তে বসে হঠাৎ মনে হচ্ছে টিভি দেখলে ভাল হত। টিভি চালিয়ে পর ক্ষণেই মনে হচ্ছে গল্পের বইটা শেষ করা দরকার। বইয়ের পাতায় কয়েক সেকেন্ড মন দেওয়ার পরেই মোবাইল হাতে নিয়ে ইউটিউব চালিয়ে দিচ্ছেন। এই যে অস্থিরতা, তারই নাম ‘পপকর্ন ব্রেন’।

এর নানা কারণ। প্রথমত ডিজিটাল ডিভাইসে নির্ভরতা বেড়েছে। মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপে দিবারাত্র ব্যস্ত থাকায়, মনোযোগে ছেদ পড়ছে। নানা ডিভাইস থেকে আসা নোটিফিকেশন অস্থিরতা বাড়াচ্ছে।

সমাজমাধ্যমের প্রভাবও রয়েছে। সমাজমাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের যাপনচিত্র দেখে মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ফলে সব কাজ একই সঙ্গে করতে গিয়ে বিপত্তি বাধছে। ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলির বাঁধনও আলগা হচ্ছে।

বাস্তব জগতের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্নতাও এর কারণ। স্মার্টফোনে আসক্তি সামাজিক বিচ্ছিন্নতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে, এতে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগও বাড়ছে।

ফিরে যান আড়াই মিনিটে

মনোযোগ ও একাগ্রতা বাড়ানোর একটিই পন্থার কথা বলছেন গবেষকেরা। সেই আড়াই মিনিটে ফেরা শুরু করতে হবে। যে কাজটিই করুন তাতে অন্তত আড়াই মিনিট টানা মনোযোগ দিতেই হবে। যতই অন্য কাজের প্রলোভন আসুক, তা এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। ধীরে ধীরে সময় বাড়াতে হবে।

রোজ সকালে ২০ মিনিট হাঁটলেও মন ভাল থাকবে, একাগ্রতা বাড়বে। হাঁটার সময়ে মোবাইল দূরে রাখতে হবে। রোজ রাতে শোয়ার আগে রিল না দেখে সারা দিনের কাজ লিখে রাখতে হবে। কোন কাজটি কত ক্ষণ ধরে করেছেন, তারও হিসেব রাখুন। এই ভাবে স্মৃতিশক্তিও উন্নত হবে, মনের অস্থিরতাও কমবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement