অজান্তে 'বিষাক্ত' পদার্থ ব্যবহার করে ফেলছেন না তো? ছবি: সংগৃহীত।
সামনেই পুজো। ঘরদুয়ার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার পালা ইতিমধ্যেই শুধু হয়ে গিয়েছে বাড়িতে বাড়িতে। হেঁশেলের সামগ্রী থেকে অন্দরসজ্জার উপকরণ— এমন অনেক জিনিসই বাড়িতে লুকিয়ে আছে, যা আপাতদৃষ্টিতে ক্ষতিকর মনে না হলেও আদতে তারা টক্সিন সামগ্রী। বাড়িতে সেই সামগ্রীগুলি জমিয়ে রেখে অজান্তেই শরীরের ক্ষতি করছেন না তো?
শরীরে টক্সিনের মাত্রা কমাতে পারলে পেট, মস্তিষ্ক, দুইয়েরই লাভ হয়। এর পাশাপাশি, শরীরে হরমোনের ভারসাম্যও বজায় থাকে। জেনে নিন, বাড়িতে রোজের ব্যবহারের কোন সামগ্রীগুলি লাভের থেকে ক্ষতি বেশি করছে শরীরের।
১) পুরনো ননস্টিকের পাত্র: ননস্টিক পাত্রের উপরের পরতটি এক বার উঠতে শুরু করলে সেই পাত্রটি আর ব্যবহার না করাই ভাল। ননস্টিক পাত্রগুলির উপরে সাধারণত টেফলনের আস্তরণ থাকে। যা আসলে এক প্রকার রাসায়নিক। নিয়মিত মাজাঘষার ফলে টেফলনের গায়ে আঁচড় পড়ে। ফলে ওই টেফলনের মধ্যে থাকা ‘পিএফওএ’ নামক একটি রাসায়নিক খাবারে মিশে যেতে পারে। যা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর।
২) প্লাস্টিকের বোতল: বাজারে যে জলের বোতলে পানীয় জল বিক্রি করা হয়, তার অধিকাংশই এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকে তৈরি। এই ধরনের বোতলে দিনের-পর-দিন জল পান করলে ক্যানসারের আশঙ্কাও বাড়ে। প্লাস্টিকের বোতল তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ‘বিসফেনল এ’ বা ‘বিপিএ’-সহ একাধিক উপাদান, যা বেশিমাত্রায় শরীরে ঢুকলে রক্তচাপের হেরফের তো হবেই, হরমোনের ভারসাম্যও বিগড়ে যাবে। এমনকি দেখা গিয়েছে, এই সব দূষিত প্লাস্টিকের কণা শরীরে ইনসুলিনের ক্ষরণে প্রভাব ফেলে। যা পরবর্তী সময়ে ডায়াবিটিসের কারণ হয়ে উঠতে পারে। কিডনির দুরারোগ্য রোগও হানা দিতে পারে।
৩) সুগন্ধি মোমবাতি বা এয়ার ফ্রেশনার: বাজারে যে সব সুগন্ধি মোমবাতি আর এয়ার ফ্রেশনার পাওয়া যায়, তাতে থ্যালেট আর কিছু ক্ষতিকর অরগ্যানিক কমপাউন্ড থাকে। এই সব উপকরণ শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে দিতে পারে। শরীরে প্রদাহের কারণও হতে পারে। বদলে প্রাণিজ বা উদ্ভিজ্জ স্নেহপদার্থ দিয়ে তৈরি ‘স্টেরিন’ এবং ‘বিওয়াক্স’-নির্ভর মোমবাতি ব্যবহার করাই ভাল। এ ছাড়া সুগন্ধি হিসাবে কর্পূর, ধুনো ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪) সুগন্ধিযুক্ত কাপড় ধোয়ার সাবান: কাপড় কাচার সুগন্ধিযুক্ত সাবানেও থ্যালেট যৌগ আর সিন্থেটিক রাসায়নিক উপাদান থাকে। এগুলি ব্যবহার করলেও শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে যায়। এর বদলে সুগন্ধিবিহীন সাবান এবং প্রয়োজনে এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
৫) কৃত্রিম চিনি: ‘আর্টিফিশিয়াল সুইটেনার’-এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু এই ধরনের কৃত্রিম চিনির অতিরিক্ত ব্যবহার যে শরীরের জন্য বিপজ্জনক, তেমনটাই বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। কৃত্রিম চিনির মূল উপাদানগুলি হল— অ্যাসপার্টেম, সুক্রোজ়, সুক্রালোজ়, স্যাকারিন, নিওটেম এবং স্টিভিয়া। যে কোনও প্রক্রিয়াজাত খাবার, জাঙ্ক ফুড, ডায়েট পানীয়ের মধ্যে এই রাসায়নিকগুলি থাকে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন রিপোর্টেও দেখা গিয়েছে, কৃত্রিম সুইটেনার টাইপ-টু ডায়াবিটিস, কার্ডিয়োভাসকুলার রোগ, হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা, কিডনির সমস্যা এবং মৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।