ওজন কমাতে গেলে বাদ দিতে হবে না পোলাও, প্যানকেক। শুধু বদলে ফেলুন মূল উপকরণ। ছবি: সংগৃহীত।
স্বাস্থ্য নিয়ে যতই সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ততই, এমন অনেক উপাদান খাবারে জুড়ছে, যা দেখে একসময় লোকে নাক সিঁটকাতেন। এক সময়ে যে জোয়ার-বাজরার দিকে ফিরেও চাইত না বঙ্গের লোকজন, সেই খাবারই এখন চর্চায়। চিরকাল বাঙালির হেঁশেলে ঠাঁই পেয়ে আসা ময়দার তৈরি সাদা নরম ফুলকো লুচি কিংবা তিনকোনা পরোটা খেয়ে আসা মানুষজনও এখন প্রাতরাশ সারছেন ওট্স দিয়ে। খাচ্ছেন দইয়ের সঙ্গে বীজ। সেই তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বাজরাও।
ওজন ঝরাবে বাজরা?
শরীর সুস্থ রাখতে দৈনন্দিন খাবারে অনেকেই বাজরা রাখছেন। তার কারণও আছে। গমের আটায় গ্লুটেন থাকলেও বাজরাও থাকে না। গ্লুটেন এক রকম প্রোটিন। অনেকেরই তা সহ্য হয় না। ফলে গমের আটার বদলে বাজরার আটা খাওয়া যায়। বাজরার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হল কোনও খাবার কত দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে, তা পরিমাপের স্কেল বা সূচক। যে খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, সেই খাবার স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল, বিশেষত ডায়াবেটিকদের জন্য এবং ওজন যাঁরা কমাতে চাইছেন তাঁদের জন্যও। পেট পরিষ্কার রাখার জন্য, ওজন কমাতে ফাইবারের ভূমিকা থাকে। বাজরায় উচ্চ ফাইবার থাকে। ফলে সেই দিক থেকেণও বাজরা এগিয়ে। কম ক্যালোরি, পুষ্টিগুণ বেশি— ওজন কমানোর জন্য যে ধরনের খাবার বেছে নেওয়া দরকার, সেই সমস্ত শর্তই পূরণ করে বাজরা।
বাজরা দিয়ে রকমারি খাবার
স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল বাজরা দিয়ে বানিয়ে নেওয়া যায় প্যানকেক থেকে চিলা, পোলাও। প্রাতরাশ হোক বা নৈশ আহার কোন খাবারে কী ভাবে জুড়বেন বাজরা?
পোলাও: বাজরা শুকনো কড়াইয়ে নাড়াচাড়া করে জলে ধুয়ে নিন। হালকা সেদ্ধ করে ফেলুন। কড়াইয়ে সাদা তেল বা ঘি দিয়ে চিনেবাদাম, কিশমিশ ভেজে তুলে নিন। কড়াইয়ে তেল দিয়ে পছন্দের সব্জি সরু লম্বা করে কেটে নিন। সেগুলি হালকা ভাজা হলে দিন সেদ্ধ করা বাজরা। স্বাদমতো নুন যোগ করুন। ওজন ঝরানোর কথা ভাবতে গেলে চিনি বাদ দিতে হবে। সমস্ত উপকরণ ভাল করে নাড়িয়েচাড়িয়ে উপর থেকে বাদাম ছড়িয়ে দিন। বাদামে রয়েছে প্রোটিন। সব্জিতে ভিটামিন এবং খনিজ। সব মিলিয়ে পেট ভরা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি হবে।
চিলা: বাজরার আটা টক দই এবং গরম জল দিয়ে গুলে নিন। তার মধ্যে পেঁয়াজ, গাজর, ক্যাপসিকাম, পছন্দের যে কোনও সব্জি যোগ করুন। দিতে পারেন রসুন কুচিও। স্বাদমতো নুন যোগ করুন। কড়াইয়ে অল্প তেল ব্রাশ করে মিশ্রণটি পাতলা করে ছড়িয়ে দিন। একপিঠ হয়ে এলে দিয়ে দিন সাদা তিল। তার পর সেই দিকটিও ভেজে নিন। তা হলেই তৈরি হয়ে যাবে চিলা।
প্যানকেক: ছোট থেকে বড় সকলেই প্যানকেক করে। ময়দার বদলে তা বানান বাজরার আটা দিয়ে। ২-৩টি কলা মিক্সারে ঘুরিয়ে নিন। তার সঙ্গে যোগ করুন আটা, সামান্য ভ্যানিলা এসেন্স, এক চিমটে নুন এবং বেকিং পাউডার। কলার বদলে ডিমও যোগ করা যাবে। সমস্ত উপকরণ দিয়ে ভাল করে ফেটিয়ে পাতলা মিশ্রণ তৈরি করুন। কড়াইয়ে তেল ব্রাশ করে প্যানকেকের মতো গোল গোল করে ভেজে নিন।
প্রাতরাশে নিয়মিত টোস্ট অমলেট বা স্মুদি খেতে ভাল না লাগলেও, এ ভাবেও নানা রকম খাবার খাওয়া যায়।