কাশি, অ্যালার্জির সংক্রমণ থেকে বাঁচতে এখন থেকেই কী কী নিয়ম মানবেন? ছবি: এআই।
সর্দিকাশি যাঁদের সারা বছরের দোসর, শীতকালের জন্য তাঁদের অপেক্ষা করতে হয় না। মরসুম বদলের সময় থেকেই শুকনো কাশি, জ্বর, অ্যালার্জির সংক্রমণ মাথাচাড়া দিতে শুরু করে। এই সময়ে আবহাওয়ায় দ্রুত বদল ঘটে এবং ঠান্ডা পড়ার শুরু থেকেই নানা রকম ব্যাক্টেরিয়া-ভাইরাসের উপদ্রবও শুরু হয়। তাই এই সময়টাতেই শরীর খারাপ হয় সবচেয়ে বেশি। কেউ ভোগেন সর্দিজ্বরে, কারও অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের মতো সমস্যা আরও বেড়ে যায়। ত্বকের অ্যালার্জিতেও ভোগেন অনেকে। এর থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় কী?
সংক্রামক রোগ বিষয়ক চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানাচ্ছেন, কালীপুজোর সময় থেকেই বাতাসে দূষণের মাত্রা সাংঘাতিক পর্যায়ে পৌঁছে যায়। একে ভর করেই নানা রকম জীবাণু ভেসে বেড়ায় বাতাসে। শীতের সময়টাতে নানা প্রজাতির ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়ার বংশবৃদ্ধি হয় দ্রুত। বাতাসে ধূলিকণা বেশি থাকে। তার উপর বাতাসে আর্দ্রতাও কম থাকে। তাই বাতাসে ভাসমান ভাইরাসগুলি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সহজে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। ফলে সংক্রামক রোগই বেশি হতে দেখা যায়। নাক থেকে অনবরত জল পড়া, খুসখুসে কাশি, শ্বাসকষ্টের মতো নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে এই সময়ে।
শীতের অ্যালার্জি থেকে বাঁচতে
ঘন ঘন হাঁচি, গলা খুসখুস করা, নাক দিয়ে জল পড়া, কানে অস্বস্তি ইত্যাদি হতে পারে শীতকালীন অ্যালার্জির লক্ষণ। এ ছাড়া চোখে জ্বালা ভাব, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, জ্বর ও ত্বকে সংক্রমণ হলেও সতর্ক হতে হবে।
১) বাড়ির ভিতর যতটা সম্ভব খোলামেলা রাখার চেষ্টা করুন। ঘরে রোদ ঢুকতে দিন। রোদ না ঢুকলে সমস্যায় পড়তে পারেন অ্যালার্জির রোগীরা। ঘরবাড়ি, পোশাক পরিষ্কার রাখতে হবে।
২) বায়ুতে আর্দ্রতা ও ধুলো-বালির পরিমাণের তারতম্য অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। এই সমস্যা সমাধানে ঘরে বায়ু পরিশুদ্ধ করার যন্ত্র বসাতে পারেন। আজকাল সাধারণ বৈদ্যুতিক সামগ্রীর দোকানেই এই ধরনের যন্ত্র কিনতে পাওয়া যায়।
৩) ঠান্ডা লাগার ধাত যাঁদের রয়েছে, তাঁরা এই মরসুমে ঠান্ডা জলে স্নান করবেন না ভুলেও। ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করাই ভাল। সকালে হোক কিংবা অফিস থেকে ফিরে— যখনই স্নান করবেন, গরম জলে করুন।
৪) অল্প সর্দিকাশি হলেও আগে থেকেই নুনজলে গার্গল শুরু করুন। গরম জলের ভাপ নিন নিয়মিত।
৫) ডাস্ট অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে মাস্ক পরা শুরু করুন। বাইরে গেলেই মাস্ক পরুন।
৬) ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার, যেমন, টক জাতীয় ফল, আমলকি খাদ্য তালিকায় রাখুন। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৭) আদা, গোলমরিচ, দারচিনি, লবঙ্গ দিয়ে তৈরি চা অ্যালার্জির সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে। রোজ সকালে এক চামচ করে মধু খেলেও অ্যালার্জির সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৮) অ্যালার্জির সমস্যা খুব বেশি থাকলে, শীত আসার আগেই ফ্লু বা নিউমোনিয়ার টিকা নেওয়া যাবে কি না, সে বিষয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যালার্জির ওষুধ খাবেনও না, বন্ধও করবেন না। অ্যালার্জির ওষুধে মূলত আন্টিহিস্টামিন নামক উপাদান থাকে, এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার কোষ্ঠকাঠিন্য, অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন, গলা শুকিয়ে যাওয়া বা মূত্রত্যাগের সমস্যার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ডেকে আনে।