পেশির বিরল রোগে ভুগছিলেন তিলক বর্মা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
প্রায় পক্ষাঘাতের দশা হয়েছিল। হাত নাড়াতে পারতেন না এক সময়ে। হাঁটাচলা করা, শরীর নাড়ানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছিল। শরীরের প্রতিটি অঙ্গের পেশি অচল হতে শুরু করে। কঠিন সেই সময়ের কথা বলেছেন এশিয়া কাপ ফাইনালের নায়ক তিলক বর্মা। তিলক জানিয়েছেন, প্রথম বার আইপিএল খেলার সময় থেকেই লক্ষণগুলি ফুটে উঠতে থাকে। শুরুতে মনে হয়েছিল, পেশির ক্লান্তির কারণে হচ্ছে যা খেলোয়াড়দের আকছার হয়। তবে পরে ধরা পড়ে, কেবল পেশির ক্লান্তি নয়, পেশির গঠনই নষ্ট হতে শুরু করেছে তিলকের। এই রোগ খুব কম জনেরই হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় এর নাম ‘র্যাবডোমায়োলিসিস’।
কাদের হয় এই রোগ?
‘র্যাবডোমায়োলিসিস’ পেশির বিরল অসুখ। পেশির কোষগুলি একে একে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। পেশি থেকে দূষিত পদার্থ বেরিয়ে রক্তে মিশে যায়। সাধারণত পেশি থেকে মায়োগ্লোবিন বেরিয়ে রক্তে মিশতে থাকে, যা হার্ট ও কিডনির জটিল রোগের কারণ হয়ে ওঠে। পেশির কোষ নষ্ট হতে হতে এমন জায়গায় পৌঁছয়, যখন রোগীর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হতে শুরু করে। পেশির অসাড়তা বাড়ে, হাত-পা নাড়ানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
কোনও দুর্ঘটনার কারণে বা পড়ে গিয়ে হাত-পা ভেঙেছে, এমন লোকজনের র্যাবডোমায়োলিসিস হতে পারে।
অস্ত্রোপচার হয়েছে বা কোলেস্টেরল কমানোর, রক্ত পাতলা হওয়ার ওষুধ যাঁরা বেশি খান, তাঁদের এই রোগ হতে পারে।
খুব বেশি পরিশ্রম করেন, দীর্ঘ সময়ে রোদে থাকেন, ভারী শরীরচর্চা একটানা করতে থাকেন, এমন লোকজনের পেশির ক্ষয় দ্রুত হয়।
হঠাৎ করে জিমে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কার্ডিয়ো বা স্ট্রেংথ ট্রেনিং করতে শুরু করলে, পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিলে পেশির ক্লান্তি এত মারাত্মক রকম ভাবে বেড়ে যায় যে, তার থেকে পেশির অসাড়তা জনিত এই অসুখ মাথাচাড়া দিতে পারে।
দীর্ঘ সময় ধরে ডিহাইড্রেশন বা কিডনির রোগে ভুগছেন, এমন লোকজনেরও এই রোগ হতে পারে। আবার জিনগত কারণেও এমন রোগ হতে পারে।
কী কী লক্ষণ দেখা দেয়?
ক্লান্তি ভাব আচমকাই বেড়ে যাবে।
ধীরে ধীরে পেশির শক্তি কমবে, হাত-পা নাড়ানো, হাঁটাচলা করতে সমস্যা হবে।
প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দেবে, প্রস্রাবের রং গাঢ় হতে থাকবে।
রোগী বিছানা ছেড়ে উঠতে পারবেন না, কাজ করার ক্ষমতা হারাবেন।
র্যাবডোমায়োলিসিস হলে কিডনি ফেলিয়োর হয়, স্নায়বিক সমস্যা দেখা দিতে থাকে। তাই রোগের চিকিৎসা উপযুক্ত সময়ে হওয়া উচিত।