ঘরোয়া মশলায় স্বাস্থ্যের যত্ন। ছবি: সংগৃহীত।
রান্নাঘরের মশলার বাক্সেই থাকে স্বাস্থ্যকর যাপনের চাবিকাঠি। তা সে স্বাস্থ্য ভাল রাখা হোক বা রূপের চর্চা। তেমনই এক অমূল্য উপাদান হল লবঙ্গ। কেবল বিরিয়ানি বা শাহি পনিরের মতো বাহারি কিছু রান্নায় স্বাদ আর ঘ্রাণ বাড়ানোই নয়, শরীরের ভিতরেও এটি কাজ করে এক প্রাকৃতিক ওষুধের মতো। বিশেষত হৃদ্যন্ত্র, কোলেস্টেরল, হজম ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে লবঙ্গের ভূমিকা বৈজ্ঞানিক ভাবেও প্রমাণিত। তাই প্রতি দিন সকালে একটি করে লবঙ্গ চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস শরীরকে নানা দিক থেকে উপকার দিতে পারে।
লবঙ্গের উপকারিতা এবং অপকারিতা। ছবি: সংগৃহীত।
রোজ লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা
হৃদ্যন্ত্র ও কোলেস্টেরলের যত্নে
লবঙ্গের সক্রিয় উপাদান ইউজিনল শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) কমিয়ে দেয়। একই সঙ্গে এটি ভাল কোলেস্টেরল (এইচডিএল) বাড়ায়। এর ফলে রক্তে চর্বির ভারসাম্য ঠিক থাকে, ধমনীতে প্ল্যাক জমে না এবং হৃদ্যন্ত্র আরও সক্রিয় ও শক্তিশালী হয়।
রক্তচাপ ও রক্তসঞ্চালন নিয়ন্ত্রণে রাখে লবঙ্গ রক্তনালির স্থিতিস্থাপকতা বাড়িয়ে দেয়। এর অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট উপাদান রক্তকে বিশুদ্ধ রাখে ও রক্তসঞ্চালন উন্নত করে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, মাথা ঘোরা বা ক্লান্তির মতো সমস্যা কমে এবং মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছোয়।
প্রদাহ ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়
লবঙ্গের প্রদাহনাশী ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট গুণ শরীরের কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে। প্রদাহ, গাঁটে ব্যথা, ত্বকের ক্লান্তি, এমনকি বার্ধক্যের লক্ষণও খানিক কমাতে পারে বলে চিকিৎসকেদের বক্তব্য।
হজমের উন্নতি ঘটায়
হজমের জন্য প্রয়োজনীয় রসের ক্ষরণ বাড়িয়ে হজমপ্রক্রিয়া ভাল করে। গ্যাস, অম্বল ও পেট ফাঁপার সমস্যা কমায়। একই সঙ্গে ঠান্ডা লাগা, কাশি, গলাব্যথা বা কফ জমলে লবঙ্গের তেল আরাম দিতে পারে।
মুখের দুর্গন্ধ কমানোয় কার্যকরী
লবঙ্গের জীবাণুনাশক গুণ মুখের ব্যাক্টেরিয়া মারতে পারে, দাঁতের ব্যথা উপশম করে এবং মাড়ি শক্ত রাখে। নিয়মিত লবঙ্গ চিবোলে মুখের দুর্গন্ধও কমে যায়।
শরীরের ব্যথা ও ক্লান্তিতে আরাম দেয়
লবঙ্গের প্রাকৃতিক ব্যথানাশক গুণ পেশিতে টান বা ক্লান্তি দূর করতে সক্ষম।
কারা লবঙ্গ খাবেন না এবং কেন
লবঙ্গের উপকারিতা যতই হোক না কেন, সবার জন্য এটি নিরাপদ নয়। কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে এটি শরীরে উল্টো প্রভাব ফেলতে পারে।
১. লবঙ্গের ইউজিনল উপাদান যকৃতের বিপাকক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে। অতিরিক্ত খেলে যকৃতের উপর চাপ পড়ে, এমনকি প্রদাহও তৈরি হতে পারে। তাই যকৃৎ দুর্বল থাকলে লবঙ্গ নিয়মিত খাওয়া এড়িয়ে চলাই ভাল।
২. অন্ত:সত্ত্বা নারীর শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু লবঙ্গের তীব্র গন্ধ ও সক্রিয় রাসায়নিক উপাদান গর্ভের ভ্রূণে সামান্য প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হয়। তাই এই সময়ে লবঙ্গ নিয়মিত না খাওয়াই শ্রেয়।
৩. বয়স বাড়লে শরীরের বিপাকের গতি কমে যায়। লবঙ্গের শক্তিশালী উপাদান কখনও-সখনও পেট জ্বালা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়াতে পারে। তাই প্রবীণদের ক্ষেত্রে পরিমিত ব্যবহারই নিরাপদ।
৪. লবঙ্গ প্রাকৃতিক ভাবে রক্তকে কিছুটা পাতলা করতে পারে। যদি কেউ এমনিতেই রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ খান, তবে লবঙ্গ নিয়মিত খেলে স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকি বাড়তে পারে।
কোন উপায়ে খেলে ভাল
প্রতি দিন সকালে খালি পেটে মাত্র একটি লবঙ্গ চিবিয়ে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার মেলে। জল খাওয়ার আগে কয়েক মিনিট মুখে রেখে দিলে ইউজিনল শরীরে ভাল ভাবে মিশে যায়। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে চলবে না। উপকার পেতে হলে পরিমিতি বোধ ও সচেতনতা প্রয়োজন।