১০২ বছরেও রাঁধছেন, ঠাকুরমার দীর্ঘ জীবনের রহস্য কী? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ঠায় দাঁড়িয়ে দুই থেকে তিন পদ রান্না তাঁর কাছে জলভাত। ১০০ জনের জন্য গরম গরম ন্যুডলস স্যুপ বানিয়ে দেবেন চটজলদি। যত্ন করে বেড়ে তা পরিবেশনও করবেন। দিনে ৭-৮ ঘণ্টা কাজ করেও তাঁর মুখে ক্লান্তি ছাপ পড়ে না। তিনি জাপানের শতায়ু পেরনো রন্ধনশিল্পী ফুকু। বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ রন্ধনশিল্পী তিনিই। আজও নিজের রেস্তরাঁ চালাচ্ছেন হইহই করে।
জাপানের গুনমা এলাকার গিনকাতেই রেস্তরাঁটি তাঁরই তৈরি। এই রেস্তরাঁ বিখ্যাত রামেনের জন্য। রামেন এক ধরনের ন্যুডলস স্যুপ, যা তৈরি হয় সব্জি ও মাংস দিয়ে। গরম গরম মাছের ঝোল দিয়েও রামেন খান জাপানিরা। রন্ধনশিল্পী ফুকুর হাতের রামেন ওই এলাকায় বিখ্যাত। বিভিন্ন ধরনের ন্যুডলস, মাছ ও মাংসের নানা পদও রাঁধেন ঠাকুরমা ফুকু। তাঁর হাতের আরও একটি জনপ্রিয় রান্না হল কাটসুডন। সেটি হল মুচমুচে পর্ক কাটলেট, যা খাওয়া হয় ভাতের সঙ্গে। স্থানীয়েরা বলেন, ঠাকুরমার হাতের রামেন ও কাটসুডন খেতে আজও রেস্তরাঁর বাইরে ভিড় জমে যায়। সব রান্নাই নিজের হাতেই করেন।
ঠাকুরমা ফুকুর নাকি ক্লান্তি নেই। গ্যাসের সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে রান্না করা সহজ নয়। ওই বয়সে গিয়ে তা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু ফুকু ব্যতিক্রমী। জানিয়েছেন, পরিমিত আহার ও নিয়ম করে শরীরচর্চা করেই নাকি তিনি এত ফিট। রান্না চাপিয়ে ওই সময়টাতে হালকা স্কোয়াট বা স্ট্রেচিং করে নেন। এতে দীর্ঘ সময়ে দাঁড়িয়ে থাকার ক্লান্তি হয় না। পেশিতে টানও ধরে না।
১০২ বছরেও শরীরে কোনও রোগভোগ নেই। বয়সের ভারে শরীর ঝুঁকে যায়নি। কর্মঠ ও পরিশ্রমী ঠাকুরমার দীর্ঘ জীবনের রহস্য নিয়ে কৌতূহল দিন দিন বাড়ছে। ফুকু কিন্তু স্পষ্ট জানিয়েছেন, তিনি কোনও রকম ওষুধ খান না। অ্যান্টি-এজিং থেরাপি তো বিলাসিতা! বরং সাদামাটা জীবন ও হাসিখুশি থাকাই তাঁর দীর্ঘ আয়ুর রহস্য। খাবার খান পরিমিত। ভাত খেতেই বেশি পছন্দ করেন। সঙ্গে থাকে নানা রকম মাছ ও সব্জি। রোজের পাতে প্রোবায়োটিকের জন্য মিসো স্যুপ থাকেই।
ঠাকুরমার পরামর্শ, সব রকম মরসুমি সব্জি ও ফল খেতে হবে। তবেই শক্তি হবে শরীরে। সেই সঙ্গে কাজের ফাঁকে ব্যায়াম সেরে নিতে হবে। আর মন ভাল রাখতে পাঁচজনের সঙ্গে মেলামেশা করা খুব জরুরি। রেস্তরাঁয় যত গ্রাহক, সকলকেই হাসিমুখে আপ্যায়ন করেন ঠাকুরমা। গল্পগাছাও করেন। আর তাতেই না কি তাঁর মন চনমনে থাকে। অবসাদ আজ অবধি ছুঁতে পারেনি তাঁকে। আরও কয়েক এ ভাবেই বছর সুস্থ শরীরে বেঁচে থাকতে চান ঠাকুরমা ফুকু।