ডায়াবেটিকদের জন্য চিনির বদলে গুড় খাওয়া কি স্বাস্থ্যকর? ছবি: শাটারস্টক।
ডায়াবিটিস রোগীর খাওয়াদাওয়ায় হাজার রকমের বাধানিষেধ। কিছু খাওয়ার আগেই ভাবতে হয়, এতে সুগার বেড়ে যাবে না তো? কায়িক পরিশ্রম কম করা, অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে কম বয়স থেকেই এখন শরীরে বাসা বাঁধছে ডায়াবিটিস। যাপনে পরিবর্তন আনলেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় রোগটিকে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে খাওয়াদাওয়ায় বাড়তি নজর দেওয়া প্রয়োজন।
অনেকের মনে করেন, মিষ্টি বেশি খেলেই নাকি শরীরে ডায়াবিটিস ধরা পড়ে। বিষয়টা এমন কিন্তু নয়। তবে এক বার এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গেলে চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবারে রাশ টানতেই হবে। একেবারে বন্ধ করে দিতে পারলে আরও ভাল। অনেক ডায়াবেটিকই রান্নায় চিনি খান না, তবে তাঁদের হেঁশেলে চিনির পরিবর্তে জায়গা করে নিয়েছে গুড়ের কৌটো। এই অভ্যাস কি আদৌ তাঁদের পক্ষে স্বাস্থ্যকর?
গুড় প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি এক ধরনের মিষ্টি। সাধারণত খেজুরের রস কিংবা আখের রস জ্বাল দিয়ে এটি তৈরি করা হয়। গুড়ে ভাল মাত্রায় পটাশিয়াম, আয়রন এবং ক্যালশিয়াম থাকে। তবে ডায়াবেটিকদের জন্য গুড় খাওয়া মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। ১০০ গ্রাম গুড়ে ৩৮৩ ক্যালোরি, ৬৫ থেকে ৮৫ শতাংশ সুক্রোজ থাকে এবং ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ফ্রুকটোজ ও গ্লুকোজ থাকে, যা ডায়াবিটিসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। গুড়ের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেকটাই বেশি, তাই গুড় খেলে ডায়াবিটিস রোগীদের শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এ কারণে গুড় চিনির মতোই ক্ষতিকর ডায়াবেটিকদের জন্য। ডায়াবেটিদের রোজের ডায়েটে গুড় থাকলে কিডনির সমস্যা, হার্টের সমস্যা, এমনকি শরীরের অন্যান্য অঙ্গও বিকল হয়ে যেতে পারে। তাই প্রথম থেকেই সতর্ক না হলে মুশকিল।
চিনি যদি একেবারে বাদ দিতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে বিকল্প হিসাবে কৃত্রিম চিনি ব্যবহার করতে পারেন। অনেকেই কৃত্রিম চিনি খেতে ভয় পান। চিকিৎসক অদ্রিজা রহমানের মতে, ‘‘বিদেশে দীর্ঘ দিন ধরে লোকেরা ‘নো ক্যালোরি সুগার’ বা কৃত্রিম চিনি ব্যবহার করে আসছেন। এ ধরনের চিনি শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে দিতে পারে, এমন প্রমাণিত হলে বিদেশের বাজারে এই পণ্য সবার আগে বন্ধ করা হত। চিনি খাওয়া ডায়াবেটিকদের জন্য একেবারেই ভাল নয়। তার বদলে কোনও ভাল সংস্থার কৃত্রিম চিনি খেতে পারেন তাঁরা। তবে অবশ্যই মাত্রাতিরিক্ত নয়। মিষ্টি খেতে ইচ্ছা করছে বলেই ডায়াবিটিসের রোগীরা যদি কৃত্রিম চিনি দিয়ে মিষ্টি বানিয়ে খেয়ে মনে করেন, স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে না, সে ধারণা কিন্তু একেবারেই ভুল। সে ক্ষেত্রে আপনার শরীরে ছানা বা ময়দার মতো উপাদানও যাচ্ছে। ফলে আপনার সারা দিনের ‘ক্যালোরি কাউন্ট’ কিন্তু বেড়ে যাবে। সঙ্গে বাড়বে রক্তে শর্করার মাত্রাও।’’