হাঁটু ভাল রাখার সহজ উপায় জানালেন মাধুরীর চিকিৎসক স্বামী শ্রীরাম নেনে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
শরীরের ওজন ১ কেজি বাড়লে, হাঁটুর উপর বোঝা বাড়বে আরও ৪ কেজির! এত ভারী বোঝা নিয়ে তখন হিমশিম অবস্থা হবে হাঁটুর। না পারবে শরীরের ভার বইতে, না হাঁটাচলায় সাহায্য করতে। যন্ত্রণার সূত্রপাত হবে তখন থেকেই। এমনটাই জানিয়েছেন বলিউড অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিতের স্বামী চিকিৎসক শ্রীরাম নেনে। হাঁটুর ব্যথার কারণ অনেক। তবে কিছু কারণের জন্য রোজের অভ্যাস ও যাপন পদ্ধতিই দায়ী। হাঁটু ভাল রাখতে হলে, সেই সব অভ্যাসে বদল আনা প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য বিষয়ে সমাজমাধ্যমে মাঝেমধ্যেই জরুরি পোস্ট করেন মাধুরীর চিকিৎসক স্বামী। হার্টের অবস্থা থেকে ডায়েট— নানা প্রসঙ্গ উঠে আসে তাঁর আলোচনায়। নেনে মনে করেন, হাঁটু নিয়ে তেমন চিন্তা করেন না অনেকেই। কারণ কম বয়স থেকেই হাঁটুর অবস্থা বেহাল হবে, এমন ভাবনা মাথাতেও আসে না। তাই অস্টিয়োআর্থ্রাইটিস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি দিন দিন বেড়ে চলেছে। মধ্য ত্রিশেও হাঁটুতে অস্ত্রোপচার বা হাঁটু প্রতিস্থাপন করাতে হচ্ছে। এর একটা কারণ যেমন ওজন বৃদ্ধি, তেমনই অন্যটি ভুল পদ্ধতিতে শরীরচর্চা করা। দুই কারণেই হাঁটুতে যন্ত্রণা হতে পারে।
ওবেসিটি বা স্থূলত্ব হাঁটুর সমস্যার অন্যতম কারণ। নেনে জানাচ্ছেন, শরীরের ওজন যদি এক কেজি বাড়ে, তা হলে তার চার গুণ বোঝা চাপবে হাঁটুর উপরে। এতটা ওজন সামলাতে গিয়ে অস্থিসন্ধিতে যে তরল থাকে, তা শুকিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে হাড়ের ঘর্ষণে ক্ষয় বাড়ে। হাড়ে ক্যালসিয়াম-ভিটামিন-ডি কমতে শুরু করে এবং হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন হাঁটাচলা করতে, উঠতে-বসতে, সিঁড়ি ভাঙতে হাঁটু টনটনিয়ে ওঠে।
ভুল পদ্ধতিতে শরীরচর্চাও হাঁটুর ব্যথার কারণ হতে পারে। শরীর বুঝেই শরীরচর্চা করা জরুরি। খুব বেশি দৌড়োদৌড়ি, দীর্ঘ সময় ধরে একটানা হাঁটা, জাম্পিং স্কোয়াট— এই ব্যায়ামগুলি প্রশিক্ষকের পরামর্শ ছাড়া করতে থাকলে, হাঁটুতে চাপ পড়ে। বদলে সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা ও নিয়ম মেনে হাঁটলে উপকার বেশি হয়। এই ধরনের শারীরিক কসরত হাঁটুতে সাইনুভিয়াল ফ্লুইডের মাত্রা বাড়ায়। ফলে হাড়ের ঘর্ষণজনিত ক্ষয়ের ঝুঁকি কমে।
হাঁটুর ব্যথা কমানোর কিছু উপায়
একটানা মাইলের পর মাইল জোরে হাঁটা যাবে না। অপেক্ষাকৃত মসৃণ রাস্তায় হাঁটতে হবে, তবে সেটা আধ ঘণ্টা-চল্লিশ মিনিটের বেশি নয়।
হাঁটুর জায়গাটা যদি ফুলে গরম হয়ে যায়, তা হলে বরফ সেঁক দিতে হবে। আর গরম না-হলে শুধু ব্যথা থাকলে ব্যথা কমানোর মলম লাগিয়ে তার উপর গরম শেঁক দেওয়া যাবে।
‘ভিসকো সাপ্লিমেন্টেশন’ নামে এক ধরনের ইঞ্জেকশন আছে, যেটা অনেকটা জেলির মতো। তাতেও ভাল কাজ হয়। ব্যথা নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর রোগীকে বলে দেওয়া হয়, মাটিতে বসে কাজ করবেন না। তবে এই জাতীয় ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শেই নিতে হবে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। ওজন যত বাড়বে, ততই দুই হাঁটুর উপর চাপ পড়বে। তখন ওষুধ বা ইঞ্জেকশনেও কাজ হবে না।
হাঁটুর ব্যথা বাড়লে জিমে গিয়ে ট্রেডমিলে হাঁটা বা দৌড়নোর মতো কাজ করবেন না। কারণ, ব্যথা কী কারণে হচ্ছে, সেটা আগে চিহ্নিত করা দরকার। ব্যথা নিয়ে ভারী ব্যায়াম করতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।