বয়স হলেও সুস্থ থাকবেন, শুধু খেতে হবে দু’টি বীজ। কী সেই বীজ? ছবি: সংগৃহীত।
বসতে গেলে হাঁটুতে ব্যথা, সিঁড়ি দিয়ে উঠলে বুক ধড়ফড়, একটু বেশি খেলেই বদহজম! রোগের কি আর শেষ আছে? জ্যাঠাইমা, ঠাকুরমারা বলেন, ‘‘বয়স হলে বুঝবে, কী কষ্ট!’’
দেখা যায়, কেউ চল্লিশ পেরোতে না পেরোতেই সুগার, প্রেসার, থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন, আবার কেউ পঞ্চাশেই বাতের ব্যথায় কাবু। অথচ ষাটে পৌঁছেও দিব্যি হেঁটেচলে বেড়াচ্ছেন এমন মানুষজনও কম নেই কিন্তু। পুষ্টিবিদেরা বলেন, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীর অশক্ত হলেও, উপযুক্ত পুষ্টি রোগব্যাধি কিছুটা হলেও ঠেকিয়ে রাখতে পারে।
ভারতীয় লেখক, পুষ্টিবিদ, ফিটনেস কোচ, প্রায় ১৪ বছর ধরে বয়স্কদের নিয়ে কাজ করা লিউক কুটিনহো জানাচ্ছেন, বয়সকালে সুস্থ থাকতে কোনও ‘সুপারফুড’ বা দামি সাপ্লিমেন্টের দরকার নেই। খুব সাধারণ দু’টি বীজই এই সমস্যার সমাধান করতে পারে।
ভারতীয় হেঁশেলে দীর্ঘ দিন ধরে স্থান করে নিয়েছে সাদা এবং কালো তিল। এই দুই বীজ সঠিক পরিমাণে এবং নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে খেলে বার্ধক্যজনিত অনেক অসুখই ঠেকানো যায়, বলছেন লিউক। সাদা এবং কালো তিল যে পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং সুস্থ থাকার চাবিকাঠি, সে কথা মানছেন কলকাতার পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তীও। তিনি জানাচ্ছেন, সাদা এবং কালো তিলে মেলে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যা অসুখবিসুখ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
লিউক সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়োয় জানিয়েছেন, কী ভাবে তিল সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। শুধু বয়স্ক নয়, দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় জুড়লে এই বীজ হতে পারে সব বয়সে সুস্থ থাকার অন্যতম চাবিকাঠি। নিয়মিত এই বীজ সঠিক অনুপাতে খেলে বয়স হলেও রোগব্যাধি কাছে ঘেঁষবে না।
কী এর উপকারিতা?
হাড় মজবুত রাখে: বয়সকালের অন্যতম সমস্যাই হল হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া। কাঁধে, কোমরে, হাঁটুতে ব্যথা। হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাসের মতো উপাদান। এই সবই শরীর পাবে দুই ধরনের তিল মিশিয়ে খেলে। হাড় মজবুত থাকলে এড়ানো যাবে ব্যথা-বেদনা।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা: বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে মস্তিকের কার্যদক্ষতাও কমতে শুরু করে। ভুলে যাওয়া, কাজ করতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলার মতো নানা সমস্যা তৈরি হয়। তিলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে, কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
হজমক্ষমতা বাড়ায়: বয়স বাড়লে বদহজম, পেট ফাঁপা, তেলঝাল জাতীয় খাবার চট করে হজম হতে না চাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। তিলে থাকা ফাইবার অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। হজমক্ষমতাও বৃদ্ধি পায় এতে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও এটি কাজে লাগে।
হার্ট ভাল রাখে: তিলে মেলে লিগন্যান্স এবং ফাইটোস্টেরল নামক উপাদান। যা হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। বীজে থাকা ভাল মানের ফাইবার, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
হরমোনের ভারসাম্য: মহিলাদের রজোনিবৃত্তির আগে এবং পরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে তিলে থাকা বিভিন্ন উপাদান। রজোনিবৃত্তির পরে ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ কমে যায়। সে সময় কাজে আসে এতে থাকা ফাইটোস্ট্রোজেন।
কী ভাবে খেতে হবে বীজটি?
লিউকের পরামর্শ, সাদা এবং কালো তিল সমপরিমাণে মিশিয়ে মিক্সারে গুঁড়িয়ে নিতে হবে। শুকনো কড়াইয়ে নেড়ে নেওয়ার দরকার নেই। কারণ, তাতে পুষ্টিগুণ সামান্য হলেও কমতে পারে। দুই ধরনের বীজের গুঁড়ো স্মুদি থেকে স্যুপ, এমনকি তরি-তরকারিতে মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে।
পুষ্টিবিদ শম্পা জানাচ্ছেন, অর্শ্ব বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে সাদা এবং কালো তিল, কাঁচা হলুদের সঙ্গে বেটে ভাতের সঙ্গে খেলে যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়। ক্যানসার প্রতিরোধক গুণবালিও রয়েছে এতে। কিন্তু একই সঙ্গে পুষ্টিবিদ সাবধান করছেন, উপকারী হলেও দিনে দু’চামচের বেশি তিল খাওয়া মোটেই উচিত নয়।